দিনাজপুরের রানীর বন্দর এলাকার বাসিন্দা শাহিনুর বেগম। তিন সন্তানের এ জননী কাজ করেন পরচুলা তৈরির কারখানায়। এতে মাসে ১২-১৩ হাজার টাকা আয় হয়। এ দিয়ে নিজ খরচ চালানোর পাশাপাশি সংসারের হালও ধরতে পারছেন তিনি।
শুধু শাহিনুরই নন, পরচুলা তৈরি করে দিনবদল হয়েছে তার মতো হাজারও নারীর। যার হাত ধরে তাদের এ পরিবর্তন, তিনি রানির বন্দরেরই বাসিন্দা। নাম রবিউল ইসলাম।
যেভাবে শুরু
জুলফিকার আলী ভুট্টো নামের এক হকার পথ দেখিয়েছিলেন আবদুল ওয়াহেদের ছেলে রবিউলকে। গ্রামে গ্রামে পরিত্যক্ত চুলের বিনিময়ে চুড়ি-ফিতা বিক্রি করতেন ভুট্টো।
তার পরামর্শে ২০১৮ সালের এপ্রিলে একজন নারী শ্রমিক নিয়োগ করে পরিত্যক্ত চুল দিয়ে পণ্য তৈরির ব্যবসা শুরু করেন রবিউল।
এ উদ্যোক্তা জানান, শুরুতে ভুট্টোর কাছ থেকে দৈনিক ৪০০ গ্রাম চুল নিতেন। এভাবে ১০ কেজি চুল কিনে ফেলেন। প্রতি কেজি সাত হাজার টাকা দরে কিনলেও তা বিক্রি করেন পাঁচ হাজার টাকায়।
তিনি আরও জানান, শুরুতেই হোঁচট খাওয়ার পর ভুট্টোর কাছ থেকে আরও ২০০ কেজি চুল কেনেন। সেসব চুল সাড়ে সাত হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি করার পরও লোকসান হয়।
ঘুরে দাঁড়ানো
রবিউল জানান, ফেরিওয়ালা ভুট্টো তাকে হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দেন। ২০১৯ সালের শেষের দিকে টানা ১০ দিন বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ করে প্রতিদিন ১০ কেজি করে চুল কেনা শুরু করেন। এরপর গাজীপুর থেকে দুই নারী প্রশিক্ষককে নিয়ে আসেন দিনাজপুরে।
গ্রামের ১০০ নারীকে ৫ দিন করে প্রশিক্ষণ দেন ওই দুই নারী। প্রশিক্ষণ শেষে দৈনিক ৮০ টাকা হাজিরায় কাজ শুরু করেন গ্রামের নারীরা। তারা চুলগুলো ডিজারজেন্ট, শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করতেন।
পরিচ্ছন্ন চুলগুরো পরে রাজধানীর উত্তরার ৮ নম্বর সেক্টরের ফায়দাবাদে নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে বিক্রি হতো।
এ উদ্যোক্তা জানান, ১১ লাখ টাকার চুল বিক্রি হয় ৮ লাখ ৫ হাজারে। পরিবার থেকে বাধা আসে এ ব্যবসায় না জড়াতে।
ওই সময় চুল কেনা বন্ধ করে লোকসানের কারণ খোঁজেন রবিউল। কারণ পেয়েও যান। তার ধারণা, সরবরাহকৃত টুপির গুণগত মান ও পরিকল্পনার অভাবে লোকসান গুনতে হয়েছে।
পরে চুল সাইজ করার সময় ছোট, মাঝারি ও লম্বা—এই তিন ভাগে ভাগ করে তা বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি রবিউলকে।
চীনের কাজ পান যেভাবে
উত্তরার ফায়দাবাদে চীনাদের তত্ত্বাবধানে পরচুলা বানান নারীরা। দিনাজপুরের রানীপুরে পরচুলা তৈরির কারখানার খবর দেয়া হয় চীনা ব্যবসায়ীদের। সে খবর পেয়ে দিনাজপুরে যান লিও নামের এক চীনা ব্যবসায়ী।
লিও কারখানা ঘুরে ৪০টি ক্যাপের অর্ডার দেন। এ জন্য মূল্য ধরেন ৮০ হাজার টাকা। প্রথম মাসেই ৫০টি ক্যাপ সরবরাহ করা হয় তাকে।
রবিউল জানান, কাজের গুণগত মান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা দেখে দারুণ খুশি হন লিও। পরের মাসে কয়েক গুণ বেশি অর্ডার পান। সে অর্ডারের পণ্য তৈরিতে দিনে ৪০ থেকে ১৮০ জন নারী শ্রমিককে কাজে লাগান।
তিনি আরও জানান, নারী শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে মাসে ৫৪০টি ক্যাপ লিওকে সরবরাহ করেন। এতে লিও খুশি হয়ে টুপি তৈরির সব উপকরণ (নেট, হেড, ক্লার্ম ও আর্থিক সাপোর্ট) দিয়ে শতভাগ মাল নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চুক্তি করেন। শ্রমিক আরও বেশি নেয়ারও পরামর্শ দেন। এরপর একসঙ্গে ৫৫০ জনকে কাজে লাগানো হয়।
এ উদ্যোক্তা জানান, চীনারা নিজ উদ্যোগে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। দেশটির প্রশিক্ষক গ হা হাও এসে শ্রকিদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতেন। হাও এ বিষয়ে ব্রাজিল ও কোরিয়ায় বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন।
একজন থেকে ৩ হাজার কর্মী যেভাবে
রবিউল জানান, চীন থেকে আসা ব্যবসায়ীরা পণ্যের মান দেখে বিভিন্ন এলাকায় এই কারখানা করার পরামর্শ দেন। এরপর রংপুরের পীরগঞ্জে ১ হাজার ২০০ শ্রমিক দিয়ে কারখানা শুরু হয়। এভাবে নীলফামারীর সৈয়দপুর, দিনাজপুরের দশমাইল, চিরির বন্দর, টেক্সটাইল এলাকা, রামডুবি, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ৬৫টি কারখানা স্থাপন করা হয়।
তিনি আরও জানান, একজনকে দিয়ে শুরু হওয়া কারখানায় বর্তমানে তিন হাজার নারী কর্মী রয়েছেন।
রয়েল ট্রেডিং করপোরেশনের কর্ণধারের ভাষ্য, প্রশিক্ষিত শ্রমিকরা কাজ শুরু করলে ন্যায্যমূল্য দেয়া শুরু করেন বায়াররা। শুরুতে ৪ বাই ১৩ সাইজের ক্যাপ তৈরি হয়। প্রতিটির দাম ধরা হয় ১ হাজার টাকা। এভাবে বিভিন্ন সাইজের টুপি তৈরি করা শুরু হয়।
চুল সংগ্রহ-প্রক্রিয়াজাতকরণ
দেশের বিভিন্ন গ্রাম ও শহরের মেয়েরা মাথা আচড়ানোর সময় ঝরে পড়া চুল জমা করে রাখেন। তাদের কাছ থেকে এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকাররা চুল সংগ্রহ করেন। প্রতি কেজি চুল দুই থেকে চার হাজার টাকা দরে কেনা হয়। এরপর প্রক্রিয়াজাত করে চুল গ্রেড অনুসারে প্রতি কেজি সাত থেকে ১৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
উদ্যোক্তা রবিউল জানান, মূলত ভারত থেকে বেশি আমদানি করা হয় এই কাঁচামাল। সেখানে দামও কম, মানও ভালো।
তিনি আরও জানান, ভ্রাম্যমাণ হকারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এবং ভারত থেকে আমদানি করা চুল প্রথমে গুটি করা হয়। পরে সেই চুলের এক মাথা বের করা হয়। এরপর টু বাই টু (আলাদা) করা হয়। পরবর্তী পর্যায়ে ডিটারজেন্ট, হ্যান্ড ওয়াশ, শ্যাম্পু দিয়ে ওয়াশ করা হয়। এরপর বিভিন্ন পরিমাণের বান্ডিল ও ক্যাপ তৈরি হয়।
ক্যাপ তৈরির উপকরণ, আকার ও দাম
নারী শ্রমিক আয়েশা আক্তাসহ সংশ্লিষ্টরা জানান, ক্যাপ তৈরিতে লাগে মাথার ডামি, চুল, নেট, সুচ, চক ও পিন। এগুলো দিয়ে খুব নিখুঁতভাবে কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক মনোযোগের প্রয়োজন হয়। তা ছাড়া তেমন কোনো কাজ নেই।
মূলত ১০ আইটেমে পরচুলার টুপি তৈরি করা হয়। এর মধ্যে চার বাই চার, পাঁচ বাই পাঁচ, ছয় বাই ছয়, চার বাই ১৩, ছয় বাই ১৩, চার বাই ১৩, ৩৬০ ডিগ্রি, টি সাইজ ও ক্লিপ সাইজ এবং ছেলেদের টুপি। ৬ ইঞ্চি চার বাই চারের দাম এক হাজার, পাঁচ বাই পাঁচ ১ হাজার ২০০ টাকা, চার বাই তেরোর দাম ২ হাজার, ৩৬০ ডিগ্রি ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
রবিউল ইসলাম জানান, বর্তমানে ৬৫টি কারখানা চালু আছে তার। বর্তমানে প্রতি মাসে তিন টন চুল লাগছে।
তার দাবি, এই তিন টন থেকে টুপি প্রস্তুত পর্যন্ত দেড় টনের একটু বেশি টেকে। বাকিগুলো নষ্ট হয়ে ব্যবহারের উপযোগী থাকে না।
কী বলছেন দিনবদলের কারিগররা
গত বুধবার রবিউলের বিভিন্ন কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কারখানায় চুল দিয়ে নিপুণ হাতে কাজ করছেন নারীরা। প্রতিটি টেবিলে স্ক্রুর সাহায্যে আটকানো আছে প্লাস্টিকের ডামি মাথা। আর ডামি মাথার ওপর একটি নেট বা জাল।
এ জালের ফাঁকে ফাঁকে সুচের ফোঁড়ে ফোঁড়ে খুব মনোযোগ দিয়ে একটি একটি করে চুল আটকানো হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে একই দৃষ্টিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন নারীরা।
ডামি পুরো মাথায় সূক্ষ্মভাবে চুল আটকানো সম্ভব হলেই ক্যাপ তৈরির কাজ শেষ।
কর্মীরা জানান, এ কাজ করে প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করছেন তারা। হেয়ার ক্যাপ তৈরির আগে দুই থেকে তিন দিন সবাইকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
রয়েল ট্রেডিং করপোরেশনের প্রশিক্ষক প্রমিলা রানী বলেন, ‘আমি ওদের ট্রেইনার হিসেবে কাজ করছি। যথেষ্ট পরিশ্রম করে কাজ শেখানো হয়েছে। প্রথমে ওদের কাছে রেগুলারলি গেছি। আমরা চেষ্টা করেছি ভালোভাবে কাজ শিখিয়েছি।
‘কাজ শেখার পর সুই, চুল দেয়া হয়েছে। ওরা এখন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় করতেছে। বর্তমানে আমার অধীনে ১০০ নারী এ কাজ করছেন।’
একটি কারখানার কর্মী শাহিনুর বেগম বলেন, ‘আমার বাড়ি রানীর বন্দর এলাকায়; স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। আমার দুই মেয়ে, এক ছেলে আছে। প্রতি মাসে কাজ করে স্যালারি ১২-১৩ হাজার টাকা আয় হয়। সকাল ৮টায় আসি পাঁচটায় যাই। এর মধ্যে বাড়ি যেতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘এই টাকা দিয়ে সংসারের হাল ধরতে পারি; ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ জোগাতে পারি। সংসারে আর অভাব নাই।’
নিজের পায়ে দাঁড়ানোর গল্প শোনান সেলিনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছি এখানে। বাসা কাছে হওয়ায় আসা যাওয়ার সমস্যা নাই। ঢাকায় গেলে ঘর ভাড়া দিতে হয়। এখানে তো সেটা নাই।
‘কোনো মাসে ১১ হাজার, কোনো মাসে ১২ হাজার টাকা বাসায় থেকে আয় করা যাচ্ছে। বড় সুবিধা হচ্ছে বাসায় থেকে বড় অঙ্কের আয় করা, ছেলেকে বাসায় নিরাপদে রেখে আসা যায়; খোঁজখবর নেয়া যায়। আমি নিজেই স্বাবলম্বী।’
আফরিক আক্তার বলেন, ‘আগে বাড়িতে বসে থাকতাম। পরে খবর আসল এই কোম্পানি আসছে, ট্রেনিং দিতেছে। আমি ভোটার আইডি কার্ড জমা দিয়ে ৫ দিনের ট্রেনিং নিই। এখন স্বামীর পাশাপাশি আমার টাকাও সংসারে কাজে লাগতেছে।’
সম্ভাবনা
রয়েল ট্রেডিং করপোরেশনের মালিক জানান, পরচুলার এই ক্যাপ চীন ছাড়াও ব্রাজিল, আফ্রিকা, উগান্ডা, ফিলিপাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যে চাহিদা বাড়ছে। এইসব দেশের ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন কারখানা ঘুরে গেছেন। সর্বশেষ ১০ এপ্রিল এসেছেন আফ্রিকা, চীন ও ফিলিপাইন থেকে। তারা কাজের গুণগত মান দেখে খুশি হয়েছেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ব্রাজিল ও আফ্রিকা থেকে বায়াররা এসে অর্ডার কনফার্ম করেছেন।
বাকি শুধু বেল্ট লাগানো
রবিউল ইসলাম জানান, একটি ক্যাপ বা টুপি তৈরি করতে চারটি ধাপ পার হতে হয়। প্রথমে গুটি থেকে চুল সরাতে হয়। এরপর তা সাইজ অনুযায়ী ভাগ ভাগ করা হয়। সেই সাইজ অনুযায়ী হেড দিয়ে নেটিং করা হয়, যেটি ৬৫টি কারখানায় করা হয়।
এই তিন ভাগ কাজ শেষের টুপিগুলো বায়াররা নিয়ে সেখানে শুধু বেল্ট লাগিয়ে তারা টুপির পূর্ণরূপ দিচ্ছেন।
এই একটি কাজ করতে পারলে সম্পূর্ণ পণ্য দিতে পারবেন রবিউল। সেটিও করার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।
বড় চ্যালেঞ্জ যেখানে
পরচুলার উদ্যোক্তা ও এর সঙ্গে যুক্তরা জানিয়েছেন, পরচুলার টুপি বা ক্যাপের আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। সেই বাজার ধরার চেষ্টা চলছে।
তারা জানান, এখন চীনসহ বিভিন্ন দেশের মধ্যস্বত্বভোগীরা এসে এসব ক্যাপ কিনে নিয়ে ব্রাজিল, আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে অনেক গুণ বেশি দামে বিক্রি করছে, কিন্তু সরাসরি ওই দেশগুলোতে বিক্রি এবং বায়ার ধরতে গেলে নিজস্ব সিল, দেশ, মোড়কসহ ব্র্যান্ড প্রয়োজন।
রয়েল ট্রেডিং করপোরেশনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনসালট্যান্ট মোখলেছুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে যেটা কাজ হচ্ছে, সেটা হলো বিদেশ থেকে আসা মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে। আমরা সরাসরি বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। আমরা চেষ্টা করছি সরাসরি বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। যেভাবে অনেক বছরের পরিশ্রম সাধনার পর আমাদের গার্মেন্টসে সফলতা এসেছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা যে টেকনোলজিটা ইউজ করছে, আমরা যখন সেটা জেনে যাচ্ছি। ফলে সেই মেশিনটি আনার চেষ্টা করছি। ওই মেশিনগুলো আনতে পারলে এবং বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলেই আমরা সফল।’
রবিউলদের চাওয়া
উদ্যোক্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি খুব চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই ইন্ডাস্ট্রি করেছি এবং করছি। এটা ওয়েস্টেজ প্রোডাক্ট (ফেলনা সামগ্রী থেকে তৈরি পণ্য)। এই প্রোডাক্ট বাংলাদেশে কোনো কাজেই ব্যবহৃত হয় না। সেখানে থেকে একটি গুড প্রোডাক্ট তৈরি করছি। শতভাগ এক্সপোর্ট কোয়ালিটি।
‘আমরা বিভিন্ন মহলে আলোচনা করেছি। গার্মেন্টস সেকশনের পরেই আন্তর্জাতিক বাজারে এই প্রোডাক্টের চাহিদা রয়েছে। বছরে বিশ্বে ৮০ বিলিয়ন (৮ হাজার কোটি) ডলারের চাহিদা রয়েছে, যেটার ৬০ বিলিয়ন ডলার শুধু চায়নিজরা দখল করে আছে। চায়নিজদের দাবি, বাংলাদেশে অনেক শ্রমিক আছে। এরপরেও বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার মার্কেটিং হয় না।’
তিনি বলেন, ‘এর মার্কেট হচ্ছে আমেরিকা, ব্রাজিল, কানাডা, ডেনমার্ক, আফ্রিকাসহ উন্নত বিশ্বে। আমরা এই মার্কেট ধরতে পারছি না। কারণ, গুড আইটেম করতে একটি মেশিন প্রয়োজন। সেই মেশিন আনার সহযোগিতা এবং স্বল্প সুদে ঋণ পেলে দেশের সস্তা শ্রমিক দিয়ে গুড কোয়ালিটি পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমি এলাকার নারীদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য গ্রামে গ্রামে মাইকিং করে তাদের কাজে নিয়ে এসেছি। নিজ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এখন ৩ হাজার উইমেন ওয়ার্কার্স আমার এখানে কাজ করছেন।’
রয়েল ট্রেডিং করপোরেশনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল কনসালট্যান্ট মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘অলরেডি পরচুলা তৈরি করা এই ইন্ডাস্ট্রি সরকারের সুনজরে চলে এসেছে। কারণ এটা খুবই পরিবেশবান্ধব। বিদ্যুৎ কিংবা সোলার ছাড়া অন্য কিছুর প্রয়োজন নেই। এটার কোনো ওয়েস্টেজ (বর্জ্য) নেই। এতে পরিবেশের ওপর ভালো ইম্প্যাক্ট পড়তেছে।
‘এই চুলগুলো মানুষ ফেলে দিত। আমরা সেগুলো সংগ্রহ করে পণ্যতে রূপান্তর করে সেগুলো এক্সপোর্ট করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছি। সরকার অরেকটু সুনজর দিলে আমরা সরাসরি এক্সপোর্ট করতে পারব।’
সরকার যদি এগুলোকে ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে সুনজর দেয়, ব্যাংকগুলো স্বল্প সুদে ঋণ দেয়, তাহলে আমরা এই ইন্ডাস্ট্রি খুব সহজে পূর্ণাঙ্গ ইন্ডাস্ট্রিতে রূপ দিতে পারব।’
এগিয়ে এসেছে সোনালী ব্যাংক
সোনালী ব্যাংক রংপুর অফিসের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. রাশিদুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফেলে দেয়া জিনিসগুলো তিনি কালেক্ট করে যে পণ্য তৈরি করেছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। কারণ তিনি তিন হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। এটাকে শতভাগে বিদেশে এক্সপোর্ট করে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসতেছেন। সেই জায়গাটা চিন্তা করে আমরা এগিয়ে এসেছি।
‘আমরা ইতোমধ্যে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে অর্থনৈতিকভাবে পাশে দাঁড়িয়েছি। আমরা ওনার পাশে থেকে এই শিল্পটাকে বৈদেশিক মুদ্রা কীভাবে আরও অর্জন করা যায়, সে বিষয়ে সহযোগিতা করব।’
‘রপ্তানিতে সম্ভাবনার দুয়ার’
রংপুর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মানুষের মাথার চুল বড় হলে কেটে ফেলা হয়। এই চুল আগে আবর্জনার আকারে ফেলে দেয়া হতো। এখন সেই চুল রপ্তানিতে সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে। দিন দিন বিদেশের বাজারে চুলের চাহিদাও বাড়ছে।
‘মানুষের কেটে ফেলা চুল দিয়েই এই শিল্পের প্রসার ঘটেছে। স্বল্প সুদে ঋণ দিলে ব্যবসায়ীরা আরও এগিয়ে যাবে। সহজে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবসা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হবে। বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন হবে। আমরা চাই সরকার এবং ব্যাংকগুলো এই খাতে এগিয়ে আসুক।’