বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের জরুরি তহবিল ঘোষণা করেছে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থা-বিশ্বব্যাংক।
এ তহবিল থেকে বাংলাদেশসহ সংস্থাটির সদস্য দেশগুলোকে ১২ বিলিয়ন ডলার নতুন প্রকল্পে দেয়া হবে। বাকি ১৮ বিলিয়ন ডলার চলমান খাদ্য ও পুষ্টিসহায়তা বিষয়ক প্রকল্পে অর্থায়ন হবে। তবে কোন দেশ কত সহায়তা পাবে, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদরদপ্তর থেকে বুধবার এ তহবিল ঘোষণা হয়। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা।
দুই দেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান দানাদার শস্যের রপ্তানিকারক হলেও, যুদ্ধের কারণে তাদের রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। আর তাই বৈশ্বিক খাদ্য সংকটের এ হুমকি মোকাবিলায় ৩০ বিলিয়ন ডলার ঋণ-সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
তহবিল থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার নতুন প্রকল্পে দেয়া হবে। আর বাকি ১৮ বিলিয়ন ডলার চলমান খাদ্য ও পুষ্টিসহায়তা বিষয়ক প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে।
এর আওতায় ইতোমধ্যে যেসব প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোর অর্থছাড় হয়নি। এবার সেসব প্রকল্পে এই অর্থ ব্যবহার করা হবে।
এসব অর্থায়ন খাদ্য ও সার উৎপাদনকে উৎসাহিত করবে। সেই সঙ্গে খাদ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, বৃহত্তর বাণিজ্যকে সহজতর করা এবং দারিদ্রসীমার নিচে থাকা পরিবারগুলোকে সহায়তা করবে।
বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের সদস্য দেশ ১৮৯টি। এর মধ্যে যেসব দেশে খাদ্য ও পুষ্টিসহায়তা বিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্প চলমান আছে, সেসব দেশ এই তহবিল থেকে সহায়তা পাবে। নতুন প্রকল্পে যে ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণ-সহায়তা দেয়া হবে, সেখানে দরিদ্য দেশগুলো অগ্রাধিকার পাবে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশে খাদ্য ও পুষ্টিসহায়তা বিষয়ক কয়েকটি প্রকল্প চলমান আছে বলে সংস্থাটির ঢাকা অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সে বিবেচনায় বাংলাদেশ এ তহবিল থেকে সহায়তা পাবে বলে নিশ্চিত করেছেন তারা।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস বলেন, ‘যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যমূল্য বেড়্বেছে। যা দরিদ্র দেশগুলোর মানুষকে চরম বিপদে ফেলেছে। দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন তারা। এসব দেশকে এখন খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর দিকে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে।
‘দেশগুলোর উচিত জ্বালানি ও সারের সরবরাহ বাড়ানো। সেইসঙ্গে আমদানি-রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করে, খাদ্যকে জৈব জ্বালানির দিকে সরিয়ে দেয় বা অপ্রয়োজনীয় ব্যয় উৎসাহিত করে-এমন নীতি পরিহার করে সমন্বিত একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিশ্বব্যাংক খাদ্য নিরাপত্তা সংকট মোকাবিলায় আগামী ১৫ মাসের জন্য ১২ বিলিয়ন ডলারের নতুন প্রকল্পের প্রস্তুতি নিয়ে দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করছে। এই প্রকল্পগুলো কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে উচ্চ খাদ্যমূল্যের প্রভাব কমাতে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব ইউরোপ, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিশ্বব্যাংকের ১৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের চলমান সামাজিক সুরক্ষা এবং পানি ও সেচ প্রকল্পগুলো নতুন তহবিলের ১৮ বিলিয়ন ডলারে যোগ হবে।
বর্তমান ও ভবিষৎ সংকট বিবেচনায় সদস্য দেশগুলোকে উৎপাদন ও উৎপাদকদের সহায়তা, বর্ধিত বাণিজ্য সহজতর, ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে সহায়তা এবং টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় বিনিয়োগ বাড়াতে আহ্বান জানায় বিশ্বব্যাংক।