ভোজ্যতেলে আমদানিনির্ভর সয়াবিননির্ভরতা থেকে বের হয়ে সরিষা ও ধানের কুঁড়ার রাইন ব্র্যান অয়েলের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
দেশে যে পরিমাণ ধান উৎপাদন হয় তার কুঁড়া দিয়ে তেল উৎপাদন করলে চাহিদার চার ভাগের এক ভাগ পূরণ করা সম্ভব বলে প্রাথমিক এক মূল্যায়নে উঠে এসেছে।
সরিষার চাষ ও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব বলেও মনে করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এর বাইরে তিনি ক্যানোলার তেলকে জনপ্রিয় করতে চান। এই তিনের মিলেশে টালমাটাল বিশ্ববাজার পরিস্থিতিতেও দেশে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা দূর করা সম্ভব বলে ধারণা তার।
বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির দ্বিতীয় সভা শেষে সয়াবিনের বিকল্প হিসেবে এই তিন উদ্যোগের কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
বিশ্ববাজারে সরবরাহ সংকটে সয়াবিন, পাম অয়েলের দাম ক্রমেই বাড়ছে। দেশের বাজারেও পড়েছে এর প্রভাব। এক বছরের কিছু বেশি সময়ে দেশে দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার পাশাপাশি সরবরাহ সংকটও দেখা দিয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশ এই মুহূর্তে ভোজ্যতেলের কোনো সংকট নেই। মিলারও জানিয়েছেন, দেশে তেল আছে তা দিয়ে আমাদের প্রয়োজন মিটে যাবে। প্রশ্ন হলো সেটি কতদিন?
আরও পড়ুন: যে কারণে বাজার পেল না রাইস ব্র্যান অয়েল
‘আমরা শুধু সয়াবিন ও আমদানিনির্ভর এই থাকব না সয়াবিনের বিকল্প সরিষা ও রাইস ব্রান কিংবা ক্যানোলা তেল খাব, আমাদেরকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাকে ও তার অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সয়াবিনের বিকল্প হিসেবে দেশে সরিষা ও রাইস ব্রান উৎপাদন বাড়ানোর। কৃষি মন্ত্রণালয় এ নিয়ে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু করছে।’
তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদন মাত্র কেবল ৫০ হাজার টন। সরকার হিসাব করে দেখেছে এটি সাত লাখ টনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
মন্ত্রী বলেন, ‘এটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে আমাদের মোট ভোজ্যতেলের চাহিদার ২৪ থেকে ২৫ পার্সেন্ট রাইস ব্রান থেকেই মিটে যাবে।
‘একইভাবে আমরা সরিষা উৎপাদনেও জোর দিতে যাচ্ছি। আমাদের সরিষা উৎপাদন ও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব যার থেকে আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদার একটা উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ হবে। এছাড়া ক্যানোলা অয়েল আমদানির বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
দেশে বর্তমানে ভোজ্যতেলের চাহিদা ২০ লাখ টনের মতো। এর সিংহভাগই আমদানি করে মেটানো হয়। রান্নায় ব্যবহৃত ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বাণিজ্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাম তেলের নির্ভরতা বেশি।
৮০ দশকেও দেশে সরিষার তেলের ওপর নির্ভরতা বেশি থাকলেও পরে তা কমে আসে। তবে গত কয়েক বছরে এই তেলের চাহিদাও বাড়ছে।
সয়াবিন তেলের বিকল্প এসব তেলের উপকারিতা সম্পর্কে তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সাংবাদিক সবাইকে জোরালোভাবে প্রচারের ওপরও জোর দেন মন্ত্রী।
ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।