বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভোজ্যতেল সংকটে দায়ী কে?

  •    
  • ৮ মে, ২০২২ ২০:৩৮

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, ‘ঈদের পর দাম বাড়তে পারে, এমন খবরে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তেল বিক্রি না করে মজুত করেছেন।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৃহস্পতিবার মিল মালিকদের বৈঠকের পর ক্রেতাপর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম আবার বাড়ানোর পরও বাজারে সরবরাহ সংকট কাটেনি, বরং তা জটিল হয়েছে।

নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দিয়েও তেল পাচ্ছেন না ভোক্তারা। শনি ও রোববার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারসহ দেশের অনেক স্থানে বোতলজাত ও খোলা তেলের দেখা মেলেনি।

রমজান শুরুর আগে বাজারে পাম ও সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে একটা সংকট তৈরি হয়েছিল। তখন সরকার হস্তক্ষেপ করে দাম নির্ধারণ করার পর সেই দফায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আসে। এখন আবার তেল নিয়ে হাহাকার।

এই সংকটের জন্য বরাবরের মতো একে অন্যকে দুষছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

ভোজ্যতেল বিপণন ব্যবস্থায় মিলার তথা পরিশোধনাগার কোম্পানি, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা ভূমিকা রাখেন। এই তিন স্তর হয়ে ভোক্তার হাতে আসে তেল। ভোজ্যতেলের চলমান সংকটের জন্য তিন স্তরের ব্যবসায়ীরা পরস্পরকে দায়ী করেন।

ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মিল মালিকরা পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছেন না। অন্যদিকে মিলাররা এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরবরাহ কমানো হয়নি। কিছু ডিলার এবং খুচরা দোকানদার দাম বেশি পাওয়ার আশায় মজুত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এটি সাময়িক সংকট। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সবকিছু বন্ধ ছিল। এখন ব্যাংকসহ সবকিছু খুলেছে। মিল মালিকরা এলসি খুলবেন। অচিরেই তেলের বাজার স্থিতিশীল হবে।

এক বছর ধরে দেশে ভোজ্যতেলের বাজারে অস্থিরতা চলছে। করোনার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের কাঁচামালের দাম দফায় দফায় বাড়ার কারণে দেশীয় বাজারে এ পণ্যটির দাম হুহু করে বেড়েছে। প্রতিবারই সরকারি হস্তক্ষেপে দাম নির্ধারণ করা হলেও কোনোবারই প্রতিফলন ঘটেনি বাজারে।

সর্বশেষ ঈদের পরের দিন ৫ মে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা নির্ধারণের ঘোষণা দেয় হয়। এর পর থেকে সয়াবিন তেলের বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে।

গত মার্চে ভোজ্যতেলের বাজারে যখন অস্থিরতা দেখা দেয়, তখন মিলমালিকদের দাবির মুখে ভোজ্যতেলের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে সব মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহার এবং আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট কমানো হয়। বিশাল কর ছাড়ের পরও এর সুফল পাননি ভোক্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, কর ছাড়ের উদ্দেশ্য ছিল ভোক্তা যাতে সাশ্রয়ী দামে তেল কিনতে পারেন। কিন্তু তার সুফল দেখা যায়নি।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, কর ছাড় দেয়ার ফলে এ খাত থেকে ২৭০ কোটি টাকার রাজস্ব গচ্চা গেছে। রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন করে আর কর ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ সংকট সাময়িক। ঈদের ছুটি শেষ হলো। মিলমালিকরা এখন এলসি (ঋণপত্র) খুলবেন। আশা করছি, অচিরেই বাজার স্থিতিশীল হবে।’

তার মতে, ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ সারা বিশ্বেই তেলের দাম বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা তো লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবেন না। কেউ ইচ্ছা করে তেল মজুত করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

জানা যায়, শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্ববাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত তেলের (কাঁচামাল) দাম ছিল ২ হাজার ১০০ ডলার, যা ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ছিল দেড় হাজার ডলার। এক বছর আগে ছিল ৭৫০ ডলার।

সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম টনপ্রতি ২ হাজার ১০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আমরা সরকারকে কথা দিয়েছিলাম, ঈদ পর্যন্ত আগের দামেই সরবরাহ করব। সেটাই আমরা করছি। আমাদের মিল থেকে সয়াবিন বাজারে ছাড়ছি। কিন্তু হয়তো দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় খুচরা বিক্রেতারা সেটা মজুত করে রাখতে পারেন।’

দেশে ভোজ্যতেলের ৮০ শতাংশ আমদানি করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভোজ্যতেল সয়াবিন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত তেল (কাঁচামাল) আমদানি করে পরিশোধন করে বাজারে বিক্রি করে।

সয়াবিন তেলের বাইরে পাম অয়েল, সূর্যমুখী, জলপাই তেল বা সরিষার তেল ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

তালতলা বাজারের মিজান স্টোরের মিজান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোম্পানি তেল না দিলে আমরা কীভাবে বিক্রি করব?’

একজন ডিলার জানান, এর আগেও তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। কোনোবারই সরবরাহ নিয়ে সংকট তৈরি হয়নি। এবারই সরবরাহে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ‘ঈদের পর দাম বাড়তে পারে, এমন খবরে ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা তেল বিক্রি না করে মজুত করেছেন। কয়েকটি বাজার পরিদর্শন করে আমরা এমন প্রমাণ পেয়েছি। যারা এসব অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

বাংলাদেশে সয়াবিন তেল মূলত আমদানি করা হয় ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে। সেখানে খরার কারণে উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে রাতারাতি বেড়েছে সয়াবিনের দাম। এ ছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করার পর থেকেই বাংলাদেশের তেলের বাজার অস্থির হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর