সয়াবিন তেল নিয়ে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কারসাজি করেছেন বলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি যে অভিযোগ করেন তা সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, ‘ওনারা (মিল মালিকরা) বড় খেলোয়াড়। প্রভাবশালীও বটে।’
ডিলারদের অভিযোগ, সরকার পাঁচ-ছয়টি কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল। তারা যা বলে, সরকারকে তাই শুনতে হয়। ফলে সরকার ও জনগণ তাদের হাতে জিম্মি।
সয়াবিন তেলের বাজারে অস্থিরতার পেছনে তারা জড়িত নন দাবি করে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, ভোজ্যতেল আমদানি, উৎপাদন ও বিপণন করেন মিল মালিকরা। তারা সঠিকভাবে সরবরাহ না করলে সংকট হবেই।
ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মতে, সয়াবিন তেল নিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তার সমাধান দিতে পারেন কেবল মিল মালিকরাই। সরবরাহ ঠিক না করে লাঠিপেটা করে বাজার স্বাভাবিক করা যায় না।
বাজারে সয়াবিন তেলের সংকটের কারণ জানতে সোমবার সচিবালয়ে ব্যবসায়ী, মিলারসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বাণিজ্যমন্ত্রী। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, এস আলম গ্রুপের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক সালাউদ্দিন আহমেদ, টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিকুল আথহার তাসলিম, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষসহ অন্যরা।
ঈদুল ফিতরের আগে থেকেই সয়াবিন তেল নিয়ে নতুন করে সংকট তৈরি হয়। ঈদের পর সংকট আরও ঘনীভূত হয়। এ পরিস্থিতিতে ৫ মে সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মিল মালিকদের বৈঠকে তেলের নতুন দাম নির্ধারিত হয় বোতলজাত প্রতি লিটার ১৯৮ টাকা এবং খোলা ১৮০ টাকা।
কিন্তু এরপরও বাজারে এই দামে তেল পাওয়া যায়নি। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বাজার থেকে তেল উধাও হয়ে যায়। সৃষ্ট সংকট নিরসনে সোমবার মিল মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। যদিও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বৈঠকে। তবে এতে মিল মালিকদের পক্ষ নিয়ে ছোট ব্যবায়ীদের দোষারোপ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বৈঠক শেষে টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট কেন তৈরি হলো আমরা তা খুঁজে পেয়েছি। এই কারচুপি বড় গ্রুপের কেউ করেনি। করেছে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা তেল সরবরাহ না পেলে বিক্রি করব কীভাবে? পাইকাররা তো তেল উৎপাদন কিংবা বিপণন করে না। আমরা কোনো কারসাজি করি নাই।’
গোলাম মাওলা বলেন, ‘পাঁচ-ছয়টি কোম্পানি আছে। ওনারা বড় বড় প্লেয়ার (খেলোয়াড়)। তারা প্রভাবশালী। তাদের ওপর নির্ভরশীল সরকার। তা ছাড়া সরকারের কাছে কোনো বিকল্পও নেই। ফলে মিল মালিকদের কাছে সরকার ও জনগণ জিম্মি হয়ে পড়েছে।’
অভিযানে ব্যবসায়ীদের তেল মজুতের ঘটনা ধরা পড়েছে জানালে তিনি বলেন, ‘এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা। চাহিদা অনুয়ায়ী মজুতের ঘটনা যৎসামান্য। শাক দিয়ে মাছ ঢাকলে তো আর হবে না।’
সরবরাহে ঘাটতি এবং অযথা অভিযানের জন্য বাজার অস্থির হয়েছে বলে দাবি করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম। তিনি বলেন, ‘সয়াবিন তেলের উৎস হচ্ছে মিল। চাহিদা অনুযায়ী সবরাহ না হলে সংকট তো হবেই।
‘মিল মালিক ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সয়াবিন তেলের চাহিদা ও সরবরাহের যে তথ্য দিয়েছে তা সঠিক নয়। মন্ত্রীকে তারা ভুল বুঝিয়েছে।’
অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন এই তেল ব্যবসায়ী নেতা। বলেন, ‘লাঠিপেটা করলে বাজার আরও অস্থির হয়।’
‘বাজার স্বাভাবিক করতে হলে সরবরাহ বাড়াতে হবে এবং যে সংকট তৈরি হয়েছে মিল মালিকরাই তার সমাধান দিতে পারেন।’