পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতনের মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি মার্জিন ঋণের সীমা বাড়িয়ে বাজারে তারল্য বাড়ানোর চেষ্টা করেছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিনিয়োগকারীরা এখন তাদের বিনিয়োগের বিপরীতে সমপরিমাণ ঋণ পাবেন ব্রোকারেজ হাউস থেকে। অর্থাৎ কারও বিনিয়োগ ১০০ টাকা থাকলে তিনি ১০০ টাকা ঋণ পাবেন।
আগের সপ্তাহের চার কর্মদিবসে ৩০৭ পয়েন্ট সূচকের পতনের স্মৃতি নিয়ে রোববার নতুন সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে আরও ১১৫ পয়েন্ট সূচক পড়ার পর এই নির্দেশনা জারি করা হয়।
পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো বিনিয়োগকারীদের তাদের তহবিলের বিপরীতে ঋণ দিয়ে থাকে। একে মার্জিন ঋণ বলে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী-রুবাইয়াত-উল ইসলাম নানা সময় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ নিয়ে সতর্ক করলেও আট কর্মদিবসে ৫৫৫ পয়েন্ট সূচকের পতনে ঋণসীমা বাড়িয়েই সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হলো।
বিএসইসির আদেশে বলা হয়, যেকোনো সিকিউরিটিজের প্রাইজ আর্নিংস (পিই) রেশিও ৪০-এর নিচে হলে মার্জিন ঋণের সবোচ্চ সীমা হবে ১:১। অর্থাৎ মক্কেল বা গ্রাহকের তহবিলে ১০০ ভাগ হিসেবে প্রযোজ্য হবে।
এ আদেশ অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়।
বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী-রুবাইয়াত-উল ইসলামের সই করা এই আদেশে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানানো হয়।
মার্জিন ঋণহার বাড়িয়ে বিএসইসির আদেশ
গত বছরের এপ্রিলে লকডাউন আতঙ্কে পুঁজিবাজারে শেয়ারদর যখন ক্রমেই কমছিল, তখন গত বছরের ৪ এপ্রিল বিএসইসি মার্জিন ঋণের হার ১:০৮ করে। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ৮০ টাকা ঋণ নেয়া যেত। এর আগ পর্যন্ত ঋণসীমা ছিল ১:০৫। অর্থাৎ প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ৫০ টাকা ঋণ পাওয়া যেত।
তবে সে সময় এই ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সূচকের সীমা ছিল। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের নির্দেশ অনুসারে, স্টক এক্সচেঞ্জে মূল্যসূচক ৪ হাজার ১ থেকে ৭ হাজার পয়েন্টের মধ্যে থাকলে বিনিয়োগের ৫০ শতাংশ ঋণ দেয়া যেত। আর সূচক এর ওপরে উঠলে মার্জিন ঋণ দেয়া যাবে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত।
এই নির্দেশনার কারণে সূচক একটি নির্দিষ্ট সীমা পার হলে ক্রয়চাপ আসতে থাকে। আর বিএসইসিও ধারাবাহিকভাবে তাদের নির্দেশনা সংশোধন করতে থাকে।
পরে মার্জিন ঋণসীমা বাড়ানোর পাশাপাশি সূচকের এই বাধা দূর করা হয় গত বছরের ১৫ নভেম্বর। সেদিন জানানো হয়, সূচক যতই থাকুক, বিনিয়োগকারীরা প্রতি ১০০ টাকায় ৮০ টাকা ঋণ পাবেন।
মার্জিন ঋণ নিয়ে শিবলী রুবাইয়াতের সাবধানবাণী
শেয়ারমূল্য যখন বাড়তে থাকে, তখন এই ঋণ কোনো চাপ হিসেবে দেখা দেয় না। তবে শেয়ারমূল্য কমে গেলে সেটি বিনিয়োগকারীর জন্য বোঝা হয়ে যায়।
শেয়ারমূল্য কমে গেলে ব্রোকারেজ হাউস সমন্বয়ের কথা বলে। টাকা দিতে না পারলে একপর্যায়ে শেয়ার বিক্রি করেও দেয়া হয়।
২০১০ সালের ধসের পর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মার্জিন ঋণধারীরা। কারণ, বহু হাউস শেয়ার বিক্রি করে তাদের টাকা উশুল করে নিয়েছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীর টাকা শূন্য হয়ে গেছে।
ঈদের ছুটি শেষে পুঁজিবাজারে ধস নেমেছে। রোববার আরও ১১৫ পয়েন্ট কমে ডিএসইর সূচক এখন ১১ মাসের সর্বনিম্ন
গত ১০ অক্টোবর একটি আলোচনায় বিএসইসি চেয়ারম্যান নিজেও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদেরকে মার্জিন ঋণ নিয়ে সতর্ক করেন।
‘সচেতন বিনিয়োগ, টেকসই পুঁজিবাজার’ বিষয়ে এক সেমিনারে সেদিন তিনি বলেন, ‘ফাইন্যান্সিয়াল টার্মস অনুযায়ী, আপনি যত রিস্ক নেবেন, তত রিটার্ন বেশি হবে। এ ক্ষেত্রে যার সক্ষমতা আছে, সে রিস্ক নিতে পারে। রিস্ক নিতে গিয়ে ক্ষতির আশঙ্কাও আছে। তাই স্বল্প পুঁজি নিয়ে রিস্ক নেবেন না। ঋণ নিয়ে রিস্ক নেবেন না। তাই শিক্ষাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’