বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাড়া নেই, বারবার টাকা সাদা করার সুযোগ কেন?

  •    
  • ৫ মে, ২০২২ ১৩:০০

অর্থবছরের ৮ মাসে ২ হাজারের কিছু বেশি লোক কালো টাকা সাদা করেছেন। আগের বছর সংখ্যাটি ছিল ১২ হাজার। লোকে সাড়া দেয় না। তবুও সরকার বছরের পর বছর সুবিধাটি বহাল রাখে।

এবারও কালো টাকা (অপ্রদর্শিত আয়) সাদা করার সুযোগে সাড়া মিলছে না তেমন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সবশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে শেয়ারবাজার, নগদ টাকাসহ বিভিন্ন খাতে সরকার যে সুযোগ দিয়েছে, তাতে কম লোকই আগ্রহ দেখিয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে মাত্র ২ হাজার ৩১৩ জন ঘোষণা দিয়ে টাকা সাদা করার সুযোগ নিয়েছেন। এর বিপরীতে সরকার কর পেয়েছে মাত্র ৯৫ কোটি টাকা।

গতবার ১২ হাজারের বেশি মানুষ এ সুযোগ নিয়েছিল। বিপরীতে সরকার প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা কর পায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, অর্থবছরের শেষ দিকে অনেকে আগ্রহ দেখায়। আশা করা যাচ্ছে, সুবিধাভোগীদের সংখ্যা আরও বাড়বে।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, ‘ন্যায়বিচারের পরিপন্থি’ এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সৎ করদাতাদের প্রতি অবিচার করা হয়। এ ছাড়া সাড়াও তেমন মেলে না।

বারবার এ সুযোগ দেয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

স্বাধীনতা-পরবর্তী সব সরকারই টাকা বৈধ করার সুযোগ দিয়েছে। সবশেষ চলতি অর্থবছরে শর্তসাপেক্ষে এই সুযোগ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার।

এবার কেন ইতিবাচক সাড়া নেই, জানতে চাইলে এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেন, ‘কঠোর শর্ত। করহার অত্যন্ত বেশি। এতে বেশি করারোপের কারণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না করদাতারা।’

কালো টাকা সাদা করতে হলে এখনকার নিয়মে একজন করদাতাকে সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ পর্যন্ত কর দিতে হয়। এত বেশি কর দিয়ে টাকা বৈধ করতে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন বলে মনে করেন এনবিআর কর্মকর্তারা।

অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকাকে অর্থনীতির মূল ধারায় আনতে ও দেশে বিনিয়োগ চাঙা করতে চলতি অর্থবছরে শেয়ারবাজার, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, নগদ অর্থ, সঞ্চয়পত্র, জমি ও অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, কেউ উল্লিখিত খাতগুলোতে প্রযোজ্য হার এবং তার সঙ্গে ‘অতিরিক্ত’ ৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দিতে পারেন। এ জন্য এনবিআর, দুদক কিংবা সরকারের অন্য গোয়েন্দা সংস্থা আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করবে না।

এর আগের অর্থবছরে ওই সব খাতে শুধু ১০ শতাংশ কর দিয়ে ঢালাওভাবে কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এ কারণে মোটামুটি সাড়া পাওয়া গেছে।

এনবিআরের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের ৮ মাসে সবচেয়ে বেশি টাকা সাদা হয়েছে নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ও সঞ্চয়পত্রে।

২ হাজার ২৫৮ জন বা ৯৮ শতাংশ করদাতা এসব খাতে টাকা বৈধ করার ঘোষণা দেন। কর আহরণ হয় প্রায় ৯৩ কোটি টাকা। গতবারও এসব খাতে সবচেয়ে বেশি সুযোগ নেয়।

এবার শেয়ারবাজারেও মিলছে না ভালো সাড়া। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৪৬ জন শেয়ার, ডিবেঞ্চার ও সরকার অনুমোদিত সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করেছে। এ থেকে কর আহরণ হয় ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

গত বছর ২৮৬ জন টাকা সাদা করেছিলেন। এর বিপরীতে কর আহরণ হয় ৪০ কোটি টাকা।

করোনা মহামারির কারণে বেসরকারি বিনিয়োগ চাঙা করতে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। বলা হয়েছে, উৎপাদনমুখী যেকোনো শিল্প খাতে নতুন করে বিনিয়োগ করলে তার আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে না, কিন্তু তেমন আগ্রহ দেখাননি দেশীয় উদ্যোক্তারা। হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মাত্র ৯ জন উদ্যোক্তা সাড়া দেন।

এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান আইনে ভলান্টারি ডিসক্লোজার বা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে কালো টাকা বৈধ করার যে সুযোগ আছে, এটি প্রায় অকার্যকর। নতুন নিয়মে যে সুযোগ দেয়া হয়েছে, তা একই ধরনের। এতে তেমন সাড়া মিলবে না।’

এবারের বাজেটের বাইরে আরও তিনটি খাতে আগে থেকেই কালো টাকা বৈধ করার সুযোগ বহাল রয়েছে।

১০ শতাংশ কর দিয়ে হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করলে আয়ের উৎস সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে বিনিয়োগে একই সুবিধা দেয়া রয়েছে।

এ ছাড়া সিটি ও পৌর করপোরেশনের মধ্যে এলাকাভেদে ফ্ল্যাটে প্রতি বর্গমিটারে নির্ধারিত কর দিয়ে টাকা বৈধ করা যায়।

স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে জরিমানা দিয়ে টাকা সাদা করার স্থায়ী সুযোগ অনেক আগে থেকে দেয়া আছে।

এ বিভাগের আরো খবর