বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিনিয়োগ বাড়াতে আরও কমছে করপোরেট কর

  •    
  • ১৬ মে, ২০২২ ২০:৫৪

পুঁজিবাজারে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার পৌনে ২ শতাংশ কমিয়ে ২৮ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হতে পারে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার বর্তমানে সাড়ে ২২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ দশমিক ৭৫ শতাংশ করার চিন্তা করা হচ্ছে।

করোনা-পরবর্তী বেসরকারি বিনিয়োগ চাঙা করতে আগামী অর্থবছরের বাজেটেও কমানো হতে পারে করপোরেট কর, যা কোম্পানিগুলো বার্ষিক মুনাফার ওপর দিয়ে থাকে।

দুটি স্তরে এই করহার কমানো হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে নন-লিস্টটেড কোম্পানি, যা শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত নয়। অন্যটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বা লিস্টেড কোম্পানি।

বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, এমন কোম্পানির করপোরেট করহার ৩০ শতাংশ।

বাজেট প্রণয়নে সম্পৃক্ত নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা খাত ছাড়া আগামী ২০২২-২৩ বাজেটে পুঁজিবাজারে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার পৌনে ২ শতাংশ কমিয়ে ২৮ দশমিক ২৫ শতাংশ করা হতে পারে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট করহার বর্তমানে সাড়ে ২২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ দশমিক ৭৫ শতাংশ হতে পারে।

অর্থাৎ দুই ধরনের কোম্পানিরই করপোরেট করহার বর্তমানের চেয়ে ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ কমতে পারে।

প্রতিষ্ঠান বছর শেষে মুনাফার ওপর যে কর দেয়, সেটাকে করপোরেট কর বলে। বাংলাদেশে বর্তমানে পাঁচটি স্তরে এই কর আদায় করা হয়। সবোর্চ্চ করহার ৪৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন সাড়ে ২২ শতাংশ। এর বাইরে পাট, ডায়মন্ডসহ কয়েকটি খাতে হ্রাসকৃত হারে কর আহরণ হয়।

তবে কিছু খাতে করপোরেট কর কমানোর চিন্তা নেই। সিগারেট, জর্দা, গুলসহ তামাকজাত দ্রব্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির ৪৫ শতাংশ, পুঁজিবাজারে তালিকাবহির্ভূত মোবাইল ফোন কোম্পানির ৪৫ শতাংশ, তালিকাভুক্ত মোবাইল কোম্পানির ৪০ শতাংশ, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ২০১৩ সালের আগে অনুমোদন পাওয়া তালিকাবহির্ভূত ব্যাংকের ৪০ শতাংশ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও বিমা খাতে ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করপোরেট কর অব্যাহত থাকতে পারে।

বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে পাঁচ অর্থবছর ধরেই এই করপোরেট করহার ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা হচ্ছে, যা একসময় ৪০ শতাংশের বেশি ছিল।

ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘আমি মনে করি বাংলাদেশে করপোরেট করহার এখনও বেশি। বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে এটি আরও কমানো উচিত।’

সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক ঊর্ধ্বতন পরিচালক ও বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, ‘ট্যাক্স রেট কত, তা দেখে বিদেশিরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। সে জন্য করপোরেট করহার বিনিয়োগের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

প্রাক-বাজেট আলোচনায় দেশের শীর্ষ চেম্বারসহ স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্রতি বছরই করপোরেট করহার কমানোর দাবি তোলেন।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, করহার কমলে বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে, বাড়বে কর্মসংস্থান, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।

তবে প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার যে উদ্দেশ্যে করপোরেট করহার ধাপে ধাপে কমিয়ে আনছে, সেই লক্ষ্য কী পূরণ হচ্ছে? বিনিয়োগ কি চাঙা হচ্ছে?

দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তারা মনে করেন, করহার কমলেই বিনিয়োগ বাড়বে, এটা জোর দিয়ে বলা যায় না। এর সঙ্গে গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো উন্নয়ন, আমদানি-রপ্তানি নীতি, বাণিজ্য নীতি, শ্রমবাজারসহ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়গুলোও জড়িত।

তাদের মতে, করহার কম হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেন। কারণ এতে তাদের মুনাফা বাড়ে এবং মুনাফার একটি অংশ দেশে ফেরত নিতে পারেন বা পুনরায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হন।

তবে পরিসংখ্যান বলে করপোরেট কর ক্রমাগত কমানো হলেও কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগ একই জায়গায় স্থবির হয়ে আছে। এটা জিডিপির ২৩ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

করহার কমানো, কর প্রণোদনা দেয়া, ঋণের সুদহার কমানো, আইনকানুন পরিবর্তনসহ নানা পদক্ষেপে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না।

ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘করপোরেট কর কমালে বিনিয়োগ উৎসাহিত হয়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে বিনিয়োগ বৃদ্ধির এটিই একমাত্র পথ। এর সঙ্গে অর্থনীতির অন্যান্য সূচক ভালো হতে হবে।’

১৯৮৪ সালের আয়কর আইনে করদাতা দুই ধরনের। ব্যক্তিশ্রেণি করদাতা এবং কোম্পানি করদাতা। সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে ব্যক্তিশ্রেণির চেয়ে কোম্পানি করদাতা কম হলেও এ খাত থেকেই কর বেশি আদায় হয়।

মোট করদাতার মাত্র ২ শতাংশ কোম্পানি করদাতা। একক খাত হিসেবে এখান থেকে মোট আয়কর আদায় হয় ৩৫ শতাংশ। বাকি ৬৫ শতাংশ ব্যক্তিশ্রেণি, উৎসে করসহ অন্যান্য খাত থেকে আদায় করা হয়।

রেজিস্ট্রার অফ জয়েন্ট স্টক কোম্পানির হিসাবে, দুই লাখের বেশি কোম্পানি থাকলেও নিয়মিত কর দিচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৩০ হাজার।

এখন পর্যন্ত ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি করপোরেট কর আদায় হয়।

ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশে করপোরেট করহার কম এবং কর কাঠামো সহজ।

ভারতে করপোরেট করহার দুটি। বড় কোম্পানির জন্য ৩০ শতাংশ এবং স্থানীয় কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ।

শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে করপোরেট করহার যথাক্রমে ২৮ ও ৩০ শতাংশ।

সিঙ্গাপুরে একটি করপোরেট করহার এবং তা মাত্র ১৩ শতাংশ।

এ বিভাগের আরো খবর