অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছাল। এখন এক ভরি সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণ কিনতে হাতে গুনে ৮২ হাজার ৪৬৬ টাকা দিতে হবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই মূল্যবান এ ধাতুটি এত দামে বিক্রি হয়নি।
রোববার থেকে নতুন দর কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি- বাজুস।
আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম এবং বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ায় দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৮ মার্চ দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৯ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। তার চার দিন আগে ৪ মার্চ বাড়ানো হয়েছিল ভরিতে ৩ হাজার ২৬৫ টাকা।
এরপর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমতে শুরু করায় গত ১৫ মার্চ দেশের বাজারে ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ২১ মার্চ কমানো হয় ভরিতে আরও ১ হাজার ৫০ টাকা।
কিন্তু বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় গত ১১ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৮৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় ২৫ এপ্রিল প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হয়। সর্বশেষ ১০ মে একই পরিমাণ কমানো হয়েছিল।
দুই দফায় ভরিতে ২ হাজার ৩৩২ টাকা কমানোর পর ১৭ মে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস, ১৮ মে থেকে যা কার্যকর হয়।
মাত্র চার দিনের ব্যবধানে সেই স্বর্ণের দাম এক ধাক্কায় ভরিতে ৪ হাজার ১৯৯ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে বাজুস।
বাজুসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে মার্কিন ডলার ও অন্যান্য মুদ্রার দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজার ও স্থানীয় বুলিয়ন মার্কেটেও স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়েছে। রোববার থেকে এই নতুন দর কার্যকর হবে।
দাম বাড়ানোর কারণ জানতে চাইলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগারওয়ালা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মুহূর্তে গোল্ডের দাম ওঠানামা করছে। এই বাড়ছে তো ওই কমছে। গত এক সপ্তাহে দাম খানিকটা বেড়েছে। একই সঙ্গে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়েছে বেশ খানিকটা। সে কারণে সবকিছু হিসাব করে আমরাও গোল্ডের দাম বাড়িয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতি মুহূর্তে বাজার পর্যবেক্ষণ করি। এখন বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে; আমরাও বাড়িয়েছি। দেশে স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমা নির্ভর করে আসলে বিশ্ববাজারের ওপর।’
‘তবে এবার গোল্ডের দাম বাড়ানো হয়েছে মূলত মার্কিন ডলারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণে। ডলারের পাশাপাশি অন্যান্য মুদ্রার দামও বেশ বেড়েছে। এ কারণে গোল্ডের আমদানি খরচ অনেক বেড়ে গেছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে দাম বাড়ানো হয়েছে,’ বলেন দেশের অন্যতম শীর্ষ স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আগারওয়ালা।’
‘বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম নিম্নমুখী হলে এবং ডলারের দাম কমলে আমরাও আমাদের স্থানীয় বাজারে গোল্ডের দাম কমিয়ে আনব।’
বিশ্ববাজারে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম, ২.৬৫ ভরি) স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৮৪৬ ডলার ৫৩ সেন্ট। সর্বশেষ ১৭ মে যখন স্বর্ণের দাম কমানো হয়, তখন প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ১ হাজার ৮৩২ ডলার ৪২ সেন্ট।
চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এই দর কমতে কমতে ১ হাজার ৮০০ ডলারে নেমে এসেছিল।
মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বাড়তে বাড়তে ২ হাজার ৬০ ডলারে উঠেছিল।
রোববার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ কিনতে লাগবে ৮৪ হাজার ৪৬৬ টাকা। শনিবার পর্যন্ত এই মানের স্বর্ণ ৭৮ হাজার ২৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমেছে ৪ হাজার ১৯৯ টাকা।
২১ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিতে ৪ হাজার ২৮ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৭৩২ টাকা করা হয়েছে। গত চার দিন ৭৪ হাজার ৭০৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে এই মানের স্বর্ণ।
১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৪৯৯ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৭ হাজার ৫৩৫ টাকা। শনিবার পর্যন্ত ৬৪ হাজার ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম ২ হাজার ৮৫৮ টাকা বাড়িয়ে ৫৬ হাজার ২২০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে বাজুস। চার দিন ধরে ৫৩ হাজার ৩৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি।
তবে রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের দামেই বিক্রি হবে এই ধাতু।