বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভারতে সয়াবিনের দাম ২২২ টাকা লিটার

  •    
  • ৭ মে, ২০২২ ১৭:৫৯

শুক্রবার ভারত সরকারের ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৯৮ রুপিতে বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ দাম দাঁড়ায় ২২২ টাকা।

কোভিড-১৯ সংক্রমণের ক্ষত শুকানোর আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে বিশ্ববাজারে অশোধিত তেলের দাম চড়ায় যাতায়াতের জ্বালানি, রান্নার গ্যাস, খাদ্যপণ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশির ভাগ পণ্যের দামে কার্যত আগুন।

যুদ্ধের পরিবেশে ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের আমদানিতে ধাক্কা খেয়েছে, যার আঁচ এসে পড়েছে খুচরা বাজারে। পাম ও সয়াবিন তেলের দাম নজিরবিহীন উচ্চতায় উঠেছে।

শুক্রবার ভারত সরকারের ভোক্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৯৮ রুপিতে বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এ দাম দাঁড়ায় ২২২ টাকা।

এ ছাড়া শুক্রবার চিনাবাদাম তেলের সর্বভারতীয় গড় খুচরা মূল্য ছিল প্রতি লিটার ২২৩ রুপি, সরিষার তেল প্রতি কেজি ১৯৮ রুপি এবং পাম তেল প্রতি কেজি ১৮১ দশমিক ৫ রুপি।

মহারাষ্ট্র থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে, সেখানেও বাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে অনেক বেশি দরে। রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে পুনেতে সয়াবিন তেলের ৯০০ মিলিলিটার (এমএল) প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ রুপিতে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮৬ টাকা। সে হিসাবে এক লিটারের দাম পড়ছে বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০৬ টাকা। বছরের শুরুতে সয়াবিন তেলের দাম এখানে ছিল ১১০ রুপি।

একইভাবে সূর্যমুখী তেলের দাম এখন লিটারপ্রতি ২০০ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২২৫ টাকা ও রাইস ব্র্যান অয়েল ১৯০ রুপি বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১৪ টাকা। সরিষার তেলের ৯১০ এমএলের প্যাকেটের দাম ২২৩ রুপি বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৫০ টাকা। বাজার শান্ত রাখতে ভারত সরকার রান্নার তেলের কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্ক কমিয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার একতরফা নিষেধাজ্ঞায় শিকাগোয় সয়াবিন তেল ও উত্তর আমেরিকায় ক্যানোলা তেলের দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ভারত ভোজ্যতেলের চাহিদার ৬০ শতাংশ আমদানি করে। এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়িয়ে সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া জানায়, ২৮ এপ্রিল থেকে তারা পাম তেলের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বসাচ্ছে। অথচ ওই দেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি পাম তেল কেনে ভারত। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এতে তার দাম স্বল্পমেয়াদে ১০-১৫ শতাংশ চড়তে পারে।

তবে দুর্ভোগ শুধু সেখানেই থেমে থাকবে না। এইচডিএফসি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ অভীক বড়ুয়া ইটিমার্কেটস ডটকমকে বলেছেন, ‘পাম তেলের অপ্রতুলতা বা মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাজারে প্রত্যক্ষ প্রভাব খুব কম হতে পারে। কিন্তু বিস্কুট, কেকের পাশাপাশি মারজারিন, চকোলেট, নাটেলা স্প্রেডের মতো বেশ কিছু পণ্য তৈরির কাঁচামাল পাম তেল। তা ছাড়া শ্যাম্পু, সাবানের মতো বিভিন্ন প্রসাধনী দ্রব্য তৈরির ক্ষেত্রেও লাগে পাম তেল। সে কারণে খুচরা বাজারে সার্বিক প্রভাব অনেক বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’

সূত্রের দাবি, এতে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার, নেস্‌লে, ব্রিটানিয়া, গোদরেজ কনজিউমার্স প্রডাক্টস, ম্যারিকোর মতো ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলোর উৎপাদন খরচ বাড়বে। সে ক্ষেত্রে বিক্রি ধাক্কা খেলেও পণ্যের দাম বাড়ানো ছাড়া পথ খোলা থাকবে না বলে আশঙ্কা।

ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞার পর ভারতের জন্য ২ লাখ ৯০ হাজার টন পাম তেলের চালান বন্ধ হয়ে গেছে।

জেমিনি এডিবলস অ্যান্ড ফ্যাটস ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রদীপ চৌধুরী বলেছেন, ‘আমাদের ১৬ হাজার টন পাম তেল নিয়ে জাহাজ ইন্দোনেশিয়ার কুমাই বন্দরে আটকে আছে। প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টন ইন্দোনেশিয়ান পাম তেল কিনি আমরা।’

ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাম তেল আমদানিকারক এবং প্রতি মাসে সাত লাখ টনের প্রায় অর্ধেকের জন্য ইন্দোনেশিয়ার ওপর নির্ভর করে।

ভারত বছরে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি করে, যার মধ্যে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টন (প্রায় ৬৩ শতাংশ) পাম তেল।

সংশ্লিষ্ট শিল্পের সংগঠন সলভেন্ট এক্সট্র্যাক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের বিভি মেহতা ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে দ্রুত আলোচনা শুরুর আর্জি জানিয়েছেন। তার মতে, তা না হলে আমদানি বন্ধ হলে দেশ ক্ষতির মুখে পড়বে। মেহতা বলেছেন, ‘ইতোমধ্যেই গত কয়েক দিনে মুম্বাইতে অপরিশোধিত পাম তেলের দাম টনপ্রতি ১০০ ডলার বেড়ে ১৯০০ ডলারে পৌঁছেছে, যেখানে পামওলিনের দামও প্রতি টন ১০০ ডলার বেড়ে ১৯৮০-এ পৌঁছেছে।’

এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত একাংশের দাবি, ইন্দোনেশিয়ার পক্ষেও বেশি দিন রপ্তানি বন্ধ রাখা কঠিন। কারণ সেখানে বিপুল তেল রাখার পরিকাঠামো নেই। তা সত্ত্বেও রপ্তানি না খুললে ভারত কীভাবে সংকট এড়াবে, তা নিয়েই চলছে চর্চা। ক্রেতারা মালয়েশিয়া থেকে কেনাকাটা করতে ছুটে আসছে, কিন্তু কুয়ালালামপুর চাহিদা পূরণ করতে পারবে না।

ভারতে খুচরা মুদ্রাস্ফীতির গতিপথ গত কয়েক মাসে উদ্বেগজনকভাবে ঊর্ধ্বমুখী, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মুদ্রাস্ফীতি ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ, যা রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার ২-৬ শতাংশের স্বস্তিদায়ক বন্ধনী থেকেও বেশি। খুচরা মুদ্রাস্ফীতির এই ঊর্ধ্বগামী আচরণের অন্যতম একটি কারণ ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি।

মহারাষ্ট্রে দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে

পুনের বিক্রেতাদের ভাষ্য মতে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর দাম রেকর্ড উচ্চ পর্যায়ে। এখন ভারতে সরিষার তেলের দামও বেশি। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সূর্যমুখী তেলের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় সূর্যমুখী তেলের দাম অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

পুনের দোকানিরা বলছেন, যুদ্ধের ফলে সূর্যমুখী তেলের দাম আগেই বেড়ে গিয়েছে। এখন যা ২০০ রূপি লিটার, সেটা কিছুদিন আগেও ১৩০ রুপি ছিল। মাত্র দুই থেকে তিন মাসে দামের এত তারতম্য হয়েছে। এখন যদি পাম তেলের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়, তবে খুব শিগগিরই তেলের দাম আরো বাড়বে।

পুনের সুপারশপগুলোতেও তেলের দামে এখন কোনো ছাড় নেই। ডি-মার্ট ও রিলায়েন্সের মতো জনপ্রিয় সুপারশপ বিভিন্ন পণ্যে ছাড় দিয়ে থাকে। তবে গত কয়েক মাসে তেলের দামে কোনো সুবিধা পাননি ভোক্তারা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের মতে, গত সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করায় ভারতে তার বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ভারত দেশ পাম তেলের জন্য ইন্দোনেশিয়ার উপরে নির্ভরশীল। এ দেশে ৫৬ ভাগ তেল আমদানি করা হয়। একইভাবে সূর্যমুখী তেলের দাম বৃদ্ধির কারণ রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ।

তেলের দাম বাড়ার কারণে মজুতদারি বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছিল ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। তবে আইনের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করার ফলে এখন এটি কমেছে। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের মতো রাজ্যগুলোতে ভোজ্য তেল মজুত করে রাখার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পাইকারি ও বড় মাপের খুচরো সরবরাহকারীরা এই বিপুল পরিমাণ ভোজ্য তেল মজুত করে রেখেছিল।

এ বিভাগের আরো খবর