সয়াবিন তেল ও পাম অয়েল নিয়ে বিশ্বজুড়ে সংকটের পর বাংলাদেশেও রান্নার তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর সরিষার তেলের ///আবার বাড়ানোয় নজর দিচ্ছে সরকার।
আশির দশক পর্যন্ত দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার বেশির ভাগ পূরণ হতো সরিষার তেল দিয়ে। তবে ৯০ দশক থেকে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। তুলনামূলক সস্তার সয়াবিন তেলে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে মানুষ। তবে গত কয়েক বছরে সরিষার তেলেও আগ্রহ বাড়ছে, এটা স্পষ্ট।
বিশ্বে করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর খাদ্যপণ্যের যে ঊর্ধ্বগতি তাতে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় নিঃসন্দেহে ভোজ্যতেল। তেলের দাম বাড়াই একমাত্র ইস্যু নয়, দাম আরও বাড়তে পারে, এমন ধারণা ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যবসায়ীরা তেল বাজারে না ছেড়ে তা মজুত করে রেখেছেন। জেলায় জেলায় অভিযান চালিয়ে এর প্রমাণও মিলছে।
এই পরিস্থিতিতে ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কামাতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) এশিয়া প্রতিনিধি নাফিস মিয়ার সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘সরিষার আবাদ বৃদ্ধির মাধ্যমে ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমাতে কাজ চলছে। আগামী ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ ভাগ স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা সম্ভব হবে।’
বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৮০ ভাগই আমদানিনির্ভর। এই তেলের মধ্যে রয়েছে সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, সরিষার তেল, সানফ্লাওয়ার অয়েল এবং রাইসব্রান তেল। এর মধ্যে সয়াবিন তেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি যার মধ্যে দেশে উৎপাদন কেবল ২০ শতাংশের মতো।
সরিষার তেল উৎপাদকদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর দেশে গড়ে ৫ থেকে ৭ লাখ টন সরিষা উৎপাদন হয়। প্রতি এক মণ সরিষা ভাঙিয়ে পাওয়া যায় প্রায় ১৬ লিটার তেল।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে দেশে খাদ্যসংকট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই মুহূর্তে মাঠে ধানের অবস্থা ভালো। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৯০ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
‘হাওরে ৪ লাখ ৫২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে আগাম বন্যায় প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সময়মতো বাঁধ রক্ষা, অনুকূল আবহাওয়া ও যন্ত্রের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে ধান কাটার ফলে ইতোমধ্যে হাওরের ধান ঘরে তোলা গেছে।’
লবণ, খরাসহ বিভিন্ন ঘাত সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন ও গবেষণায় বাংলাদেশকে আরও বেশি করে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে ইরি। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যনিরাপত্তা টেকসই করতে লবণ, খরাসহ বিভিন্ন ঘাত সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। ইতোমধ্যে দেশের বিজ্ঞানীরা উন্নতমানের অনেকগুলো জাত উদ্ভাবন করেছেন। তারপরও আরও জাত দরকার। এ বিষয়ে আমরা ইরির সহযোগিতা চাই।’
বৈঠকে ইরির প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইস ছাড়ার বিষয়ে জানতে চান ও রিলিজের অনুরোধ জানান। বিষয়টি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন আছে বলে তাদের জানান কৃষিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘দেশে গোল্ডেন রাইস রিলিজের বিষয়ে পরিবেশবাদী ও সুশীল সমাজের আপত্তি রয়েছে।’