বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এমারেল্ডে তেল উৎপাদন কবে

  •    
  • ২৫ মে, ২০২২ ১৬:০৪

মিলটির ইনচার্জ আহসান হাবিব বেগ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন মিলটি বন্ধ থাকায় অনেক যন্ত্রপাতি খারাপ হয়ে গেছে। তাই পুরোপুরি উৎপাদন চালু করতে দেরি হচ্ছে। চাহিদা থাকলেও আমাদের আগামী এক বছরের মধ্যে পুরোপুরি খাওয়ার উপযোগী তেল উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্যাসের। চাপ কম থাকায় আমরা উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখতে পারি না।’

ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজারে টালমাটাল পরিস্থিতিতে সরকার দেশে ধানের কুঁড়ার তেল বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে- এমন একটি বক্তব্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এমারেল্ড অয়েলের শেয়ারদরে দিয়েছে লাফ। তবে কোম্পানিটি কবে তেল উৎপাদন শুরু করতে পারবে, তা নিয়ে নিশ্চিত তথ্য দিতে পারছেন না কোম্পানিসংশ্লিষ্টরা।

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে মালিকরা জড়িয়ে পড়ার পর ২০১৭ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিটিতে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা করছে মিনোরি বাংলাদেশ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

গত ৯ জানুয়ারি এমারেল্ডের পক্ষ থেকে ঢাকা ও চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জে উৎপাদন শুরুর নোটিশ এলেও পরিস্থিতি ভিন্ন।

সেই নোটিশে বলা হয়, পরীক্ষামূলক উৎপাদনে সফল হওয়ার পর কোম্পানিটি সেদিন থেকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে।

কোম্পানিটি স্পন্দন ব্র্যান্ডের তেল বাজারজাত করে দেশে সাড়া ফেলেছিল। সয়াবিন তেল সংকটেও কোম্পানিটির সেই তেল বাজারে না আসার বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু বলতে এখনও মানুষের খাওয়ার উপযোগী তেল উৎপাদনের কাছাকাছি যেতে পারেনি কোম্পানিটি।

মিলটির ইনচার্জ আহসান হাবিব বেগ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ক্রুড অয়েল তৈরি করছি। এটা খুলনায় পাঠানো হচ্ছে। এটি এখন মাছ ও মুরগির খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।’

এই কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি এই অশোধিত অয়েল উৎপাদন শুরু করা হয়। এই তেল পরিশোধন করে মানুষের খাওয়ার উপযোগী করে তোলার মতো যন্ত্রগুলো নষ্ট। তাও আবার গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে প্রায়ই।

কবে নাগাদ তেল পাওয়া যাবে- জানতে চাইলে আহসান হাবিব বেগ বলেন, ‘দীর্ঘদিন মিলটি বন্ধ থাকায় অনেক যন্ত্রপাতি খারাপ হয়ে গেছে। তাই পুরোপুরি উৎপাদন চালু করতে দেরি হচ্ছে।

‘চাহিদা থাকলেও আমাদের আগামী এক বছরের মধ্যে পুরোপুরি খাওয়ার উপযোগী তেল উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। এখানে সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্যাসের। চাপ কম থাকায় আমরা উৎপাদন কার্যক্রম চালু রাখতে পারি না।’

শেরপুরের শেরীপাড়ায় এমারেল্ড অয়েলের কারখানা

কোম্পানিটি থেকে তেল পাওয়ার অপেক্ষায় স্থানীয় বাসিন্দারাও। শহরের রাজাবাড়ী মহল্লার চান মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা স্পন্দন তেলডা খাইতাম। তেলডার মধ্যে ক্ষতিকর কিছু না থাকায় আমরা নিয়মিত খাইতাম।’

নয়ানী বাজারের আব্দুর রফিক বলেন, ‘স্পন্দন তেলের তো চাহিদা অনেক ছিল। হুনলাম, মালিক নাকি জেলে। তাই মেলটি বন্ধ হয়ে গেছেগা। এহন তো আমরা তেল খাইতে পারতাছি না। তেলডা তো বালাই আছিল। তাই আমরা চাই এই মিলডা থাইকা তেল তৈরি করা হোক।’

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজারে দর বাড়ছেই। সেই সঙ্গে বাড়ছে দেশে। আবার দাম বাড়ার পর সরবরাহ সংকটেও ভোক্তাদের ভোগান্তি দেখা দিচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে সরিষা ও ধানের কুঁড়ার বা রাইস ব্র্যান অয়েলের উৎপাদন বাড়ানো হবে।

গত ১৮ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠক শেষে মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘আমরা শুধু সয়াবিন ও আমদানিনির্ভর থাকব না, সয়াবিনের বিকল্প সরিষা ও রাইস ব্র্যান কিংবা ক্যানোলা তেল খাব, আমাদের সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

‘ইতোমধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সয়াবিনের বিকল্প হিসেবে দেশে সরিষা ও রাইস ব্র্যান উৎপাদন বাড়ানোর। কৃষি মন্ত্রণালয় এ নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করছে।’

দেশে রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদন ৫০ হাজার টন। সরকার হিসাব করে দেখেছে এটি সাত লাখ টনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

মন্ত্রী বলেন, ‘এটা যদি আমরা করতে পারি, তাহলে আমাদের মোট ভোজ্যতেলের চাহিদার ২৪ থেকে ২৫ পার্সেন্ট রাইস ব্র্যান থেকেই মিটে যাবে।

মন্ত্রী এই বক্তব্য দেয়ার দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৩২ টাকা। পরদিন লাফ দিয়ে দাম উঠে যায় ৩৪ টাকা ৮০ পয়সায়।

পুঁজিবাজার এখন টালমাটাল পরিস্থিতিতে থাকলেও এই কোম্পানিটির শেয়ারদর সেভাবে প্রভাব পড়েনি। বুধবার দর ৩৫ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

এমারেল্ড অয়েল উৎপাদনে যাবে, এমন সম্ভাবনায় মাস আটেক আগে শেয়ারদর এক পর্যায়ে ৪৫ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

উৎপাদন শুরুর নিশ্চয়তা না থাকলেও সম্প্রতি এমারেল্ড অয়েলের শেয়ারদর বেড়ে চলেছে

২০০৯ সালে জামালপুরের সৈয়দ হাসিবুল গনি গালিব শেরপুর শহরে এই কারখানা গড়ে তোলেন। স্পন্দন নামে বাজারে ছাড়া এই তেল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। চাহিদাও বাড়তে থাকে।

কোম্পানিটি ২০১৪ সালে ১০ টাকা করে অভিহিত মূল্যে ২ কোটি শেয়ার বিক্রি করে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে পুঁজিবাজার থেকে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার দুই বছর পর রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি মামলার কারণে ২০১৬ সালের ২৭ জুন থেকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানিটির। মামলার আসামি হয়ে মালিকপক্ষ উধাও হয়ে যায়।

শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বিএসইসি এ রকম রুগ্ণ বেশ কিছু কোম্পানিকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে একটি এমারেল্ড অয়েল।

এর অংশ হিসেবে জাপান প্রবাসী এক বাংলাদেশির কোম্পানি মিনোরি বাংলাদেশ কোম্পানিটি চালুর উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়।

২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বরে উৎপাদন চালুর ঘোষণা দিয়েও পারেনি কোম্পানিটি। এই ঘটনায় সে সময় কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে আর্থিক লোকসানে পড়েন বিনিয়োগকারীরা।

এ বিভাগের আরো খবর