রাজধানীর পলাশী বাজারে ভোজ্যতেলের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন রুবেল। বাজারের দোতলায় ৪-৫টি দোকানে খোঁজার পর এক দোকানি তেল বিক্রি করতে রাজি হলেন। বোতলজাত আধ লিটার তেলের দাম নেয়া হলো ৯০ টাকা। তবে তেলের বোতলে থাকা কোম্পানির ‘প্রাইস ট্যাগ’ ঘষে মুছে ফেলা হয়েছে।
দোকানি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার থেকে ঈদের আগে বেশি দামে তেল কিনতে হয়েছে। তাই কিছুটা লাভ ধরে বিক্রি করছি। আর কেনার সময়ই প্রাইস ট্যাগ মুছে দেয়া অবস্থায় পেয়েছি আমরা।
‘বাজারে ভোজ্যতেল নেই। ক্রেতা ধরে রাখতেই বেশি দামে তেল এনে বিক্রি করছি। এ ক্ষেত্রে আমার কোনো দায় নেই।’
তবে অন্য দোকানিরা অভিযোগ করেন, কোনো কোনো দোকানে আগের দামে কেনা তেল মজুত করে রেখে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য সচিবের সঙ্গে মিল মালিকদের বৈঠকের পর সয়াবিন ও পাম অয়েলের দাম নির্ধারণ করে সরকার। সে অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ ও খোলা প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হবে। আর পাম অয়েল বিক্রি হবে ১৭২ টাকা লিটার।
এর আগে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিনের দর ছিল ১৬০ টাকা। আর খোলা তেল ছিল ১৩৬ টাকা লিটার। অর্থাৎ আগের চেয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলে লিটারপ্রতি ৩৮ টাকা ও খোলা তেলে ৪৪ টাকা বেড়েছে।
পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৮৫ টাকা, যা আগে ছিল ৭৬০ টাকা।
সরকার নতুন করে দর বেঁধে দেয়ার পর পলাশী বাজারের ওই দোকানির মতো কারসাজিতে জড়িয়েছে অন্য অনেক বিক্রেতাই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভোজ্যতেলের বর্ধিত দাম ঘোষণার পর কোনো কোনো ব্যবসায়ী তাদের কাছে থাকা তেলের পুরোটাই মজুত করে ফেলে। পরে গোপনে বের করে বেশি দামে বিক্রি করছে তারা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, পলাশী, মিরপুরসহ বিভিন্ন বাজারে গোপনে তেল বিক্রি হচ্ছে। তবে চাহিদার তুলনায় তা কম।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী সুমন মিয়া জানান, তেলের সরবরাহ কম। তবে একেবারে নেই তা বলা যাবে না। যে যতটুকু তেল পেয়েছে তা মজুত করেছে।
আগে থেকেই গুঞ্জন ছিল তেলের দাম বাড়বে। তাই তেল ধরে রেখে বাজারে সংকট সৃষ্টি করা হয়। নতুন দামের তেল সোমবার থেকে আসতে শুরু করবে। এর মধ্যে পুরোনো তেল বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। যেহেতু চাহিদা বেশি তাই বাড়তি দামেই মানুষ কিনছে।
কারওয়ান বাজারের তেল কিনতে আসা বেইলী রোডের বাসিন্দা সুমিত বলেন, ‘ফাস্টফুডের দোকান চালাতে প্রতিদিন আমার ২০ লিটার সয়াবিন তেল দরকার হয়। কিন্তু কোথাও তেল পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এ দোকান সে দোকান ঘুরছি।’
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী সেলিম খান বলেন, ‘অতি মুনাফার লোভে কেউ কেউ তেল মজুত করে রেখেছিল। তবে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে জরিমানাও গুনতে হয়েছে অনেককে।
‘আজ ডিও (চাহিদাপত্র) কাটার পর সোমবার বাজারে ঢুকতে পারে তেলের চালান। দুই-তিন দিনের মধ্যে বাজার স্বাভাবিক হবে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যেই আগে সরবরাহ পাওয়া তেল বিক্রি হয়ে যাবে। কারও কাছে থেকে গেলেও নতুন দামের তেল আসার পর বেশি দামে বিক্রির সুযোগ আছে।’
সেলিম খান বলেন, ‘নতুন নির্ধারিত বোতলজাত এক লিটার সয়াবিনের দাম ১৯৮ টাকা। তবে পুরোনো দামের তেল থাকলে এর চেয়ে কিছুটা কমে বিক্রি করা হবে। বাজারের চেয়ে কিছুটা কম দামে পেলে ক্রেতারাও তেমন একটা প্রতিবাদ করবে না।’
মিরপুরের শেওড়াপাড়া বাজারে তেল কিনতে আসা সুমি খাতুন জানান, ‘দুদিন ঘুরে তেল পাইনি। তবে আজ এক লিটার তেল পাওয়া গেছে। আগে সরবরাহ করা তেল হলেও বর্ধিত দাম ২০০ টাকাই নিয়েছেন বিক্রেতা। তেল দরকার। তাই কোনো কথা না বলে কিনে নিয়েছি। বোতলের গায়ে কত লেখা আছে তা দেখিনি।’
তবে আগে সরবরাহ পাওয়া তেল বোতলের প্রাইস ট্যাগ মুছে বিক্রির প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।