গুলশানের একটি বেসরকারি অফিসের চাকুরে মোহাম্মদ হাসান কিস্তিতে ব্যাংকের কার্ড দিয়ে এসি কিনবেন। বিভিন্ন ব্যান্ডের এসি থেকে নিজের পছন্দেরটি খুজে নিতে খোঁজ নিচ্ছেন বিভিন্ন শোরুমে।
গুলশান-এ অবস্থিত ইলেকট্রোমার্টের শোরুমে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যে বেতন পাই, তাতে এক সঙ্গে সব টাকা শোধ করে এসি কিনতে গেলে পুরো মাসের টাকাই খরচ হয়ে যাবে। কিন্তু কিস্তির কারণে তা কেনা অনেক সহজ হচ্ছে। হয়তো মাসে কিছু খরচ বাড়বে। তবে পুরো টাকা শোধ দিতে হবে এক বছরে, ১২ কিস্তিতে। সময় মতো পরিশোধ করতে পারলে সুদও দিতে হবে না। এতে এক সঙ্গে টাকা শোধের চাপ থাকল না। আবার এই গরম থেকে খানিকটা আরামও পাওয়া গেল।’
বৈশাখে দিনে দিনে তাপমাত্রা বাড়ছে। পারদের মাত্রার চেয়েও অনুভুত হচ্ছে বেশি গরম। অসহনীয় গরমে শান্তির পরশের আশায় সামর্থ্যবানরা ঝুঁকছেন এসির দিকে। পাশাপাশি কিস্তি সুবিধার কারণে গত কয়েক বছরে মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্তরাও এসির ক্রেতা হিসাবে হাজির হচ্ছেন। বিলাসী পণ্য ছেড়ে এসি হয়ে উঠেছে জরুরি গার্হস্থ যন্ত্র।
দেশের বাজারে পাওয়া প্রায় সবগুলো ব্র্যান্ডের এসিতেই পাওয়া যাচ্ছে কিস্তি সুবিধা। ছয় থেকে ১২ মাসের কিস্তিতে পরিধোশ করা যাচ্ছে এসির দাম। কোনো কোনো ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে মিলছে ১৮ মাসের কিস্তির সুবিধাও। সময় মতো কিস্তি শোধ করলে বাড়তি টাকা বা সুদও দিতে হচ্ছে না। দেশের প্রায় সবগুলো বাণিজ্যিক ব্যাংকের গ্রাহক এ সুবিধা পাচ্ছেন। আবার নগদে কিনলে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ও দিচ্ছে ব্র্যান্ডগুলো।
ইলেকট্রোমার্টের গুলশান-১ শাখার ইনচার্জ ইলিয়াস হারুন বলেন, ‘যে গরম পড়েছে, তাতে অতিষ্ট হয়ে মানুষ এসির জন্য আসছে। তাদের সুবিধার জন্য আমরা নগদে ১০ শতাংশ ছাড় এবং কিস্তিতে সর্বোচ্চ ১২ মাসের সুবিধা দিচ্ছি। আমাদের কাছে বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের এসি রয়েছে। দামেও সেগুলো নাগালের মধ্যে। এক টনের দাম ৩৩ হাজার টাকায় শুরু। যাদের সাধ্য কম, তাদের অনেকে শুধু শোবার ঘরের জন্যই এক টনের এসি কিনে নিচ্ছেন, যেন অন্তত রাতের বেলায় আরামে ঘুমাতে পারেন। এতে এপ্রিল থেকে এসি বিক্রি আগের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। বড় ক্ষমতার এসির চাহিদাও রয়েছে তবে তা উচ্চবিত্তদের মধ্যেই বেশি।’
কংকা, গ্রি, তোশিবা, ডাইকিন, হাইকো ব্র্যান্ডের এসির আমদানি ও বিক্রি করে ইলেকট্রোমার্ট লিমিটেড। কিস্তি সুবিধা মিলছে এলজি, বাটারফ্লাই, সিঙ্গার, জেনারেল, মিডিয়া, হায়ার, ওয়ার্লপুল, সনি, প্যানাসনিক, ফিশার অ্যান্ড পেইকেল, ক্যারিয়ার, শার্প, ট্রান্সটেক ও স্যামসাংসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসি কিনতেও।
গুলশানের নাভানা শপিং কমপ্লেক্সের অ্যাসেট ইলেকট্রনিক্সের বিক্রেতা এরশাদ জানান, গত কয়েক দিনে এসির বিক্রি অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘এখন বেশিরভাগ আসছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির। তার মধ্যে প্রায় সবাই কিস্তি সুবিধা দিয়ে এসি কিনে নিচ্ছেন। নগদ ক্রেতা খুবই কম। কিস্তি তাদের জন্য সুবিধা করে দিয়েছে। এককালীন তিন ভাগের এক ভাগ দাম পরিশোধ করে বাকিটা ছয় মাস থেকে এক বছরে দেয়ার সুযোগ রয়েছে।’
দেশি প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনও এসির বাজারে পিছিয়ে নেই। এই ব্র্যান্ডেরও কিস্তি সুবিধা রায়েছে। বাজারের অন্য সব এসির চেয়ে তাদের এসির দামও তুলনামূলক কম বলে দাবি করেন এর কর্মকর্তারা।
ওয়ালটনের বিজয় সরণী প্লাজার বিক্রয় কেন্দ্রের ম্যানেজার কুলসুম পারভীন বলেন, ‘মধ্যবিত্তের সামর্থ্য কম থাকায় তাদের মধ্যে এসির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে, এসির বাজারও বড় হচ্ছে। গমর বাড়ায় এসি বিক্রি অনেক বেড়েছে। সারা বছরের গড় চাহিদার গ্রীষ্মে দ্বিগুণ এসি বিক্রি হয়। এখন এসির বাজারে ওয়ালটনের অংশ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। গ্রাহকভেদে এসির চাহিদা নির্ভর করে। তবে আমাদের ক্রেতার বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত শ্রেণির। দেশের অর্ধেকের বেশি বাজার ধরাই আমাদের লক্ষ্য।’
আসছে নতুন নতুন প্রযুক্তিচাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এসিতে যুক্ত হচ্ছে নতুন প্রযুক্তি ও ফিচার। যেমন, গ্রি বলছে, তাদের এসি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পাশাপাশি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ধুলাবালি থেকে ঘরের বাতাস পরিশুদ্ধ রাখে। ওয়ালটন বলছে, তাদের এসি ইনভার্টার প্রযুক্তির, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী একই সঙ্গে তাদের রয়েছে ভয়েস কন্ট্রোল প্রযুক্তিও। ঘরের বাইরে থেকে মোবাইল ফোনের মধ্যমে এসি বন্ধ করা যায়। স্যামসাং বলছে, তাদের এসিতেও রয়েছে ডিজিটাল ইনভার্টার প্রযুক্তি, যাতে বিদ্যুৎ অনেক কম লাগে।
মূলত বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এসেছে ইনভার্টার প্রযুক্তি। এটি ঘরের আরামদায়ক তাপমাত্রা ঠিক রেখে এসির শক্তি খরচ কমিয়ে নিয়ে আসে। তাই নন-ইনভার্টার এসির চেয়ে ইনভার্টারের দাম কিছুটা বেশি। ইনভার্টার প্রযুক্তির এক টন এসিতে প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ ব্যয় হয় সোয়া দুই টাকা থেকে আড়াই টাকার মতো। এ ছাড়া আরও নানা সুবিধার এসি বাজারে ছেড়েছে কোম্পানিগুলো। বেশি সুবিধার এসি দামেও বেশি। তবে মধ্যবিত্তদের মধ্যে সাধারণ এসির চাহিদাই বেশি।
দেশের বাজারে বর্তমানে এক টন, দেড় টন, দুই টন থেকে চার টনের এসি পাওয়া যাচ্ছে। কোম্পানি ভেদে দাম রয়েছে ৩০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত।