ভোজ্যতেল ইস্যুতে বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানের বিরুদ্ধে চরম আপত্তি তুলেছেন পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা।
তার দাবি, ব্যবসা করতে গেলে পণ্যের মজুত থাকতে হবে। অথচ দোকানে দোকানে অভিযান চালিয়ে কিছু তেল পাওয়া গেলেই ব্যবসায়ীদের ‘অপদস্ত করা হচ্ছে’।
ভোজ্যতেলের আমদানি, মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বুধবার এফবিসিসিআই আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানান তিনি। তবে ওই সভাতেই কয়েক ব্যবসায়ী নেতা বলেছেন, কারও বিরুদ্ধে অনিয়মের প্রমাণ মিললে ব্যবস্থা নেয়ায় তাদের আপত্তি নেই।
রাজধানীর মতিঝিলে সংগঠনের কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
সচিবালয়ে গত ৯ মে সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে সভায় আলোচনা হয়। সভার শুরুতে এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে তিনি ভুল করেছেন। ডিলার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভোজ্যতেলে কারসাজি করেছেন। ব্যবসায়ীরা তেল মজুত করেছেন। এতে বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে।
‘ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন হিসেবে এফবিসিসিআই মনে করে মন্ত্রীর এই মন্তব্যে ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সংবাদমাধ্যম ও টেলিভিশনে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দোকান ও গোডাউন থেকে ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এর জন্য এফবিসিসিআইকে কথা শুনতে হচ্ছে।’
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের বক্তব্য জানতে চান তিনি।
এ সময় বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, ‘ভোজ্যতেল এখন একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে করণীয় কেউ বলছেন না। লাগাতার খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপর অভিযোগ চাপানো হচ্ছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘দোকানে যদি মাল মজুত না থাকে তাহলে ব্যবসা করব কীভাবে? রমজানের আগে বাজারে ঘাটতি দূর করতে ব্যবসায়ীরা দোকানে মাল মজুত করেছেন। অথচ এ জন্য ব্যবসায়ীদের নাজেহাল করা হচ্ছে।’
তিনি দাবি করেন, ‘জোরজবরদস্তি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এভাবে চাপ দিলে ঘাটতি আরও বাড়বে।’
ভোজ্যতেলের বাজার স্বাভাবিক রাখতে মিল মালিকদের প্রতিশ্রুতি রক্ষার আহ্বান জানান তিনি। গোলাম মাওলা বলেন, ‘মিল মালিকরা সাপ্লাই স্বাভাবিক রাখলে মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের আর অপদস্থ হতে হবে না।’
রাজশাহীর এক ব্যবসায়ীর গুদামে ভোজ্যতেলের বড় মজুত ধরা পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজশাহীর ওই ব্যবসায়ী কালোবাজারি করেননি। তিনি বিক্রির উদ্দেশ্যে মাল মজুত করেছেন। তার ওপর যেভাবে অত্যাচার হয়েছে সেটি ঠিক হয়নি।’
তবে কিছু ব্যবসায়ী উদ্দেশ্যমূলকভাবে পণ্য মজুত করেছেন বলে স্বীকার করেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি জহিরুল হক ভূইয়া। তিনি বলেন, ‘সংগঠনের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছিল। তারপরও আমরা দেখতে পেলাম কিছু কিছু ব্যবসায়ী কিছু পরিমাণ পণ্য স্টক করেছেন। আমরা মনে করি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
নিউ মার্কেটের দক্ষিণ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের বলেন, ‘সবাই মাল স্টক করেননি। কেউ কেউ করেছেন। তবে এর জন্য পুরো ব্যবসায়ী সমাজকে অপদস্থ হতে হচ্ছে। এ ধরনের মজুত যারা করেন তারা রাষ্ট্রের শত্রু, সমাজের শত্রু এবং সরকারের জন্য ক্ষতিকর। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে সমিতি কোনো আপত্তি তুলবে না।’