বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আরও দুর্বল হলো টাকা

  •    
  • ১০ মে, ২০২২ ১৯:১২

ঈদের ছুটির আগে ২৭ এপ্রিল ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে প্রতি ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা লাগত। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী- তিন ব্যাংকই মঙ্গলবার ৯২ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে।

টাকার মান আরও কমেছে। এক দিনেই যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে ২৫ পয়সা দর হারিয়েছে বাংলাদেশি মুদ্রা।

আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে মঙ্গলবার এক ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে; সোমবার লেগেছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা।

ব্যাংকগুলো ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে সাড়ে পাঁচ-ছয় টাকা বেশি দরে। খোলা বাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯৩ টাকায়।

ঈদের ছুটির আগে ২৭ এপ্রিল ডলারের বিপরীতে টাকার মান ২৫ পয়সা কমিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগে প্রতি ডলারের জন্য ৮৬ টাকা ২০ পয়সা লাগত।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী- তিন ব্যাংকই মঙ্গলবার ৯২ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক বিক্রি করেছে ৯২ টাকা ৫০ পয়সা দরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। এর পর থেকেই শক্তিশালী হতে থাকে ডলার; দুর্বল হচ্ছে টাকা।

হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই নয় মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দর বেড়েছে ২ দশমিক ২৪ শতাংশ।

মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ায় বাজারে ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। আমদানির লাগাম টেনে ধরা ছাড়া ডলারের বাজার স্বাভাবিক হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তারা।

রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেও দামে লাগাম পরানো যাচ্ছে না। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার বিক্রি করেই চলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের মঙ্গলবার পর্যন্ত (দশ মাস ১০ দিন, ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ১০ মে পর্যন্ত) ৪৭০ কোটি (৪.৭০ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে ডলারের দর।

খোলা বাজারের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো হাত নেই। তবে ব্যাংকগুলো বেশি দামে ডলার বিক্রি করলে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে থাকে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আন্তব্যাংক দরে ডলার কিনে সেই ডলার বিক্রি করে থাকে ব্যাংকগুলো।

এর আগে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোর বিক্রি করা ডলারের দর আর আন্তব্যাংক রেটের মধ্যে বেশি ব্যবধান হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই পার্থক্যের একটা সীমা নির্ধারণ করে দিত; সেটা এক থেকে দুই টাকার মধ্যে থাকত।

কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ব্যাংকগুলো আন্তব্যাংক রেটের চেয়ে অনেক বেশি দামে ডলার বিক্রি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো হস্তক্ষেপ করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক।

সে কারণেই দিন যত যাচ্ছে, ইচ্ছামতো যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের দাম বাড়িয়ে চলেছে ব্যাংকগুলো; কমছে টাকার মান। এ পরিস্থিতিতে আমদানি খরচ বেড়েই যাচ্ছে; বাড়ছে পণ্যের দাম। তবে রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হচ্ছেন।

করোনা মহামারির কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরজুড়ে আমদানি বেশ কমে গিয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে উল্লম্ফন দেখা যায়। সে কারণে বাজারে ডলারের সরবরাহ বেড়ে যায়। সে পরিস্থিতিতে ডলারের দর ধরে রাখতে গত অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ৮ বিলিয়ন (৮০০ কোটি) ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়েও ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার কেনা হয়।

কিন্তু আগস্ট মাস থেকে দেখা যায় উল্টো চিত্র। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে আমদানি। রপ্তানি বাড়লেও কমতে থাকে রেমিট্যান্স। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও কমতে থাকে। বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়; বাড়তে থাকে দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আগস্ট থেকে ডলার বিক্রি শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

আমদানি কমাতেই হবে

অর্থনীতির গবেষক বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক মঞ্জুর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, চাহিদা বাড়ায় রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করে ঠিক কাজটিই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।

বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ হস্তক্ষেপকে সময়োপযোগী একটা পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন এই অর্থনীতিবিদ।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন ,‘আমদানি বাড়ায় বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। স্বাভাবিক নিয়মেই বেড়েছে দর। কিন্তু এখন আমদানির লাগাম টেনে ধরতে হবে; যে করেই হোক আমদানি কমাতে হবে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন ২৫ শতাংশ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আমি মনে করি, এটি একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে পণ্য আমদানির আড়ালে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।’

অর্থনীতির আরেক বিশ্লেষক গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সত্যিই ডলারের বাজারে চরম অস্থিরতা চলছে। এটা কোথায় গিয়ে শেষ হবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রচুর ডলার বিক্রি করেও বাজার স্বাভাবিক রাখতে পারছে না। আমার মনে হয়, এভাবে হস্তক্ষেপ করে বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না।

‘কেননা সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ব্যাপক তফাত। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় আমদানি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; ৫০ শতাংশের মতো। কিন্তু রেমিট্যান্স না বেড়ে উল্টো ২০ শতাংশ কমেছে। রপ্তানি বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু তা চাহিদার চেয়ে অনেক কম।’

‘এখন কথা হচ্ছে, কতদিন এই অস্থিরতা চলবে। আমার পরামর্শ হচ্ছে, অনেক হয়েছে আর নয়। যে করেই হোক আমদানি কমাতেই হবে। এ ছাড়া এখন আর অন্য কোনো পথ খোলা নেই। আর যদি এটা করা না যায়, তাহলে রিজার্ভের ওপর চাপ আরও বাড়বে। কয়েক মাস আগেও রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখন ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।’

দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করা আহসান মনসুর বলেন, ‘আমি মনে করি, রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার ছেড়ে হস্তক্ষেপ করে পার্মানেন্ট কোনো সল্যুশন (স্থায়ী সমাধান) হবে না। বাজারকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতটা একটু গুটিয়ে ফেলতে হবে; হস্তক্ষেপ তুলে নিতে হবে। বাজারকে বাজারের মতো চলতে দিতে হবে; বাজারকে তার গতিতেই যেতে দিতে হবে।’

‘সে ক্ষেত্রে যদি ইন্টারব্যাংক রেট (আন্তব্যাংক রেট) ৮৭ টাকা ৮৮ টাকাও হয়, তাও যেতে দিতে হবে। তাহলে ব্যাংকগুলো ও কার্ব মার্কেটের সঙ্গে ব্যাংক রেটে ডলারের যে পার্থক্য তা কমে আসবে। ধীরে ধীরে বাজার স্থিতিশীল-স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমি মনে করি, সেটাই হবে একটা স্থায়ী সমাধান।’

রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে

আমদানি বাড়ায় বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন (৪ হাজার ২০০কোটি) ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আকুর (এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন) রেকর্ড ২২৪ কোটি (২.২৪ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।

গত বছরের ২৪ আগস্ট এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি।

রেমিট্যান্সের দশ মাসের তথ্য প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ১ হাজার ৭৩০ কোটি ৭৭ লাখ (১৭.৩০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কম।

তবে রপ্তানি বাণিজ্যে বেশ উল্লম্ফন ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই দশ মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৩ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।

এ বিভাগের আরো খবর