পুঁজিবাজারে এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা আবার ২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
ঈদের পর থেকে অব্যাহত দরপতনের মধ্যে বুধবার এই সিদ্ধান্ত জানায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে।
বিকেলে বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
এক দিনে দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা আগের মতোই ১০ শতাংশ থাকবে।
এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে পাঁচ টাকার নিচে থাকা কোনো কোম্পানির শেয়ারদর কমতে পারবে না, কেবল বাড়া সম্ভব। ৫ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত শেয়ারের দর কমতে পারবে সর্বোচ্চ ১০ পয়সা। ১০ টাকা থেকে ১৪ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত কমতে পারবে সর্বোচ্চ ২০ পয়সা।
১৫ টাকা থেকে শুরু করে ১৯ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত শেয়ারের দর কমতে পারবে সর্বোচ্চ ৩০ পয়সা, ২০ টাকা থেকে ২৪ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত শেয়ারের দর কমতে পারবে সর্বোচ্চ ৪০ পয়সা, ২৫ টাকা থেকে ২৯ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত শেয়ারের দর কমতে পারবে সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা।
৩০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত শেয়ারের দর কমবে সর্বোচ্চ ৬০ পয়সা, ৩৫ টাকা থেকে ৩৯ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত শেয়ারের দর কমতে পারবে সর্বোচ্চ ৭০ পয়সা। ৪০ টাকা থেকে ৪৪ টাকা ৯০ পয়সা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৮০ পয়সা, ৪৫ টাকা থেকে ৪৯ টাকা ৯০ পয়সা পয়সা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৯০ পয়সা এবং ৫০ টাকা থেকে ৫৪ টাকা ৯০ পয়সা পয়সা পর্যন্ত শেয়ারে সর্বোচ্চ এক টাকা দর কমতে পারবে।
ঈদের পর পুঁজিবাজারে ধসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বৈঠকে নানা সিদ্ধান্তের পরও বাজার পড়তে থাকার পর এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
ইউক্রেনে রুশ হামলার পর পুঁজিবাজারে ধস ঠেকাতে গত ৮ মার্চ এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ১০ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে আনে। তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়টি বাজারের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখা দিলেও পরে দেখা যায়, এটি লেনদেন কমে যাওয়ার একটি কারণ হিসেবে উঠে আসে।
পুঁজিবাজারে এক দিনে কোনো কোম্পানির ২ শতাংশ দরপতন মোটেও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। দাম কমলে শেয়ারের চাহিদা বাড়লে আবার দর বাড়ার প্রবণতাও দেখা দেয়। কিন্তু ২ শতাংশের এই নির্দেশনা আসার পর দেখা যাচ্ছিল, ২ শতাংশ দাম কমে গেলে শেয়ারের আর ক্রেতা পাওয়া যায় না। এভাবে দিনের পর দিন কোম্পানিগুলোর দরপতন হচ্ছিল। আর ক্রেতা না থাকায় লেনদেন ক্রমেই কমছিল।
রোজা শুরুর আগে বাজারে এক হাজার এক শ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলেও গত ১৭ ও ১৮ এপ্রিল তা নেমে আসে চার শ কোটি টাকার ঘরে।
এরপর ২০ এপ্রিল দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়। এই সিদ্ধান্তের পর বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। লেনদেন বাড়তে থাকে।
তবে ঈদের পর আবার বাজার পতনের ধারায় ফিরে যায়। টানা আট কর্মদিবসে ৫৫৫ পয়েন্ট সূচক পড়ার পর রোববার রোববার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে।
বৈঠকে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেন মন্ত্রী। সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে ব্যাংকগুলো আইসিবির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে যে বিনিয়োগ করবে, সেটাকে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগসীমার (এক্সপোজার লিমিট) বাইরে রাখা হবে।
এ ছাড়া ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য আইসিবিকে দেয়া ১৫৩ কোটি টাকার যে তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেটির মেয়াদ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তহবিলের আকারও বাড়িয়ে ৩০০ কোটি টাকা করা হবে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এবং আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার নির্দেশও দেন মন্ত্রী।
এই বৈঠকের প্রতিক্রিয়ায় সোমবার ১১৮ পয়েন্টের উত্থান হলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে শঙ্কা রয়ে গিয়েছিল, সেটির প্রমাণ পাওয়া যায় লেনদেনেই। বাজারে সক্রিয় না হয়ে আরও অপেক্ষার নীতি নেয়ায় লেনদেন কমে যায় অনেকটাই।
এই ১১৮ পয়েন্টের মধ্যে ৭৩ পয়েন্ট হারিয়ে যায় দুই দিনে। এরপর বিকেলে দরপতনের সীমা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।