বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে রক্ষায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করা এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পারস্পরিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনে আঞ্চলিক সহযোগিতাকে ‘সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প’ মনে করেন সরকারপ্রধান। এর অংশ হিসেবে আঞ্চলিক আর্থিক সহযোগিতা জোরদার করাসহ পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (এসকেপ) ৭৮তম বার্ষিক সম্মেলনে সোমবার এক ভিডিওবার্তায় প্রধানমন্ত্রী এসব প্রস্তাব দেন।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রে হাইব্রিড পদ্ধতিতে হচ্ছে অধিবেশনটি। এবারের প্রতিপাদ্য ‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন অভিন্ন লক্ষ্য।’ ২৩ মে শুরু হওয়া এ অধিবেশন চলবে ২৭ মে পর্যন্ত।
ভিডিওবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্ব যখন কোভিড-১৯ মহামারির অভিঘাত থেকে পুনরুদ্ধারে লড়াই করছে, তখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতায় বড় আঘাত হিসেবে হাজির হয়। এই যুদ্ধের প্রভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। এই যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় যৌথ পদক্ষেপ প্রয়োজন।’
‘সাউথ-সাউথ নেটওয়ার্ক ফর পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন’ প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের এসডিজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শেয়ারে ভূমিকা রেখেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আঞ্চলিক সহযোগিতাকে পারস্পরিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জনে সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প হিসেবে দেখি আমরা। সার্ক, বিমসটেক, বিবিআইএন, বিসিআইএম-ইসি এবং ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ের মতো বিভিন্ন আঞ্চলিক উদ্যোগের সঙ্গে আছে বাংলাদেশ।
‘জাতিসংঘ এসকেপের ক্রস-বর্ডার পেপারলেস ট্রেড, এশিয়া-প্যাসিফিক ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ নেটওয়ার্কিং, নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো উদ্যোগে বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে যুক্ত।’
এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়েসহ এ রকম অন্যান্য উদ্যোগেও এসকেপকে বাংলাদেশ সমর্থন দিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
পাঁচ প্রস্তাব
আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র তৈরিতে পাঁচটি প্রস্তাব দেন সরকারপ্রধান।
১. জ্ঞান এবং উদ্ভাবন সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে কর্মমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ।
২. উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পথে থাকা দেশগুলোকে আরও বাস্তবসম্মত উপায়ে আন্তর্জাতিক সহায়তার ব্যবস্থা করা।
৩. জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত তহবিল এবং প্রযুক্তি বরাদ্দে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করা।
৪. আঞ্চলিক সংকট ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা অর্জনে আঞ্চলিক আর্থিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।
৫. চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কর্মসংস্থান তৈরি এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাত ও তথ্যপ্রযুক্তির সেবা সম্প্রসারণ করা।
এ সময় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের ১১ লাখ নাগরিককে আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। এই মানবিক সংকট মারাত্মক নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছে।
‘আমরা এই বাস্তুচ্যুত মানুষের নিরাপদ, টেকসই এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা এবং সমর্থন আশা করছি।’
২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার প্রসঙ্গটিও ওঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
তিনি বলেন, ‘এটি হচ্ছে গত ১৩ বছর ধরে আমাদের পরিকল্পিত উন্নয়নযাত্রার বৈশ্বিক স্বীকৃতি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক, উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে আমাদের সরকার।’
কোভিড-১৯ মহামারি সারা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ‘দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহামারি মোকাবিলায় আমরা জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছি।
‘আমাদের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভূমিকা রেখেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে যখন জিডিপি প্রবৃদ্ধি নামমাত্র, তখন আমরা প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে পেরেছি। আমরা ২০২১-২২ সালে ৭ শতাংশের বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি আশা করছি।’
ইতোমধ্যে দেশের বেশির ভাগ মানুষকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) চেয়ার হিসেবে, জ্বালানি সক্ষমতা অর্জনে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’র খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ।”