বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বলে মনে করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
সচিবালয়ে সোমবার বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) সংলাপে যোগ দিয়ে এ মত দেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘বৈশ্বিক, অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি দুটোই খুব ক্রিটিক্যাল (গুরুত্বপূর্ণ)। আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি ভালো হলে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার পরিস্থিতিও ভালো থাকে, কিন্তু বিশ্বজুড়ে ভোজ্যতেলসহ প্রায় সব পণ্যের দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী। দেশে তারই প্রভাব পড়ছে।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তেল, চিনি, ডালের দাম নিয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে। পেঁয়াজের দামও চড়ছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সরকার সেখানে সব ধরনের সমন্বয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছে। নিত্যপণ্যের আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি এর জন্য করণীয় সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতেও কাজ করে যাচ্ছে।
‘আবার বাজার পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যারা অসাধু কর্মকাণ্ডে লিপ্ত, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে কাজ করে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সরকার বাজারকে নিয়ন্ত্রণ নয়, স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছে।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ অনেকটা প্রভাব ফেলেছে আমাদের খাদ্যপণ্যের ওপর। সামনের দিকে কিছুটা সংকট রয়েছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আশপাশের শ্রীলঙ্কার অবস্থা দেখে অনেকে প্রচার করছে সে অবস্থা হতে পারে।
‘সে রকম কোনো আশঙ্কা নেই। আমরা নিজেরাই শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিয়েছি। যারা বলেন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার দিকে যাচ্ছে, সেটি আসলে এক ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য, যার কোনো বাস্তবতা নেই।’
তিনি বলেন, ‘…এটা ঠিক, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও দীর্ঘতর হলে তার নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও দীর্ঘতর হবে। এ ধরনের সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের করণীয় আছে।’
ওই সময় তিনি ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ কিংবা ভোক্তা সবাইকে যার যার অবস্থানে থেকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন। রিজার্ভের অপচয় রোধে ব্যবসায়ীদের সতর্ক হওয়ার কথাও বলেন তিনি।
ভোজ্যতেল প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে কয়েকটি পণ্য আছে, যেগুলো আমরা মনিটর করি। ঈদের আগে তেলের দাম নিয়ে অনেক কথা এসেছে। আমাদের মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে একবার বসে ট্যারিফ কমিশন এই প্রাইজিংটা করেন। সবকিছু এভারেজ করে দামটা নির্ধারণ করা হয়।
‘আমাদের একটা বিশেষ কারণ ছিল। ঈদের মাসটাতে আমরা দামটা বাড়াতে চাইনি। ব্যবসায়ীদের বলেছিলাম, এই সময়টা ম্যানেজ করেন। তাই যেই সময়ে দামটা ফিক্সড করা হয়, সেখানে কিছুটা বিলম্ব হয়। যেহেতু তারা ভেবেছিল ঈদের পর দামটা বাড়বে, সে জন্য অনেকে তেল জমিয়ে রেখেছিল। এ জন্য প্রচুর ব্যবসায়ীকে আমরা ধরছি। সেটি ধরে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করছে ভোক্তা অধিকার।’
মজুতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘…অনেকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে এবং জেলেও পাঠানো হয়েছে, তবে এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাই না, যাতে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। রমজান মাসটা সংযমের মাস। ব্যবসায়ীরা জানে ঈদের পর দাম বাড়বে।
‘তারা সেই সুযোগ নিয়েছে, তবে আমাদের ভুল হয়েছে টানা দুই মাস তেলের দামটা নির্ধারণ করিনি। যদি করতাম তাহলে তারা সুযোগটা নিতে পারত না। এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামটা বেড়েছিল। তাই সেটি আগে ফিক্সড করলে সমস্যাটা হতো না।’
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম একটু চড়া। তবুও দাম মানুষের নাগালের মধ্যেই আছে। পেঁয়াজের দাম যদি কৃষক ২৫ টাকা পায়, তাহলেও মোটামুটি পোষানো সম্ভব হয়। পরে সেটির সঙ্গে ট্রান্সপোর্টসহ কিছু কস্টিং যুক্ত হয়।
‘পেঁয়াজের আইপি বন্ধ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষকরা যাতে দাম পায় সেটি দেখতে হবে। আমরা দেখছি কৃষকরা যাতে অন্তত ২৫ টাকা পায়। বাকি ট্রান্সপোর্টসহ অন্য খরচ মিলে ঢাকার মানুষ ৪৫ টাকায় যাতে খেতে পারে। কৃষকরা যাতে দাম পায় এবং ভোক্তারাও যাতে কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারে, সেটি আমরা দেখছি।’
সীমান্ত হাট নিয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জির (পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী) সঙ্গে কথা বলেছিলাম এ বিষয় নিয়ে। আশা করছি, তিন-চারটি প্রোপাজাল দেবে। মিজোরামে গিয়েও আলোচনা হয়েছে।
‘ছোট রাজ্য হলেও তারা এটি খুব পজিটিভলি দেখছে। একটি সাজেকের কাছাকাছি, আরেকটি ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটি নিয়ে দ্রুত দেখতে।’
রপ্তানি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কিছু কিছু ভালো কাজ করতে পেরেছি। বিশ্বজুড়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও আমরা রপ্তানি ভালো করছি। ইতোমধ্যে বছরের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে।
‘বাকি সময়ে রপ্তানি ৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হবে বলে আশা করছি। আমরা এটাও আশা করছি, ২০২৪ সালে ৮০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘১৫০টির বেশি দেশে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য পাঠাতে পারছি। অন্যদিকে ইথিওপিয়া ৯০ শতাংশ এসব পণ্য বাইরে থেকে আমদানি করে। গার্মেন্ট সেক্টরে আরও ১০ লাখ কর্মী যুক্ত হবে বলে আশা করছি।’
সংগঠনের সভাপতি তপন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সংলাপের উপস্থাপনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।