পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুটি মিউচুয়াল ফান্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। দুটি ফান্ডই ইউনিটপ্রতি ১ টাকা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেগুলোর ইউনিটগুলো ৮ থেকে সাড়ে ৮ টাকায় লেনদেন হচ্ছে।
ফান্ড দুটি হলো এআইবিএল ইসলামিক এবং এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড। দুটি ফান্ডই পরিচালনা করে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এলআর গ্লোবাল।
বৃহস্পতিবার ফান্ড দুটির ট্রাস্টি বোর্ড গত মার্চে সমাপ্ত অর্থবছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেয়। দুটি ফান্ডই ২০২১ সালে যত টাকা আয় করেছে, তার পুরোটাই লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এর মধ্যে এমবিএলের ইউনিট দর ৮ টাকা, অর্থাৎ ১২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং এআইবিএলের ইউনিট দর ৮ টাকা ৫০ পয়সা, অর্থাৎ এর ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে পাওয়া যাবে। এই শতকরা হার দেশে যেকোনো সঞ্চয়ী হিসাব, এমনকি সঞ্চয়পত্রের হারের চেয়ে বেশি।
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ আরও লাভজনক এই কারণে যে এখানে লভ্যাংশের ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত করমুক্ত। ২৫ হাজারের বেশি যত টাকা হবে, তার ওপর কর দিতে হয় ১০ শতাংশ।
অন্য শেয়ারের লভ্যাংশের ওপর থেকে যাদের কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন আছে, তাদের কাছ থেকে ১০ শতাংশ এবং যাদের নেই তাদের কাছ থেকে ১৫ শতাংশ কর কাটা হয়।
গত বছরও বেশির ভাগ মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ এর ইউনিট মূল্যের বিবেচনায় বেশ ভালো ছিল। ওই বছরও সঞ্চয়পত্রের মুনাফার তুলনায় বেশি হারে লভ্যাংশ পেয়েও বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারেনি এ কারণে যে রেকর্ড ডেটের পর ইউনিট মূল্য এতটাই কমে গেছে, আসলে লোকসানে পড়তে হয়েছে সবাইকে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলো গত বছর দারুণ আয় করার পর বেশ ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাপক হারে দর হারাতে থাকে।
এই কয় মাসে পুঁজিবাজারে সূচক কমেছে ৭০০ পয়েন্টের বেশি। আর ফান্ডগুলো যে প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে, তাতে আগের বছরের চেয়ে কম আয় করার কথা জানিয়েছে।
লভ্যাংশ ঘোষণা করা দুটি ফান্ডই আগের বছরের চেয়ে কম আয় করার পরও বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পেরেছে এ কারণে যে আগের বছর কোনো লোকসান না থাকায় সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়নি।
গত বছর যত আয় হয়েছিল, সে তুলনায় লভ্যাংশ কম ছিল এ কারণে যে তার আগের বছর ফান্ডগুলো ইউনিটপ্রতি বিপুল পরিমাণ লোকসান দিয়েছিল।
এমবিএল ফার্স্ট
ইউনিটপ্রতি ৮ টাকায় লেনদেন হওয়া এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড গত ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা, যা আগের বছরের প্রায় অর্ধেক।
২০২০ সালে সমাপ্ত অর্থবছরে ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি আয় ছিল ১ টাকা ৯৫ পয়সা। ওই বছর লভ্যাংশ এসেছিল ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ১৫ পয়সা।
সে বছর এবারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ আয় করার পরও লভ্যাংশ কম দেয়ার কারণ ছিল ২০১৯ সালে ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি ৯৭ পয়সা লোকসান। সেই লোকসানের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়।
এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ানের লভ্যাংশসংক্রান্ত ঘোষণা
গত ৩১ ডিসেম্বর ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১১ টাকা ৮৩ পয়সা, তার আগের বছর ছিল ১১ টাকা ৮৯ পয়সা।
যারা এই লভ্যাংশ নিতে চান, তাদের আগামী ৫ জুন ইউনিট ধরে রাখতে হবে। অর্থাৎ সেদিন হবে রেকর্ড ডেট।
গত এক বছরে ফান্ডটির ইউনিট মূল্য ৭ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ১০ টাকা ৩০ পয়সা পর্যন্ত ওঠানামা করেছে।
গত বছর ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ১৫ পয়সা লভ্যাংশ পেয়েও বিনিয়োগকারীরা লাভবান হতে পারেননি। রেকর্ড ডেটের দিন ফান্ডটির ইউনিট মূল্য ছিল ১০ টাকা ১০ পয়সা। যারা লভ্যাংশ নিয়েছেন তারা এখনও লোকসানে আছেন।
এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক
এই ফান্ডটিও ইউনিটপ্রতি আয় করেছে ১ টাকা, লভ্যাংশও দেয়া হবে এর পুরোটাই।
আগের বছর ফান্ডটি ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ৮৩ পয়সা আয় করে লভ্যাংশ দিয়েছিল ১ টাকা ২৫ পয়সা বা সাড়ে ১২ শতাংশ।
ওই বছর যত আয় হয়েছিল, তার পুরোটা লভ্যাংশ আকারে বিতরণ না করার কারণ তার আগের বছর ইউনিটপ্রতি ৬২ পয়সা লোকসানের বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ।
এআইবিএল ফার্স্ট ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ানের লভ্যাংশসংক্রান্ত ঘোষণা
এ ফান্ডটির ইউনিট মূল্য ৮ টাকা ৫০ পয়সা, যা গত এক বছরের সর্বনিম্ন অবস্থানের কাছাকাছি। এই বছরে সবচেয়ে কম দাম ছিল ৮ টাকা ৩০ পয়সা আর সবচেয়ে বেশি দাম ছিল ১১ টাকা ১০ পয়সা।
গত বছর লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের দিন ফান্ডটির ইউনিট মূল্য ছিল ১০ টাকা ৯০ পয়সা। ১ টাকা ২৫ পয়সা লভ্যাংশ হিসেবে পাওয়ার পর ইউনিট মূল্য কমে যাওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীরা আসলে লোকসানে আছেন।
গত ৩১ ডিসেম্বর ফান্ডটির ইউনিটপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিইউ) ছিল ১১ টাকা ২৩ পয়সা, যা এক বছর আগে ছিল ১১ টাকা ৫৭ পয়সা।
এই ফান্ডটির রেকর্ড ডেটও নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ জুন। অর্থাৎ যারা লভ্যাংশ নিতে চান, তাদের সেদিন ইউনিট ধরে রাখতে হবে।