বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। পরিমাণে কম হলেও দোকানগুলোয় এখন দেখা যাচ্ছে তেলের উপস্থিতি। নতুন দামে কোম্পানিগুলো তাদের সয়াবিন তেল বাজারজাত শুরু করার পর সেটি ডিলার, পাইকার হয়ে এখন খুচরা পর্যায়ে আসতে শুরু করেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার ঘুরে দোকানগুলোয় নতুন দামে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ দেখা গেছে।
সরবরাহকৃত তেলের মধ্যে পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ বেশি। এক ও দুই লিটারের বোতল সংখ্যায় কম।
দোকানিরা জানিয়েছেন, এতদিন তো দোকান তেলশূন্য ছিল। এখন সরবরাহ সংকট কেটে যেতে শুরু করেছে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ এখন ডিলার ও পাইকারের কাছে গেলে পাওয়া যাচ্ছে তেল। মিলগুলোও তাদের সাপ্লাই বাড়িয়েছে। ফলে দোকানদাররা তেল পেতে শুরু করেছেন।
তাহলে দোকানে তেলের উপস্থিতি কম কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রায় সব দোকানিই জানিয়েছেন, তারা ইচ্ছে করেই বেশি তেল আনছেন না, কারণ দোকানে বেশি তেল রাখলে তারা মজুতদারির অভিযোগের ঝামেলায় পড়তে পারেন।
রামপুরা কাঁচাবাজারের তইয়ব জেনারেল স্টোরে দেখা গেল তেলের খোঁজে এসেছেন এক ক্রেতা। দোকানি তাকে জানালেন, তার কাছে এক লিটার বোতলের তেল আছে।
ক্রেতা দাম জানতে চাইলে দোকানি বললেন, ‘তেলের দাম তো সরকার ফিক্সড করে দিয়েছে। আমরা সরকার নির্ধারিত ১৯৮ টাকাতেই বিক্রি করছি।’
পাশেই আরেক দোকানি বিক্রি করছেন তীর ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটার সয়াবিন। ক্রেতা সেজে ওই দোকানির কাছে পাঁচ লিটারের দাম জানতে চাইলে এক কথায় উত্তর মিলল ৯৮৫ টাকা। সরকার পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯৮৫ টাকাই নির্ধারণ করে দিয়েছে।
মালিবাগ কাঁচাবাজারের মেসার্স শাহিনের স্টোর, শুভ জেনারেল স্টোর, হোসেন স্টোরেও দেখা মিলেছে এক ও পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল। এর পাশাপাশি বাজারে দেখা মিলেছে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলেরও। তবে এখানকার দোকানিরাও জানিয়েছেন, তারা চাহিদার তুলনায় দোকানে তেলের মজুত কম রাখছেন।
শান্তিনগর কাঁচাবাজারেও দেখা মিলেছে বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের।
তবে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারের সব দোকানে মেলেনি সয়াবিনের উপস্থিতি। তারা জানিয়েছেন, ঈদের পর আবার সরবরাহ শুরু হওয়ার পর এক-দুটি দোকান অল্প করে তেল এনেছিল। ইতোমধ্যে তা বিক্রি শেষ হয়েছে। কাল-পরশুর মধ্যে এ বাজারেও সব দোকানে তেল আসতে শুরু করবে।
বাজারে তেলের সরবরাহ আসতে শুরু করলেও রাজধানীর এসব এলাকার অলিগলিতে থাকা দোকানগুলোয় এখনও তেল সরবরাহ আসছে না।
হাজীপাড়া নতুন রাস্তার কোনো দোকানে দেখা মেলেনি বোতলজাত খোলা সয়াবিন এবং পাম তেলের। পাশের গলিতে পিয়াশ ভূঁইয়া জেনারেল স্টোরের দেখা গেছে, সয়াবিনের পরিবর্তে ১০০ গ্রাম থেকে এক লিটার পর্যন্ত বিভিন্ন পরিমাণের সরিষার তেলের অনেকগুলো বোতল। পাশের বিসমিল্লাহ জেনারেল স্টোরেও একই অবস্থা।মগবাজার নয়াটোলা অলিগলির দোকানগুলোও তেলশূন্য।
সিটি গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) বিশ্বজিৎ সাহা নিউজবাংলাকে জানান, ঈদের পর গত রোববার থেকে তারা নতুন দামে সারা দেশে তেল সরবরাহ শুরু করেছেন। তাদের দৈনন্দিন উৎপাদন সামর্থ্য যা আছে, তাই তারা সরবরাহ করছেন।
এই সপ্তাহে তারা ডিলারদের মাধ্যমে সারা দেশে তেল বাজারজাত করছেন।
টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আলম জানান, তাদের সরবরাহ কখনই বন্ধ ছিল না। বাজারে পুরোনো দামের তেল যেমন ছিল, পাশাপাশি সরকার নির্ধারিত নতুন দাম চূড়ান্ত হওয়ার পর সেই রেটে তারা রোববার থেকে তেল সরবরাহ শুরু করেছেন।
আশা করা হচ্ছে, অল্প সময়ের মধ্যে সারা দেশে তেল সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।