শরীয়তপুরের নরসিংহপুর ফেরিঘাটে দিনের পর দিন অপেক্ষায় থেকে ট্রাকের পচনশীল পণ্য নষ্ট হচ্ছে। তিন থেকে চার দিন আটকা থাকায় তীব্র গরমে পচন ধরেছে ট্রাকবোঝাই পেঁয়াজ, তরমুজ, আমসহ ফলমুল। বিপাকে পড়েছেন মাছবোঝাই ট্রাকচালক ও ব্যবসায়ীরা।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ও শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপে পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার বন্ধ রয়েছে। এতে শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌরুটে পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি।
চট্টগ্রামের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাতায়াত সহজ করতে ২০০০ সালে চালু হয় শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরি চলাচল। নরসিংহপুর ফেরিঘাট ব্যবহার করে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে যাতায়াত করে খুলনা, বরিশাল, মোংলা, বেনাপোল, ভোমরাবন্দরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার যানবাহন।
নরসিংহপুর ফেরিঘাট থেকে খায়েরপট্টি পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কে যানজট লেগেছে। দীর্ঘ সময় ঘাটে আটকে থেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন পণ্যবাহী যানবাহনের চালক ও ব্যবসায়ীদের।
নরসিংহপুর বিআইডব্লিউটিসি কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আব্দুল মোমেন নিউজবাংলাকে জানান, নরসিংহপুর থেকে চাঁদপুরের আলুরবাজার নৌরুটে সাতটি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার হয়। মাঝারি সাইজের কে টাইপ ফেরির গড় ধারণক্ষমতা ১০ থেকে ১২টি যানবাহন। এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ বাস ও ট্রাক পারাপার হয়ে থাকে।
তিনি জানান, ঈদের পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে পারাপারের সুযোগ না পাওয়ায় নরসিংহপুর ঘাটে যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনের দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়। ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলের চাপ অন্য সময়ের চেয়ে অন্তত পাঁচ গুণ বেড়েছে। যাত্রীবাহী গাড়ির চাপ সামালাতে গিয়ে কাঁচা পচনশীল পণ্যবাহী যানবাহন কিছুটা ধীরগতিতে পার করতে হচ্ছে।
মঙ্গলবার নরসিংহপুর ঘাটে দেখা যায়, ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক। আটকে পড়া ট্রাকের মধ্যে জরুরি কাঁচা ও পচনশীল পণ্য রয়েছে।
ফেরিঘাটের টার্মিনাল গাড়িতে কানায় কানায় পূর্ণ। টার্মিনাল ছাড়িয়ে যানবাহনের লাইন ছাড়িয়েছে খায়েরপট্টি পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কে।
তরমুজবোঝাই ট্রাক নিয়ে পটুয়াখালী থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়ে রোববার থেকে নরসিংহপুর ঘাটে আটকে আছেন চালক আকবর আলী। তিন দিন রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে তরমুজে পচন ধরেছে।
আকবর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তিন দিনেও পার হতে পারিনি। কখন ফেরিতে ওঠার সিরিয়াল পাব তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। ট্রাকের তরমুজে পচন ধরেছে। আজকের মধ্যে পার হতে না পারলে সব তরমুজ নষ্ট হয়ে যাবে।’
পেঁয়াজের ট্রাকচালক ছাত্তার মোল্লা বলেন, ‘তিন দিন ধরে ঘাটে আটকা আছি। রোদ-বৃষ্টিতে পেঁয়াজ থেকে পানি বের হতে শুরু করেছে। ট্রাকের ২০ ভাগ পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। দ্রুত নোয়াখালী পৌঁছাতে না পারলে সব পেঁয়াজ পচে যাবে। আজ ফেরির সিরিয়াল পাব কি না নিশ্চিত না। মালিক বারবার তাগিদ দিচ্ছেন।’
লোহার শিট ও অন্য যন্ত্রাংশ নিয়ে নরসিংহপুর টার্মিনালে সাত দিন যাবৎ ট্রাক নিয়ে আটকে আছেন এনামুল হোসেন।
এনামুল বলেন, ‘আপনেগো কইয়া কী অইবো। আমাগো কি পার কইরা দিতে পারবেন? গত ৬ দিন ধইরা ট্রাকে ঘুমাইতাছি। লগে টাহাপয়সা যা আছিল সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে। অহন বিকাশে টাহা চাইয়া মালিকরে ফোন করছি। টাহা না আইলে আইজ খাওন জুটবো না। কবে যে এই থেইকা মুক্তি পাইমু তা কইতে পরি না। আমাগো কষ্ট দেহনের কেউ নাই।’
বিআইডব্লিউটিসি কর্মকর্তা আব্দুল মোমেন জানান, শনিবার থেকে নরসিংহপুর ঘাটে অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে যানবাহনের চাপ। গত ২৪ ঘণ্টায় নরসিংহপুর ঘাট দিয়ে ১ হাজার ৬৭টি যানবাহন পারাপার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২৫টি যাত্রীবাহী বাস, ১৮০টি পণ্যবাহী ট্রাক ও ৭৩৪টি ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস। এ সময়ে পার করা হয়েছে এক হাজারের বেশি মোটরসাইকেল।