বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

১০০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির হাতছানি

  •    
  • ১১ মে, ২০২২ ২০:৩২

এইচঅ্যান্ডএমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার আঞ্চলিক প্রধান জিয়াউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সোর্সিং কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। মোট কেনাকাটার ১১ শতাংশ এখন বাংলাদেশ থেকে হয়। সামনের দিনগুলোয় এ কেনাকাটা আরও বাড়বে।’

করোনা মহামারির ধাক্কা থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প বৈশ্বিক ক্রেতাদের প্রধান ‘সোর্সিং হাবে’ পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন সুইডিশ ফ্যাশন ব্র্যান্ড এইচঅ্যান্ডএমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার আঞ্চলিক প্রধান জিয়াউর রহমান।

বাংলাদেশকে নিয়ে আশার কথা শুনিয়ে তিনি নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের ৩০০ পোশাক কারখানা থেকে এইচঅ্যান্ডএম সরাসরি পণ্য কেনে। কর্মপরিবেশের উন্নতি, পণ্যের বৈচিত্র্যকরণ ও উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদনের যে কৌশল বাংলাদেশের শিল্পমালিকরা নিয়েছেন, তাতে আগামী ১০ বছরে এই দেশ থেকে ১০০ বিলিয়ন (১০ হাজার কোটি) ডলার রপ্তানি খুবই সম্ভব।’

শুধু জিয়াউর রহমান নন, বুধবার ঢাকার বসুন্ধরা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পোশাক শিল্পবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরাম’-এ অংশ নেওয়া আরও কয়েকজন ক্রেতা, বিদেশি বিনিয়োগকারী ও পণ্য সরবরাহকারীরা বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক নিয়ে এমন সুখবর দিয়েছেন।

বিশ্বের ৩৯টি দেশের ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ, ক্রেতা, প্রযুক্তি সহায়তা প্রতিষ্ঠান এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। ৩০টি স্থানীয় কোম্পানিসহ বিভিন্ন দেশের ৮৫টি কোম্পানি এই প্রদর্শনীতে রয়েছে।

জিয়াউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন আমদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সোর্সিং কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। মোট কেনাকাটার ১১ শতাংশ এখন বাংলাদেশ থেকে হয়। সামনের দিনগুলোয় এই কেনাকাটা হয়তো আরও বাড়বে। এখন পোশাকের বিশ্বে আমাদের অবস্থা বেশ ভালো। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, এখানে অনেকগুলো গ্রিন কারখানা বা পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘একজন ক্রেতা এসে এখন কারখানার মান ও কর্মপরিবেশ নিয়ে হুটহাট মন্তব্য করতে পারেন না। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ইতিহাস এখন একটা পরিণত বয়সে চলে এসেছে। এখন এমন কোনো পণ্য নেই, যেটা বাংলাদেশ তৈরি করতে পারে না। এসব কারণে বিশ্বের ক্রেতারা এই বাজারের দিকে নজর দিচ্ছেন।

‘এ ছাড়া চলমান মহামারি পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন পোশাক উৎপাদনকারী দেশ নাকাল হলেও বাংলাদেশ সরকারি উদ্যোগ ও বিনিয়োগকারীদের প্রচেষ্টায় বেশ সুন্দরভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ৬৭ লাখ (৩১.৪৫ বিলিয়ন) ডলার পোশাক রপ্তানি হয়েছিল; যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১০ মাসেই (জুলাই-এপ্রিল) পোশাক রপ্তানি থেকে ৩৫ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলার বিদেশি মুদ্রা দেশে এনেছেন এ খাতের রপ্তানিকারকরা। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এই আয় ৩৬ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের ইতিহাসে পোশাক রপ্তানিতে এমন উল্লম্ফন আগে কখনই দেখা যায়নি।

এই রমরমা অবস্থার মধ্যেই দুই বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে পোশাক শিল্পবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরাম’। একই সঙ্গে চলছে ডেনিম কাপড় ও পোশাকের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’। মঙ্গলবার শুরু হয়েছে এই প্রদর্শনী। বুধবার শেষ হবে।

করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর আবার বসেছে ডেনিমের আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনী।

পোশাকের আরেক ব্র্যান্ড জি-স্টারের আঞ্চলিক কর্মকর্তা শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমদারে প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে চলতি বছরে ৭০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য কেনাকাটা করেছে, যার ৭৫ শতাংশই হচ্ছে নিটপণ্য। তবে সম্প্রতি তার কোম্পানি নিটপণ্যের বাইরে ডেনিমসহ বিভিন্ন রকম উচ্চমূল্যের ওভেন পণ্যও কেনা শুরু করেছে।

‘প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে আমাদের কেনাকাটায় ৩০ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে বার্ষিক ৯০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য কেনার আশা করছি আমরা।’

প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া ইতালিয়ান পোশাক শিল্পসংক্রান্ত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘তনেলো’র মালিক আলিচে তোনেলো বলেন, ২৮ বছর ধরে তার কোম্পানি বাংলাদেশে মেশিনারিজ সরবরাহ করে যাচ্ছে। প্রায় ১ হাজার ৫০০ পোশাক কারখানায় তাদের টেক্সটাইল, পোশাক ও ওয়াশিং মেশিনারিজ রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের জন্য এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাজার। প্রতি বছরই বাংলাদেশে আমাদের বিভিন্ন মেশিনারিজের চাহিদা বাড়ছে। আগামী দিনে এখানে পোশাক খাত আরও সম্প্রসারিত হবে বলেই আমরা মনে করছি।”

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে আগামী দুই বছরের মধ্যেই এখানে কারখানা স্থাপনের জন্য স্থানীয় সহযোগী খুঁজছে তুর্কি কোম্পানি বোস।

এই কোম্পানির বাংলাদেশের আঞ্চলিক সেলস ম্যানেজার ইলমিজ দেমির বলেন, ‘১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোকে আমরা ডেনিম ফেব্রিক্স সরবরাহ করছি। প্রতি বছর ১০ লাখ ইয়ার্ড ডেনিম বিক্রি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর ইউরোপের বাজারে জিএসপি সুবিধার ক্ষেত্রে ভ্যালুয়েশন একটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে। তাই আমরা এখানে কারখানা স্থাপনের জন্য বিশ্বস্ত স্থানীয় অংশীদার খুঁজছি।’

প্রদর্শনীর বিভিন্ন পর্বে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি, বাংলাদেশে নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যান ফন লিউয়েন, নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়াজ হামিদুল্লাহ, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ইউরোপীয় কমিশনের সামাজিক অর্থনীতি ও সৃজনশীল শিল্প ইউনিটের প্রধান আন্না আথানাসোপোলু, ওইসিডির দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণের বিষয়ে আর্থিক খাত অ্যান্ড রেগুলেটরি এনগেজমেন্ট লিড সেন্টারের বারবারা বিজেলিক, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্ল্যাটফর্ম শেপিং দ্য ফিউচার অফ অ্যাডভান্সড ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড ভ্যালু চেইনসের কমিউনিটি কিউরেটর ইয়ান ক্রোনিন, ইউএনএফসিসিসির সেক্টরস এনগেজমেন্ট লিড লিন্ডিটা জাফেরি সালিহু, এইচঅ্যান্ডএমের সাসটেইনিবিলিটি প্রধান প্যাসকাল ব্রুন, ইনডিটেক্সের বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের আঞ্চলিক প্রধান জেভিয়ার সানতোনজা ওলসিনা বক্তব্য রাখেন।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর গ্লোবাল ওয়ার্কার্স রাইটসের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. মার্ক অ্যানার, রিমেকের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও আয়েশা বারেনব্লাট, বেটার বায়িংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট রিসার্চ নাজেট ড্রেপার, গুড ফ্যাশন ফান্ডের টিম লিড ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টমেন্ট জেমা ভারহোভেন, ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশনের হেড অফ সাপ্লাই চেইন টান্সফরমেশন অ্যানাবেল মেয়ার্স এবং আইএল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিআইনেন অংশ নেন।

প্রদর্শনী আয়োজকদের প্রধান ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশে পোশাকশিল্পের টেকসই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বেগবান করতে এ বছরে আমরা সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরামের (এসএএফ) সম্মেলনে সব ফ্যাশন স্টেকহোল্ডারকে একই ছাদের নিচে এনেছি। বিশেষ করে কোভিড-১৯ মহামারির পর এনেছি, যে মহামারিটি বৈশ্বিক পোশাক সরবরাহ চেইনে গভীর প্রভাব ফেলেছে।’

‘এ ফোরামটি একটি উচ্চপর্যায়ের আলোচনার প্ল্যাটফর্ম, যেখানে টেকসই বিষয়ে আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যগুলো কীভাবে অর্থপূর্ণভাবে, বাস্তবসম্মত প্রক্রিয়ায় অর্জন করা যেতে পারে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাকশিল্প, বিশেষ করে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তাবিষয়ক বিধিনিষেধগুলো মেনে চলা ও নিশ্চিতকরণের বিষয়ে সদা সতর্ক হয়েছে। এখন আরও নৈতিকতাপূর্ণ ও টেকসই শিল্প নিশ্চিত করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।”

নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত অ্যান ফন লিউয়েন বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে নিরাপত্তা ও টেকসই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তার পরও শিল্পকে টেকসই করার জন্য আরও করণীয় রয়েছে, যেখানে স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ততা আর সহযোগিতাই হচ্ছে মূল বিষয়।’

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলো শুধু নিরাপদই নয়, বরং সেগুলো আরও গতিশীল, আধুনিক, জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ এখন সর্বোচ্চসংখ্যক সবুজ কারখানার আবাসস্থল।

‘আমরা বিশ্বাস করি যে টেকসই উন্নয়ন কোনো স্প্রিন্ট নয়, এটি একটি ম্যারাথন। আমরা শিল্পে সামাজিক ও পরিবেশগত ক্ষেত্রে যে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছি, তা বজায় রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পাশাপাশি আমরা ব্যবসায় সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরও নজর দিয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর