সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সয়াবিন তেলের দাম বাড়ছে না; আগের মতো ১১০ টাকা লিটারেই ১৬ মে থেকে বিক্রি হবে অতি প্রয়োজনীয় বোতলজাত এ পণ্যটি।
বাজারে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকা দরে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে এ দর ঠিক করে দিয়েছেন। আগের মতোই একজন কিনতে পারবেন সর্বোচ্চ ২ লিটার সয়াবিন তেল।
সয়াবিন ছাড়া ৫৫ টাকা কেজি দরে চিনি, ৬৫ টাকা কেজি দরে মশুর ডাল এবং রমজান মাসের অবশিষ্ট ছোলা ৫০ টাকা দরে বিক্রি করবে টিসিবি।
এ বিষয়ে বুধবার রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে টিসিবি। এতে বলা হয়, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে সাশ্রয়ী ও ভর্তুকিতে পণ্য বিক্রি করা হবে। দেশের সব মহানগরী/জেলা/উপজেলায় ২৫০-৩০০টি খোলা ট্রাকের মাধ্যমে ১৬-৩০ মে পর্যন্ত বিক্রি চলবে।
ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল, এবং দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারবেন। রমজানের অবশিষ্ট ছোলা ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করা হবে।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়লেও আমাদের ট্রাক থেকে যে তেল বিক্রি হবে, তা আগের মতোই ১১০ টাকায় বিক্রি হবে। তবে কেউ দুই লিটারের বেশি কিনতে পারবেন না।’
বেশ কিছুদিন ধরে ভোজ্যতেলের দাম চড়া। আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীরা দর বাড়িয়ে যাচ্ছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী কয়েক দফায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে দাম ঠিক করে দিলেও, তা মানা হচ্ছে না।
রোজার ঈদের আগে হঠাৎ করে বাজারে ভোজ্যতেলের তীব্র সংকট দেখা দেয়। ঈদের আগের রাতেও অনেক ক্রেতা বাজারে গিয়ে তেল না পেয়ে ফিরে আসেন। এ নিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৫ মে বৈঠক করে আরেক দফায় দাম বাড়ানো হয় সয়াবিন ও পাম অয়েলের। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন ১৯৮ টাকা এবং পাম সুপার ১৭২ টাকা নির্ধারণ করেন মিল মালিকরা।
এরপরও কাটেনি সংকট। দোকানে তেল না থাকার জন্য খুচরা বিক্রেতা, ডিলার এবং মিল মালিকরা দুষছে একে অপরকে।
‘তেল কোথায় গেল’-এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে তৎপর হয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানে বেরিয়ে আসে ডিলার ও খুচরা দোকানিরা গুদাম ও বিভিন্ন গোপনস্থানে বিপুল তেল মজুত রেখেছে। ঢাকাসহ সারা দেশেই একই চিত্র।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ৭ মে থেকে অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে মজুত রাখা লাখ লাখ লিটার তেল জব্দ করে ভোক্তা অধিকার। অভিযানে যুক্ত আছে, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
অবৈধভাবে মজুতের প্রমাণ পেলে, করা হচ্ছে জেল-জরিমানা। তাদের কাছ থেকে জব্দ হওয়া তেল আগের দামে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি ভোক্তা অধিকার।
গত কয়েক বছরে যেসব ভোগ্যপণ্যের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তার মধ্যে অন্যতম ভোজ্যতেল। টিসিবি’র তথ্য বলছে, বাজারে ২০১৯ সালে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ১০৪ টাকা। ২০২০ সালে সেটি হয় ১১৩ টাকা, ২০২১ সালে ১৩০ এবং ২০২২ সালের শুরুতে এসে হয় ১৬৮ থেকে ১৭০ টাকা; এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকায়।
পামওয়েলের লিটার (খোলা) ২০১৯ সালে ছিল ৫৮ টাকা, ২০২০ সালে ৭৮ টাকা, ২০২১ সালে ১০৭ টাকা এবং ২০২২ সালের শুরুতে হয় ১৫০ টাকা; এখন ১৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।