ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটার মচ্ছবে সিন্ডিকেটের কেউই পিছিয়ে নেই। আমদানিকারক, মিল মালিক, পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতার সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিতে তৎপর। এজন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী গোপনে ভোজ্যতেলের মজুত গড়ে তুলেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাজার নিয়ন্ত্রণে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। স্থানে স্থানে চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। মঙ্গলবার দেশের ৭ জেলায় অভিযান চালিয়ে মজুত করে রাখা ১ লাখ ৬৫ হাজার লিটার ভোজ্যতেল জব্দ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রাজশাহীতে ৯২ হাজার লিটার, কুষ্টিয়ায় ৪০ হাজার লিটার, পাবনায় ১৮ হাজার লিটার, সিলেট ৫ হাজার লিটার, গাজীপুরে ২ হাজার ৫৮ লিটার, সিরাজগঞ্জে ৬ হাজার লিটার এবং রংপুরে ৩শ’ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করে খোলাবাজারে বিক্রি করা হয়েছে। একইসঙ্গে মজুতদারির দায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে।
রাজশাহী
রাজশাহীতে অবৈধ মজুতের ২০ হাজার লিটার ভোজ্যতেল জব্দের এক দিন পর আরও ৯২ হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে। পরে তা খোলাবাজারে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়।
পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে মঙ্গলবার বিকেলে যৌথ অভিযানে ৪টি গুদাম থেকে এসব তেল জব্দ করে জেলা ও পুঠিয়া থানা পুলিশ।
রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই বাজারে বেলা ৩টার পর অভিযান শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত আমরা ৯২ হাজার লিটারের তথ্য নিশ্চিত হয়েছি। এসব তেলের মধ্যে বেশির ভাগই সয়াবিন। কিছু পাম অয়েলও রয়েছে।’
এর আগে সোমবার রাত ৮টার দিকে তাহেরপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাজারপাড়া গোডাউন মোড়ে অভিযান চালিয়ে একটি গুদাম থেকে ২০ হাজার লিটারের বেশি ভোজ্যতেল জব্দ করে পুলিশ। এ সময় গুদামের মালিক শহিদুল ইসলাম স্বপনকে আটক করা হয়।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়া শহরের বড় বাজার এলাকায় একটি গুদাম থেকে ১৯৯টি ব্যারেলে ৪০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। এতে গুদাম মালিককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মেসার্স মা ফুড প্রোডাক্টস নামের ওই প্রতিষ্ঠানের গুদাম থেকে মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে অবৈধ মজুতের এসব তেল জব্দ করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়।
কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুচন্দন মন্ডল অভিযান পরিচালনা করেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সয়াবিন তেলের মজুত ও দাম পর্যবেক্ষণ করতে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বড় বাজার এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানে মেসার্স মা ফুড প্রোডাক্টস নামের ওই প্রতিষ্ঠানের গুদামে ১৯৯টি ব্যারেলে ৪০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। তেল বিক্রি না করে মজুত রাখায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
এদিকে অভিযানে শহরের পৌর বাজারে বোতলের মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করায় দুই দোকানিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
পাবনা
ঈশ্বরদী বাজারের একটি স্টোরে অভিযান চালিয়ে ১৮ হাজার লিটারের বেশি ভোজ্যতেল জব্দ করার কথা জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
শহরের নূরমহল্লা মাতৃমন্দিরের সামনে শ্যামল স্টোরের গোডাউনে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে অভিযান চালানো হয়।
নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জহুরুল ইসলাম।
তিনি জানান, অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার লিটার খোলা (লুজ) সয়াবিন তেল, ১ হাজার ২৪৪ লিটার বোতলজাত তেল ও ৭ হাজার লিটার সরিষার তেল জব্দ করা হয়েছে। ঈদের আগে এসব তেল সংগ্রহ করে নিজের গুদামে অবৈধভাবে মজুত করেছিলেন শ্যামল স্টোরের মালিক শ্যামল দত্ত পাল। এ জন্য তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে কেনা দামে এসব তেল বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গাজীপুর
গাজীপুরে একটি দোকানের গুদাম থেকে অবৈধভাবে মজুতের দুই হাজার ৫৮ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। এতে গুদাম মালিককে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
মহানগরীর বোর্ডবাজার এলাকার মনির ট্রেডার্স নামে একটি দোকানের গুদামে অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এসব তেল জব্দ করা হয়।
সিলেটসিলেট নগরের বৃহৎ পাইকারি বাজার কালিঘাটের একটি গুদামে মজুত করা প্রায় ৬ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে এসব তেল জব্দ করেন ভোক্তা অধিপ্তরের কর্মকর্তারা। পরে এই তেল বাজার মূল্যে সাধারণের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়।
এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ফখরুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন সহকারী পরিচালক (মেট্রো) শ্যামল পুরকায়স্থ।শ্যামল পুরকায়স্থ বলেন, গোপন খবরের ভিত্তিতে কালিঘাটে মাহের ব্রাদার্স নামক দোকানের গুদামে মজুদ করে রাখা ৫ টন সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়।
সিরাজগঞ্জ
উল্লাপাড়ায় মজুত করে রাখা ৬ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় তেল জব্দ করার পাশাপাশি তিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে জব্দ তেল খোলাবাজারে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সিরাজগঞ্জের সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান রনি জানান, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে সয়াবিন তেল মজুদ রাখা হয়েছে এমন অভিযোগে মঙ্গলবার উল্লাপাড়া উপজেলার পাচলিয়া বাজারের সততা স্টোরে অভিযান চালানো হয়।
এ সময় মজুদকৃত অবস্থায় প্রায় ৫ হাজার লিটার খোলা সয়াবিন তেল ও প্রায় ১ হাজার লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। মজুতদারির দায়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ও খোলা বাজারে বোতলকৃত সয়াবিন তেল বিক্রি করা হয়।
একই বাজারের সাহা স্টোর ও সিয়াম স্টোরে সয়াবিন তেল মজুদ এবং তেলের সঙ্গে অন্যান্য পণ্য কিনতে ক্রেতাকে বাধ্য করার অভিযোগে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
রংপুর
রংপুরের মাহিগঞ্জের মোমেনা স্টোরে অভিযান চালিয়ে ৩০০ লিটার সয়াবিন জব্দ করেছে ভোক্তা অধিকার। পরে সেগুলো স্থানীয়দেন মধ্যে ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হয়।
তবে এই অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিক্রেতা। তার দাবি, তিনি পাইকারি ব্যবসায়ী। ৩০০ লিটার তেল থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ওই অভিযান চালানো হয়।
নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আরিফ মিয়া। তিনি বলেন, ‘এই সয়াবিন মজুত করে বেশি দামে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছিল।’
স্থানীয় প্রতিনিধি আহসান হাবীব অপু (রাজশাহী), জাহিদুজ্জামান (কুষ্টিয়া), দেবাশীষ দেবু (সিলেট), ইমরোজ খন্দকার বাপ্পি (পাবনা), ইফতেখার রায়হান (গাজীপুর), গোলাম মোস্তফা রুবেল (সিরাজগঞ্জ) ও রফিকুল ইসলামের (রংপুর) পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।