বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঈদের ছুটি শেষে লেনদেনে ফের ভাটা

  •    
  • ৫ মে, ২০২২ ১৫:৩৬

ঈদের পর লেনদেন কমে যাওয়ার বিষয়টি প্রতি বছরই দেখা গেছে। তবে ২০২০ সাল থেকে দুই বছরের পরিস্থিতি ছিল কিছুটা ভিন্ন। ওই বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে পুঁজিবাজার চাঙা হয়ে উঠতে শুরু করে, যা বজায় থাকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে পুঁজিবাজারে লেনদেনের ভাটার যে প্রবণতা থাকে, তা দেখা গেল আবার।

চলতি সপ্তাহের পুরোটাই বন্ধ থাকার পর একটিমাত্র কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ব্রোকারেজ হাউসে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। আর ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস গত বৃহস্পতিবারের তুলনায় লেনদেন নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেকে।

১২ সূচক পতনের দিন হাতবদল হয়েছে ৪৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার। ঈদের আগের শেষ কর্মদিবস ২৮ এপ্রিল লেনদেন ছিল ৮৬৯ কোটি ৮১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।

এবার ঈদের তিন দিনের ছুটির আগের দিন ছিল মে দিবসের বন্ধ। এর আগের দুই দিন ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। আবার ঈদের ছুটি শেষে একটিমাত্র কর্মদিবস শেষে আবার দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি পড়েছে।

গত দুটি বছর করোনার বিধিনিষেধে নগরীতে ঈদ করতে বাধ্য হওয়া নগরবাসী দীর্ঘ ছুটিতে এবার বাড়ি গিয়ে অবসর কাটাচ্ছেন। এ কারণে মাঝের একটি কর্মদিবসে রাজধানীর পরিস্থিতি ছুটির আমেজের মতোই। পুঁজিবাজারও এর বাইরে নয়।

মাঝের ২০২১ সাল বাদ দিলে প্রতি বছরই দেখা যায়, ঈদের পরের কর্মদিবসে লেনদেন কমে যায় অনেকটাই। ছুটি আর সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে যে অবসর শেষ হয়, এর পর থেকেই স্বাভাবিক হতে থাকে লেনদেন।

সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হতেই সূচক ৩ পয়েন্ট বেড়ে গেলেও আধা ঘণ্টা যেতে না যেতেই ৩৯ পয়েন্ট কমে যায়। এর পর থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে আরও ২৭ পয়েন্ট যোগ হয়ে শেষ হয় লেনদেন।

ছুটি শেষে পুঁজিবাজারে ঈদের আমেজ এখনও পুরোপুরি কাটেনি, তা দেখা গেল প্রথম দিনের লেনদেনে

ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আগে অনেক বিনিয়োগকারী ছুটিতে গেছেন। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করছেন। যারা ঢাকা ছেড়েছিলেন তারা অনেকে ফেরেননি এখনও। যার কারণে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কম।’

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে পুঁজিবাজারে কোনো টেকনিক্যাল ইস্যু নেই। বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কম। এ কারণেই বাজার কিছুটা নেতিবাচক।’

প্রায় প্রতি বছরই একই চিত্র

ঈদের পর লেনদেন কমে যাওয়ার বিষয়টি প্রতি বছরই দেখা গেছে।

২০১৬ সালে ঈদের আগে শেষ কার্যদিবস ৮ সেপ্টেম্বর লেনদেন হয়েছিল ৪৮০ কোটি টাকা এবং ঈদের পর প্রথম কার্যদিবস ১৮ সেপ্টেম্বর লেনদেন হয়েছিল ৩১৪ কোটি টাকা।

২০১৭ সালে ঈদের আগে শেষ কার্যদিবস ৩১ আগস্ট লেনদেন হয়েছিল ৮৫২ কোটি টাকা এবং ঈদের পর প্রথম কার্যদিবস ৪ সেপ্টেম্বর লেনদেন হয়েছিল ৬৬৭ কোটি টাকা।

২০১৮ সালে ঈদের পর ১৮ জুন প্রথম কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছিল ৪৮৫ কোটি টাকা। আর পুঁজিবাজারে ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগে ১২ জুন লেনদেন হয়েছিল ৪৫৭ কোটি টাকা।

২০১৯ সালে ঈদের পর ৯ জুন প্রথম কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছিল ৩০৪ কোটি টাকা। ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগে ৩০ এপ্রিল লেনদেন হয়েছিল ৩০৪ কোটি টাকা।

তবে ২০২০ সাল থেকে দুই বছরের পরিস্থিতি ছিল কিছুটা ভিন্ন। ওই বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে পুঁজিবাজার চাঙা হয়ে উঠতে শুরু করে, যা বজায় থাকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

২০২০ সাল দেশের করোনা পরিস্থিতিতে ঈদুল ফিতরের আগে-পরে বন্ধ ছিল পুঁজিবাজারের লেনদেন। তবে চালু ছিল ঈদুল আজহার সময়।

ঈদুল আজহার আগের দিন সর্বশেষ কার্যদিবস ৩০ ‍জুলাই লেনদেন হয়েছিল ৫৮০ কোটি টাকা। আর ঈদের পর প্রথম কার্যদিবস ৩ আগস্ট লেনদেন হয়েছিল ৬৭২ কোটি টাকা।

২০২১ সালের ১৬ মে রোববার ঈদের পর প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। ঈদের আগের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ১ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা।

এই লেনদেনই ছিল এক যুগের মধ্যে ঈদের পর সর্বোচ্চ লেনদেন।

সূচক ফেলল যারা

ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগে আগে বেশ কিছু কোম্পানির লভ্যাংশ ও প্রান্তিক প্রকাশ হওয়ার পর প্রথম কর্মদিবসে দেখা গেছে তার প্রভাব।

সবচেয়ে বেশি সূচক কমিয়েছে যে ১০টি কোম্পানি, তার মধ্যে তিনটিই ছিল ব্যাংক খাতের।

আয় কমে যাওয়ার পর লভ্যাংশ কমানো ওয়ান ব্যাংক আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর প্রথমবারের মতো লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত জানানো ন্যাশনাল ব্যাংক আর লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট শেষে লেনদেন শুরু করা পূবালী ব্যাংক সূচক টেনে নামিয়েছে।

এর মধ্যে ১১.২৮ শতাংশ দর কমা ওয়ান ব্যাংক ৭.৪৫ পয়েন্ট, ৪ শতাংশ দর হারানো এনবিএল ৫.১৩ পয়েন্ট আর ২.৮১ শতাংশ দর হারানো পূবালী ব্যাংক সূচক কমিয়েছে ৪.৩৭ পয়েন্ট।

তবে সবচেয়ে বেশি সূচক কমিয়েছে রবি। কোম্পানিটির দর ০.৯৩ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে ৮.৩৫ পয়েন্ট।

দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ওয়ান ব্যাংক, তৃতীয় অবস্থানে থাকা লাফার্জ হোলসিম মিমেন্টের দর ১.৪ শতাংশ কমায় সূচক কমেছে ৬.৬৩ পয়েন্ট।

এছাড়া বিকন ফার্মা ৬.৬৩ পয়েন্ট, আইসিবি ৬.৪২ পয়েন্ট, স্কয়ার ফার্মা ৬.১২ পয়েন্ট, ইউনাইটেড পাওয়ার ৩.৩৯ পয়েন্ট, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ২.৮৭ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক ফেলেছে ৫৭.৫২ পয়েন্ট।

বিপরীতে ৪৬ পয়েন্ট যোগ করেছে ১০টি কোম্পানি।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭.৬৭ পয়েন্ট যোগ করেছে ইউনিক হোটেল। করোনার দুই বছরে আয়ে ধস নামলেও সেই পরিস্থিতি কেটে এবার আয় বেড়েছে কোম্পানিটির। চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে দাম বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে আজ বেড়েছে ৬.৯৫ শতাংশ।

এছাড়া ইফাদ অটোর দর ৯.৮৩ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচক বেড়েছে ৬.০৫ পয়েন্ট, জেএমআই হসপিটালের দর ৯.৮৯ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৫.১৯ পয়েন্ট।

এছাড়া শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি ৪.৮৬ পয়েন্ট, সোনালী পেপার ৪.৬৫ পয়েন্ট, আইপিডিসি ৪.১৪ পয়েন্ট, বেক্সিমকো সুসুক বন্ড ৩.৯৯ পয়েন্ট, ম্যারিকো ৩.১৬ পয়েন্ট, রেকিট বেনকিনজার ৩.১ পয়েন্ট ও ইউনিলিভার ৩.০২ পয়েন্ট যোগ করেছে।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০

দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো গ্রুপের শাইনপুকুর সিরামিকস। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ। ২৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে ৩১ টাকা ১০ পয়সায় হাতবদল হয়েছে শেয়ারটি।

এর পরেই দর বেড়েছে নতুন তালিকাভুক্ত জেএমআই হসপিটাল। ৭৮ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে প্রতিটি শেয়ার।

প্রায় কাছাকাছি দর বেড়েছে ইফাদ অটোস লিমিটেডের। ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ দর বেড়ে প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫০ টাকা ৩০ পয়সা। আগের কর্মদিবসে দর ছিল ৪৫ টাকা ৮০ পয়সা।

এছাড়া ন্যাশনাল টি কোম্পানির দর ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ বেড়েছে।

৬ শতাংশ বেশি দর বেড়েছে ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক লিমিটেড, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট লিমিটেড এবং শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের।

৫ শতাংশের বেশি দর বেড়েছে লাভেলো, মন্নুস্পুল এবং ফাইন ফুডসের।

পতনের শীর্ষ ১০

সবচেয়ে বেশি ১১.২৭ শতাংশ দর কমেছে ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের। ২০২১ সালের জন্য ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করায় এর কোনো মূল্যসীমা ছিল না।

এর পরেই ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে দর কমেছে ৬টি কোম্পানির। এর মধ্যে জেমিনি সি ফুডের দর ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের দর ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ, বিএনআইসিএলের দর ৪.৪৫ শতাংশ, নাহী অ্যালুমিনিয়ামের দর ৪.৩৫ শতাংশ, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের দর ৪.১০ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের দর কমেছে ৪ শতাংশ, বিডি থাইফুডের দর ৩.৮৭ শতাংশ, কাট্টালী টেক্সটাইলের দর ৩.৮৩ শতাংশ এবং জেনেক্সিল ইনফোসিসের দর কমেছে ৩.৪৮ শতাংশ কমেছে।

লেনদেনের শীর্ষ পাঁচ খাত

ঈদের পরে প্রথমদিনের লেনদেনে শীর্ষে ছিল বিবিধ খাত। তবে কোনো খাতেই লেনদেন ১০০ কোটি টাকা ছাড়ায়নি।

খাতটিতে ৭৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা লেনদেনের দিনে নয়টি কোম্পানির দর বৃদ্ধি দেখা গেছে। বিপরীতে তিনটির দর কমেছে এবং দুটির অপরিবর্তিত দামে লেনদেন হয়েছে।

দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রকৌশল খাতের ২৩টি কোম্পানির দর বেড়েছে। কমেছে ১৮টির এবং একটির দর অপরিবর্তিত ছিল। দিনভর ৪৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ।

দর বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে। ১৮টি বা ৫৮.০৬ শতাংশ কোম্পানির দর বেড়েছে। লেনদেন হয়েছে ৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার। সেইসঙ্গে দর হারিয়েছে ১০টি কোম্পানি এবং তিনটির দাম অপরিবর্তিত ছিল।

চতুর্থ এবং পঞ্চম স্থানে থাকা ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে প্রায় সমান সংখ্যক কোম্পানির দর বেড়েছে ও কমেছে।

ব্যাংক খাতে ৩৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা লেনদেনের বিপরীতে দর বেড়েছে ১২টি কোম্পানির। বিপরীতে কমেছে ১১টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ৯টির।

অন্যদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ১০টি কোম্পানির দর বৃদ্ধি পেয়েছে, কমেছে ৯টির এবং ৩টি আগের দরেই লেনদেন হয়েছে। এদিন ৩৩ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে খাতটিতে।

শীর্ষ পাঁচ খাত ছাড়াও এদিন বস্ত্র, খাদ্য, বিমা এবং মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে দর বাড়তে দেখা গেছে।

এ বিভাগের আরো খবর