দাম বাড়িয়ে, জেলায় জেলায় অভিযান চালিয়েও কাজ হচ্ছে না। সয়াবিন তেলের বাজারের সরবরাহ কোনোভাবেই স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। খুচরা পর্যায়ে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ এখনও কম।
ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবস বৃহস্পতিবার বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারে ৩৮ টাকা আর খোলা তেল ৪৪ টাকা বাড়ানোর পরও ঈদের আগের মতোই তেল পাওয়া যাচ্ছিল না বাজারে।
তেলের সরবরাহকারী কোম্পানির পক্ষ থেকে পরে বলা হয়, ঈদের ছুটির কারণে সরবরাহ বন্ধ, সোমবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
সোমবার থেকে রাজধানীর দোকানগুলোতে তেলের সরবরাহ কিছুটা দেখা যেতে থাকে। তবে মঙ্গলবারও যত চাহিদা, তত তেলের দেখা মিলেনি।
শেওড়াপাড়ার আলিম স্টোরে তেল কিনতে আসা আকলিমা খাতুন বলেন, ‘গতকাল বাজার থাইক্যা ৩০ টাকার তেল কিনছি। দুই দিন রান্না করতে পারছি। আইজ তেল কিনতে আইস্যা দেখি তেল নাই।’
একই দোকানে তেল কিনতে এসেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঈদের আগে তেল কিনতে পারেননি। ঘরে থাকা তেল দিয়ে কোনো রকমে পার করেছি। সরিষার তেল কিছুটা ছিল। সেটাও শেষের পথে। আর সরিষার তেলের রান্না খেতে বাসার সদস্যরা অভ্যস্ত নয়। কিন্তু গত কয়েক দিন বাজারে সয়াবিন তেলের কোনো বোতল পাইনি। আজও না পেয়ে অগত্যা সরিষার তেলই নিলাম এক লিটার ৩০০ টাকায়।’
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল এবং মিরপুরের শেওড়াপাড়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, এখনও পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। তবে পাইকারি বাজারে সরবরাহ শুরু হয়েছে।
বাজারের সরবরাহ সংকট নিয়ে আগের দিন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সচিবালয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন মূলত ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের প্রতি। তিনি জানান, ব্যবসায়ীরা কথা দিয়েছিলেন তারা বাজারে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখবেন। তাদের কথা বিশ্বাস করে তারা ঠকেছেন। তবে এখন থেকে তিনি কঠোর হবেন।
এই হুঁশিয়ারি দেয়ার আগে থেকেই অবশ্য জেলায় জেলায় অভিযান চলছে। এসব অভিযানে বেরিয়ে এসেছে, বিপুলসংখ্যক খুচরা ব্যবসায়ী তেল বিক্রি না করে আরও বেশি দামে বেচার জন্য লুকিয়ে রেখেছেন।
রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারের চারটি গুদাম থেকে ৯২ হাজার লিটার তেল জব্দ করা হয়েছে
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অবৈধ মজুত ধরা পড়েছে রাজশাহীতে। জেলার পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারের চারটি গুদামে ৯২ হাজার লিটার তেল লুকিয়ে রাখার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কারওয়ান বাজারের মেঘনা অয়েলের ডিলার বিপ্লব চন্দ্র পাল জানান, দুই দিনে ২১ টন তেল সরবরাহ করা হয়। কিন্তু তা মুহূর্তেই শেষ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘আজ (মঙ্গলবার) রাতে তেল সরবরাহের কথা আছে। তবে, চাহিদার তুলনায় তা কম।’
কারওয়ান বাজারের পাইকারি মার্কেট এদিন বন্ধ। তবে খুচরা বিক্রি হয়-এমন দোকানগুলো খোলা। সেসব দোকানে চড়া দরে বিক্রি হচ্ছিল খোলা সয়াবিন তেল।
এক দোকানে খোলা সয়াবিন তেল ২১০ টাকা লিটারে বিক্রি করতে দেখা গেছে, যদিও সরকার সর্বোচ্চ দর ঠিক করে দিয়েছে ১৮০ টাকা। অর্থাৎ নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি ৩০ টাকা।
হাতিরপুল বাজারেও সব দোকানে তেল নেই। একজন দোকানি পাঁচ এবং দুই লিটারের সামান্য তেল পেলেও এক এবং আধা লিটারের তেল পাননি।
দোকানি সোহেল মিয়া জানান, সোমবার এই তেল দেয়া হয়। কিন্তু চাহিদা বেশি হলেও সরবরাহ করা হচ্ছে না।
হাতিরপুল বাজারের অন্য একটি খুচরা দোকানে তেল দেখা যায়নি। দোকানি শংকর সাহা বলেন, ‘কিছুক্ষণের মধ্যে তেল নিয়ে আসার কথা। আসলে তেল বিক্রি শুরু হবে।’
শেওড়াপাড়ার কাঁচাবাজারের পাশাপাশি পাঁচটি মুদি দোকানের একটিতেও বোতলজাত সয়াবিন তেলের দেখা মেলেনি। দোকানিরা জানান, এখনও নতুন তেল আসেনি। ঈদের আগ থেকে তেলের গাড়ি আসছে না। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ২-৩ দিনের মধ্যেই তেল পাওয়া যাবে।
তবে ক্রেতা সেজে কথা বলতে গেলে অন্য কয়েকটি দোকানের কয়েকজন বিক্রেতা আগের দামের তেল বেশি দামে বিক্রির প্রস্তাব দেন।
দোকানি করিম মোল্লা এদের একজন। তিনি জানান, নতুন দামের তেল সরবরাহ করা হয়নি। পুরোনো দামের তেল রাখা ছিল। যেসব ক্রেতা নিয়মিত কেনাকাটা করছেন, তাদেরকেই শুধু এই তেল দেয়া হচ্ছে। তবে এক লিটার দাম নেয়া হচ্ছে ২০০ টাকা।
তিনি বলেন, ‘ক্রেতারা সারা বছর বাজার করেন। তেল যদি তাদের না দেয়া যায়, তাহলে তারা হতাশ হন। অন্য জায়গায় চলে যাবেন। তাই অনেক কষ্টে সংগ্রহ করে বেশি দাম দিয়ে কিনে কিছু তেল সংগ্রহ করা হয়েছে। যা শুধু মুখচেনা ক্রেতাদের কাছেই বিক্রি করা হবে।’
তিনি জানান, অনেকে ফোনে জানতে চাইছেন তেল পাওয়া যাবে কি না। বলেন, ‘অবস্থা এমন হয়েছে যে অল্প কয়েক লিটার তেল আছে, কারে রেখে কারে দেব!’
এমন বাস্তবতায় গত কয়েক দিনের মতো মঙ্গলবারও তেলের জন্য দোকানে দোকানে ঘুরতে দেখা গেছে ক্রেতাদের।
গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে মিল মালিকদের বৈঠকের পর সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম নির্ধারণ করে সরকার। সে অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ ও খোলা প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হবে। আর পাম অয়েল বিক্রি হবে ১৭২ টাকা লিটার।
এর আগে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিনের দর ছিল ১৬০ টাকা। আর খোলা তেল ছিল ১৩৬ টাকা লিটার। অর্থাৎ আগের চেয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলে লিটারপ্রতি ৩৮ টাকা ও খোলা তেলে ৪৪ টাকা বেড়েছে।
পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৮৫ টাকা, যা আগে ছিল ৭৬০ টাকা।