আরেক সেঞ্চুরিতে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের হতাশা আরও বাড়ল। ঢালাও পড়ল শেয়ারদর। এর মাধ্যমে সূচকের অবস্থান ১১ মাসের আগের অবস্থানে নেমে এল।
রোববার সপ্তাহের প্রথম দিন সূচক পড়ল ১১৫ পয়েন্ট। এ নিয়ে গত আট কর্মদিবসেই সূচক পড়ল ৫৫৫ পয়েন্ট।
গত সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস সোমবারও সূচক পড়েছিল ১৩৪ পয়েন্ট। এর পরের তিন দিনই সূচক এক পর্যায়ে বেড়ে গিয়েও কমে যায়। এবারও তাই হলো।
সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর ৯ মিনিটে সূচক বাড়ে ৩৩ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহের টালমাটাল পরিস্থিতি থেকে কিছুটা হাফ ছেড়ে বাঁচা যাবে কি না, এমন আশার কথা উঠার আগেই মিইয়ে যায়।
১০ মিনিটের পর থেকে টানা কমতে থাকে শেয়ারদর। আর সূচক দ্রুত নেমে আসতে থাকে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই বিষয়টি চালু থাকে।
বিনিয়োগকারীরা পারলে সব শেয়ার বিক্রি করে হাফ ছেড়ে বাঁচতে যায়। কিন্তু পড়তি বাজারে আসলে ক্রেতাও নেই সেভাবে। ফলে সর্বনিম্ন দরে শেয়ার বসিয়েও বিক্রি করা যাচ্ছে না।
সব মিলিয়ে লেনদেন হয়েছে ৬৮২ কোটি ২১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, যা গত ৯ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
গত সপ্তাহের মতোই সূচক বেড়ে লেনদেন শুরু হলেও পরে টানা কমেছে
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক এখন গত বছরের ২৯ জুনের পর সর্বনিম্ন। সেদিন ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৪২ পয়েন্ট। তবে সে সময় বাজার তলানি থেকে উঠে আসছিল এবং বিনিয়োগকারীরা ছিল ফুরফুরে মেজাজে।
তখন শেয়ারদর ও সূচক বাড়ছিল সমানতালে। ফলে শেয়ার কিনে বেশিরভাগই মুনাফা করতে থাকে। আর প্রায় এক যুগের মন্দা কাটিয়ে পুঁজিবাজারে সুবাতাশ ফেরার পর উচ্চাশা বাড়তে থাকায় বিনিয়োগও ক্রমেই বাড়তে থাকে।
কিন্তু সেই উচ্চাশা এখন গলার কাঁটা হয়েছে। বিশেষ করে যারা মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করে আটকে গেছেন, তাদের পক্ষে বের হওয়া কঠিন। মার্জিন ঋণে কেনা শেয়ারের দর ২০ শতাংশ কমলে বিনিয়োগকারীর লোকসান হয় দ্বিগুণ। আর ঋণদাতারা তখন বাড়তি টাকা জমা দেয়ার জন্য চাপ দেয়, অথবা শেয়ার বিক্রি করে তাদের টাকা ফিরিয়ে দিতে বলে। এতেও বেড়ে যায় বিক্রয় চাপ।
আবার যারা মার্জিণ ঋণ নেয়নি, তারাও আরও কমে যাবে ভেবে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে টাকা নিয়ে বাজারে ঊর্ধ্বমুখি প্রবণতা ফেরার অপেক্ষায় আছেন।
রোববার সব মিলিয়ে কমেছে ৩৪৫টি শেয়ারের দর। বিপরীতে বেড়েছে কেবল ২১টির। আর ১৩টি কোম্পানি দর ধরে রাখতে পারে।
আতঙ্ক এতটাই জেঁকে বসেছে যে ২২টি খাতের মধ্যে নয়টির শতভাগ শেয়ারের দর কমেছে। এগুলো হলো সাধারণ বিমা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, কাগজ ও প্রকাশনা, সেবা ও আবাসন, ভ্রমণ ও অবসর, চামড়া, পাট ও করপোরেট বন্ড খাত।
এর বাইরে ব্যাংক খাতে দুটি কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ২৬টির দর, আর্থিক খাতে তিনটির বিপরীতে ১৮টি, ওষুধ ও রসায়ন খাতে দুটির বিপরীতে ২৯টি, বস্ত্র খাতে তিনটি কোম্পানির বিপরীতে ৫৩টি, প্রকৌশল খাতে তিনটির বিপরীতে ৩৯টি, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে দুটির বিপরীতে ৩০টি, জীবন বিমায় ৪টির বিপরীতে ৯টি, বিবিধ খাতে ২টির বিপরীতে ১২টি, তথ্য প্রযুক্তিতে একটির বিপরীতে ১০টি, সিরামিক খাতে একটির বিপরীতে চারটি, সিমেন্ট খাতে একটির বিপরীতে ৬টি কোম্পানি দর হারিয়েছে।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাক আহমেদ সাদেক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। আতঙ্কের মধ্যে আছেন ছোট-বড় সব বিনিয়োগকারী। দেশে মল্যস্ফীতি নিয়ে আতঙ্ক আছে। ডলারের বাজারের অস্থিরতা নিয়ে আতঙ্ক। সব মিলিয়ে বাজারের প্রতি একেবারেই আস্থা নেই বিনিয়োগকারীদের। এ সব কারণেই বাজারে টানা পতন হচ্ছে।’
ঢালাও পতন
বিএসইসির সিদ্ধান্তে এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ৫ শতাংশ হলেও ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে এই সীমা ছিল না। এই ‘সুযোগে’ কোম্পানিটির দর কমেছে ৭.৯৩ শতাংশ।
এ নিয়ে গত সাত কর্মদিবসের মধ্যে ছয় দিনই দাম কমল কোম্পানিটির। ৩৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ২৯ টাকা ৩০ পয়সায় যা গত এক বছরের সর্বনিম্ন অবস্থান থেকে ১০ শতাংশ কেবল বেশি।
৫ শতাংশ পর্যন্ত দর কমেছে ৭টি কোম্পানির। আর ভগ্নাংশের হিসাবের কারণে ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমতে না পেরে আশেপাশে কমেছে আরও ৬০টির বেশি কোম্পানির দর।
সব মিলিয়ে ১১১টি কোম্পানির দর কমেছে ৪ শতাংশের বেশি। আরও ৭১টির দর কমেছে ৩ শতাংশের বেশি।
সবচেয়ে বেশি দরপতনের তালিকায় অবশ্য ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংকের নাম দেখাচ্ছে। কোম্পানিটি দর হারিয়েছে ৮.৮৫ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ১১ টাকা ৩০ পয়সা। এক টাকা কমে হয়েছে ১০ টাকা ৩০ পয়সা।
তবে কোম্পানিটির লভ্যাংশ ঘোষণার সমন্বয় হয়েছে। রেকর্ড ডেট বৃহস্পতিবারের দরের সঙ্গে ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার সমন্বয়ে দর দাঁড়ায় ১০ টাকা ৮০ পয়সা। অর্থাৎ দর কমেছে আসলে ৪০ পয়সা। তবে বিনিয়োগকারীরা ৫০ পয়সা পাবেন নগদ লভ্যাংশ হিসেবে। নগদ লভ্যাংশ সমন্বয়ের কথা না থাকলেও দেশের পুঁজিবাজারে শেয়ারের দর নগদ লভ্যাংশের সঙ্গে মিল রেখে কমে যেতে দেখা যায়।
বিপরীতে যে কয়টি কোম্পানির দর বেড়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবে যাওয়া ফার্স্ট ফাইন্যান্সের দর। আগের দিন দাম ছিল ৫ টাকা ৬০ পয়সা। বাড়ার সুযোগ ছিল ৫০ পয়সা। ততটাই বেড়েছে।
এছাড়া কোনো একটি কোম্পানির দরও সার্কিট ব্রেকার ছুঁতে পারেনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫.৬ শতাংশ বেড়েছে ডেল্টা লাইফের দর।
আরও দুটির দর ৪ শতাংশের বেশি দুটির দর ৩ শতাংশের বেশি, ৩টির দর ২ শতাংশের বেশি এবং চারটির দর বেড়েছে এক শতাংশের বেশি।