বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই একই পথে সরকার, ব্যাংক থেকে দেদার ঋণ

  •    
  • ২১ মে, ২০২২ ২২:০৩

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘এটা সেই পুরনো সমস্যা। অর্থবছরের শেষ দিকে এসে তাড়াতাড়ি প্রকল্প শেষ করার তাগাদা থাকে। সে কারণে এ সব প্রকল্পে দ্রুত অর্থ ছাড় করতে হয়। অন্যদিকে আগে শেষ হওয়া প্রকল্পের কাজের পুরো বিল বছরের মধ্যেই ঠিকাদারদের শোধ করতে হয়। সে কারণে সরকারের খচর হঠাৎ করে বেড়ে যায়। সেই ব্যয় মেটাতেই ব্যাংক থেকে এখন বেশি ঋণ নিতে হয় সরকারকে।’

প্রতিবারের মতো এবারও অর্থবছরের শেষ দিকে এসে প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে দেদার ঋণ নিচ্ছে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সরকার ব্যাংক থেকে মোট ৩২ হাজার ৪৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে। এরমধ্যে বাণিজ্যক ব্যাংকগুলো থেকে নিয়েছে ২৫ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছে ৭ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।

গত ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে নিয়েছিল মাত্র ৬ হাজার ৪০২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে এই দশ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি।

২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হতে আর ১ মাস ১ সপ্তাহ বাকি। আগামী ৩০ জুন শেষ হবে এই আর্থিক বছর। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন ২০২২-২৩ অর্থবছর।

প্রতিবারের মতো এবারও অর্থবছরের শেষ দিকে এসে প্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়ছে। সাধারণত বছরের শেষ দিকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতি বেড়ে যায়। তড়িঘড়ি করে কাজ করার কারণে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে দীর্ঘদিন ধরে। সরকারের মন্ত্রী ও অর্থনীতিবিদরা বার বার এই প্রশ্ন তুলে অর্থবছরের শুরু থেকেই এডিপি’র কাজে গতি বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি; সেই পুরনো ধাচেই চলছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের গতি।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটা সেই পুরনো সমস্যা। অর্থবছরের শেষ দিকে এসে তাড়াতাড়ি প্রকল্প শেষ করার তাগাদা থাকে। সে কারণে এ সব প্রকল্পে দ্রুত অর্থ ছাড় করতে হয়। অন্যদিকে আগে শেষ হওয়া প্রকল্পের কাজের পুরো বিল বছরের মধ্যেই ঠিকাদারদের শোধ করতে হয়। সে কারণে সরকারের খচর হঠাৎ করে বেড়ে যায়। সেই ব্যয় মেটাতেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয় সরকারকে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্যবারের চেয়ে এবার অর্থবছরের শেষ দিকে এসে ব্যাংক থেকে একটু বেশি ঋণ নিতে হচ্ছে; কারণ সুদের হার কমানোয় ও নানা কড়াকড়ি আরোপের কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে গেছে। সেখান থেকে আর আগের মতো ঋণ পাচ্ছে না সরকার; পুরোপুরি নির্ভর করতে হচ্ছে ব্যাংক ব্যবস্থার উপর।’

তবে করোনা অতিমারি মোকাবিলায় বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতাদেশ ও সংস্থার কাছ থেকে বিপুল অংকের ঋণ সহায়তা সরকারকে আর্থিক সংকটে পড়তে হয়নি বলে জানান মির্জ্জা আজিজুল ইসলঅম।

অর্থবছরের শেষ দিকে এসে প্রকল্পের কাজের গতি বাড়ার কথা স্বীকার করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, পুরো বছরজুড়েই প্রকল্পের কাজের গতি একইভাবে চালানোর। কিন্তু সীমাবদ্ধতার কারণে সেটা পুরোপুরি সম্ভব হয়ে উঠছে না। আশা করছি, আগামীতে এ থেকে আমরা পরিত্রাণ পাবো।’

‘তবে এবার বোধ হয় সমস্যা একটু কম হবে। কেননা, সরকারের ব্যয় সংকোচনের ধারাবাহিকতায় অতি প্রয়োজন ছাড়া অন্য প্রকল্পগুলোর কাজ আমরা আপতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশেষ করে আমদানিনির্ভর প্রকল্পগুলোর কাজ একেবারেই বন্ধ রাখা হচ্ছে। তাই ব্যয়টা একটু কমবে; ব্যাংক থেকে ঋণও বোধ হয় কম দিতে হবে।’

ঘাটতি মেটাতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা আছে। রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং ধারণার চেয়ে বেশি বিদেশি ঋণ সহায়তা পাওয়ায় খরচ মেটাতে এতদিন ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ করার প্রয়োজন হয়নি; লক্ষ্যের অনেক নিচে ছিল।

অর্থবছরের দশ মাসে অর্থাৎ জুলাই-এপ্রিল সময়ে ৩২ হাজার ৪৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নিয়েছে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই ঋণের অংক ছিল অনেক কম, ৬ হাজার ৪০২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, এই অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে রাজস্ব আদায় বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। আর বিদেশি ঋণসহায়তা বেড়েছে ৫৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।

সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমানোয় সফল সরকার

সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কমানোর কৌশলে সফল হয়েছে সরকার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে এই খাত থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। এরমধ্যে নয় মাসে অর্থাৎ জুলাই-মার্চ সময়ে নিয়েছে ১৬ হাজার ৫০৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

এই অংক ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। গত অর্থবছরে এই নয় মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৩ হাজার ২০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার ঋণ নিয়েছিল সরকার।

২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার। মূল বাজেটে এ খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ধার করার লক্ষ্য ধরা হয়েছিল। বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজটে সেই লক্ষ্য বাড়িয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়।

তবে বছর শেষে দেখা যায়, সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে মূল বাজেটের দ্বিগুণেরও বেশি ঋণ নিয়েছে। সংশোধিত বাজেটের চেয়ে বেশি নিয়েছে ৩২ শতাংশ। আর আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি নিয়েছে প্রায় তিন গুণ।

ব্যাংকের চেয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক বেশি। সে কারণে বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করে সরকার। একই সঙ্গে এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। তারপরও বাড়তে থাকে বিক্রি।

সবশেষ সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য বিক্রি কমাতে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তারপর থেকেই বিক্রিতে ভাটা পড়ে।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গত অর্থবছরে মোট ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৭০ হাজার ২২৯ কোটি টাকা গ্রাহকদের পরিশোধ করা হয়। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪১ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।

এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছিল ২০১৬-১৭ অর্থবছরে, ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সে জন্য গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমিয়ে দেয় সরকার।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম সুদের হার, ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক রকম হার এবং ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরেক রকম হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।

তবে ১৫ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফার হারে সরকার হাত দেয়নি। অর্থাৎ আগে যে হারে সুদ পাওয়া যেত, এখনও সেই হারে পাওয়া যাবে।

এর আগে ২০১৫ সালে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার গড়ে ২ শতাংশের মতো কমিয়েছিল সরকার।

আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যেটা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’বা ‘ধার’হিসেবে গণ্য করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর