পাম অয়েল রপ্তানির দুয়ার খুলে দিয়েছে বড় উৎপাদক দেশ ইন্দোনেশিয়া। এতে দেশে তেল আমদানিতে সুযোগ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে আমদানির অপেক্ষায় থাকা প্রায় এক লাখ টন তেল দেশে আসার বাধাও কাটছে। এটা দেশে ভোজ্যতেলের দামে ঊর্ধ্বগতিতে লাগাম পরাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইন্দোনেশিয়া গত ২৮ এপ্রিল পাম অয়েল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। প্রায় এক মাসের ব্যবধানে সোমবার পুনরায় রপ্তানি শুরুর ঘোষণা দিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ পাম অয়েল উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশটি।
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় দেশের বাজারে লাগামহীন হয়ে পড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। পুরো রমজান মাস তেলের সংকট থাকার পর ঈদের পরই লিটারে ৩৮ টাকা বেড়ে সয়াবিন তেলের নতুন দাম নির্ধারণ হয়েছে ১৯৮ টাকা। ১৩০ টাকার পাম তেল হয়েছে ১৭২ টাকা। তার ওপর বাজারে এর চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এখন নতুন আমদানির সুযোগ দাম আরও বেড়ে যাওয়া রোধ এমনকি দাম কমাতে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। এর বেশির ভাগই পূরণ হয় পাম তেল দিয়ে। আর এই তেলের বড় জোগানটা আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানির মাধ্যমে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে দেশে পাম তেলের ৯০ শতাংশ আমদানি হয়েছে ইন্দোনেশিয়া থেকে। দেশটি রপ্তানি বন্ধের পর বিকল্প উৎস থেকে আমদানি না করে ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় ছিলেন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের। সোমবার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার খবরে তাই স্বস্তি ফিরেছে আমদানিকারকদের মধ্যে।
তাছাড়া ইন্দোনেশিয়া রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগের চার দিনে প্রায় ৯০ হাজার টন তেল আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়। এসব তেল জাহাজে তোলার আগেই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়ে যায়। ফলে আটকে যায় সেই চালান।
দেশে ভোজ্যতেলের শীর্ষ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান টি কে গ্রুপের হেড অব বিজনেস আলম চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাম তেল রপ্তানিতে ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়াটা অবশ্যই একটি ভালো খবর। এতে আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে স্বস্তি আসবে। ভোজ্যতেলের দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কমবে। ভোক্তারাও লাভবান হবে।
‘সবকিছুই নির্ভর করছে আমদানির সুযোগ কতটা অব্যাহত থাকবে তার ওপর। দেশটি নতুন কোনো শর্ত আরোপ করে কি না এবং কী দামে রপ্তানির সুযোগ দেবে তাও দেখতে হবে। এটা বলতে পারি শিগগির ইন্দোনেশিয়া থেকে তেল না এলে বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট দেখা দিতে পরে। কারণ যত বেশি তেল আমদানির সুযোগ তৈরি হবে, তত বেশি সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার আগে যেসব ঋণপত্রের বিপরীতে পাম তেল আমদানি বন্ধ হয়ে যায় সেসব চালান দেশে আসতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ইন্দোনেশিয়ার মনোভাব বোঝা যাবে। আবার দেশে বর্তমানে কী পরিমাণ তেল আছে তার ওপরও নতুন আমদানির পরিমাণ নির্ভর করছে।
বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও ইন্দোনেশিয়া তেলের দাম নির্ধারণ এবং কতদিনের জন্য কী পরিমাণ তেল রপ্তানির সুযোগ দেবে সেটা একটা বিষয়। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই এসব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।
‘তেল এলে দেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দামে ইতিবাচক প্রভাবই পড়বে। তবে সেই প্রভাব আমাদের বাজারে পড়তে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতে পারে। মিল মালিকরা কতটুকু আমদানি করবে সেটাও দেখতে হবে। কারণ আগে তো তারা বেশি দামে পণ্য এনেছে। সেগুলোর কতটুকু বাজারে গেছে এবং কতটুকু মজুত আছে তা হিসাব করেই তারা আমদানি করবে।’
দেশে ভোজ্যতেল আমদানির দুই বছরের চিত্র বলছে, পাম অয়েলের দামে ঊর্ধ্বগতি থাকলেও আমদানি তেমন হেরফের হয়নি। চলতি অর্থবছরের ১৫ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১১ লাখ ৯৬ হাজার টন পাম তেল খালাস করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল ১২ লাখ ১৮ হাজার টন।
বিশ্বের ভোজ্যতেলের এক-তৃতীয়াংশই আসে পাম অয়েল থেকে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই সরবরাহ করে ইন্দোনেশিয়া। সোমবার তিন সপ্তাহ ধরে চলা নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটে। তবে সরকার দাম কমানোর যে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল তা এখনো পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। দেশটিতে প্রতি লিটার পাম অয়েলের দাম ১৪ হাজার রুপিয়ায় (ইন্দোনেশিয়ার মুদ্রা) নামিয়ে আনার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বর্তমানে দাম ১৭ হাজার রুপিয়ায় অবস্থান করছে। নিষেধাজ্ঞার আগে প্রতি লিটারের দাম ১৯ হাজার রুপিয়ারও বেশি ছিল।
(এক ডলার সমান ১৪ হাজার ৬২৪ ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়া। আর এক টাকা সমান ১৬৬ রুপিয়া।)