ভোজ্যতেল মজুতের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রংপুর চেম্বার। ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘চোর না হয়েও ব্যবসায়ীদের অহেতুক চোর বানানো হচ্ছে।’ গত চার দিনে রংপুর নগরীতে ৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভোজ্যতেল মজুতের তথ্যে অভিযান চালায় রংপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় ৩৭ হাজার ৩৬২ লিটার তেল জব্দের পর ১ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন ভোজ্যতেল পরিবেশকরা।
চেম্বার ভবনে বৈঠকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত দামে মোকামে ও মিলারদের কাছ থেকে ভোজ্যতেল কিনতে না পারা এবং অহেতুক প্রশাসনিক চাপ তেলের বাজারকে আরও অস্থির করে তুলবে।’
নবাবগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আকবর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যখন খোলা সয়াবিন তেলের লিটার ছিল ৮০ টাকা, তখন কমিশন ছিল ৪ টাকা। সয়াবিন তেলের লিটার যখন ১৯৮ টাকা, তখন কমিশন শূন্য। তারপর চোর না হয়েও ব্যবসায়ীদের অহেতুক চোর বানানো হচ্ছে। এ থেকে বিরত থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বুধবার সেনপাড়ায় যে অভিযান চালানো হয়েছে, সেই তেল পরশু দিন আনা হয়েছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে পঞ্চাশ হাজার করে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
‘সরকার রেট দিয়ে দিক, কত দিয়ে কিনব আর কত দিয়ে বিক্রি করব। বেশি দরে কেনার কাগজ দেখালেও তারা বিশ্বাস করছে না। আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি।’
রংপুরে ভোজ্যতেলের হোলসেলার আজিজুল ইসলাম মুকুল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মজুতদার না। প্রতিদিন একটা সেল রেকর্ড আছে। প্রতিদিন কী পরিমাণ মাল সেল হয় এবং মাল ঢোকে তার একটা সেল রেকর্ড আমার কাছে আছে। বুধবার তারা আমাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
‘ম্যাজিস্ট্রেটকে বলেছি, আপনারা যে ফাইন করলেন কী কারণে সেটা তো বলতে হবে। তখন তারা বলে, সরকারের নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আমাকে বলুক, কত দামে কিনে কত দামে বিক্রি করব।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের রেট ১৮০ টাকা। সেটা খুচরা না পাইকারি রেট। সেটা কোনো কর্তৃপক্ষ এখনও আমাকে দিতে পারেনি। অথচ জরিমানা করেছে। আমি হান্ড্রেড পারসেন্ট শততার সঙ্গে ব্যবসা করি।
‘হোলসেলারদের অবশ্যই পণ্য মজুত করে সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে হয়, গোডাউনে যদি পণ্য মজুত না থাকে তবে সরবরাহ প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে দায়দায়িত্ব কে নেবে?’
রংপুর চেম্বার সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, ‘বিশ্ববাজারে দিন দিন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার কারণে আমদানি কমে আসে। চাহিদার তুলনায় কম সরবরাহের করণে তেলের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। ভোগ্যপণ্য নিয়ে সিন্ডিকেট বাণিজ্যের প্রতি নজর রাখার পাশাপাশি দেশে তেল আমদানিকারক বাড়াতে হবে।’তিনি বলেন, ‘মুক্তবাজার অর্থনীতিতে উৎপাদন এবং বিপণনের অনেক বিকল্প থাকে। ফলে একজন উৎপাদক বা সরবরাহকারী চাইলেই পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে ভোক্তার ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন না।’
ব্যবসায়ীদের অহেতুক হয়রানির অভিযোগ এনে অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন রংপুর চেম্বার প্রেসিডেন্ট।
সভায় উপস্থিত ছিলেন রংপুর চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি মো. আজিজুল ইসলাম মিন্টু, নবাবগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আকবর আলী, রংপুরের ভোজ্যতেলের হোলসেলার মো. আজিজুল ইসলাম মুকুল, গোবিন্দ সাহা, বিশ্বজিৎ পাল, মো. লেলিন, মো. মোস্তাফিজার রহমান।