পরপর পাঁচটি বুথে চেষ্টা করেও টাকা তুলতে পারেননি গণমাধ্যমে কর্মরত আলমগীর রহমান।
রাজধানীর বাংলা মোটর, সোনারগাঁও হোটেল ও হাতিরপুল এলাকায় ব্যাংক এশিয়া, সিটি ও ইস্টার্ন ব্যাংকের পাঁচটি বুথে ঈদের ছুটি হওয়ার পরপরই টাকা তোলার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু দেখা গেছে বুথ বন্ধ। কোনো কোনো বুথে কার্ড নিচ্ছে না।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বুথগুলোর কী সমস্যা? পাঁচটি বুথে গেলাম, টাকা পেলাম না। প্রয়োজনের সময় যদি টাকা তোলা না যায় তবে বুথ রেখে লাভ কী?’
ঈদের ছুটি শুরুর পরপরই অধিকাংশ ব্যাংকের এটিএম বুথে গিয়ে টাকা তুলতে পারেননি গ্রাহকরা।
রাজধানীসহ ঈদের ছুটি থেকেই দেশের বিভিন্ন এটিএম বুথে টাকার সংকটের তথ্য আসছে। বিভিন্ন ব্যাংকের বুথে গিয়েও মেশিন থেকে কোনো টাকা বের করতে পারেননি গ্রাহকরা। টাকা না পেয়ে গ্রাহকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। এ নিয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ তারা।
তবে গ্রাহকদের এই ভোগান্তি নিয়ে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বক্তব্য আসেনি। নিউজবাংলা এ নিয়ে ডাচ্-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া ও সিটি ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। তবে তাদের কেউই ফোন ধরেননি।
দীর্ঘ অবসরে টাকার চাহিদা বেশি
এবার সাপ্তাহিক ছুটি, মে দিবসের ছুটি আর ঈদের ছুটি মিলে গিয়ে ছয় দিনের অবসর মিলেছে। যারা মাঝে একটি মাত্র কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ছুটির ব্যবস্থা করতে পেরেছেন, তাদের অবসর আরও বেশি, ৯ দিন।
গত এক যুগে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার বদলে এটিএম বুথ ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। যখন খুশি তখন এমনকি ৫০০ টাকাও নির্বিঘ্নে তোলা যায় বলে হাতে নগদ টাকা রাখার বদলে কার্ড পকেটে নিয়ে ঘোরাই শ্রেয় মনে করছেন গ্রাহকরা।
এই অভ্যাস তৈরি হওয়ার পর দীর্ঘ ছুটিতে হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল কমই। তাই বুথে টাকা না পেয়ে ক্ষোভটা আরও বেশি।
ঈদের আগের রাত মিরপুর-১০-এ প্রাইম ব্যাংকের টাকা তুলতে আসেন নুসরাত জাহান। কিন্তু দেখেন নোটিশ দেয়া ‘বুথ বন্ধ’।
বুথের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের কেনাকাটার জন্য টাকা উত্তোলন বেড়েছে। সে জন্য দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে টাকা। ফের বুথে টাকা জমা করতে দেরি হওয়ায় গ্রাহকরা সমস্যায় পড়ছেন।
গ্রাহকরা প্রতি বছরই অভিযোগ করেন, বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা থাকে না। নেটওয়ার্ক সমস্যা এবং কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে জটিলতাও দেখা যায়। ফলে ঈদের ছুটিতে টাকার অতি প্রয়োজনে গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়ে। বুথ বদলিয়েও কোনো সমাধান হয় না গ্রাহকের।
যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ঈদুল ফিতরের ছুটিতে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ দিয়েছিল।
এই সংকট জেলা শহরে আরও বেশি।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথ নিয়ে পাবনার অভিজ্ঞতা নিয়ে ভুক্তভোগী একজন ফেসবুকে লেখেন, ‘পাবনা শহরে অবস্থিত ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পাবনা সদর থানার পাশে অবস্থিত ফাস্ট ট্র্যাকে গিয়ে দেখি বিশাল একটা লাইন। কিন্তু বুথে টাকা নেই। তাই সবাই যা-তা বলছে। বিষয়টি কি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয় না।
‘চলে গেলাম শহরের যুবলী ট্যাংকের পাশে অবস্থিত ফাস্ট ট্র্যাকে। না, এখানেও নিরাশ হলাম। এখানেও বুথে প্রচুর মানুষের সমাগম। কিন্তু বুথে টাকা নেই।
‘আবারও দৌড়ানোর পালা। চলে গেলাম বীনা বানি হলের পাশে অবস্থিত ফাস্ট ট্র্যাকে। ফলাফল এখানেও টাকা নেই।’
এরপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি লেখেন, ‘ব্যাংকে মানুষ টাকা রাখে প্রয়োজনের সময়ে যাতে টাকা ব্যবহার করা যায়, সেই কারণে। কিন্তু টাকা যদি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ নিজের বাপ-দাদার সম্পত্তি বানিয়ে নেয় তাহলে গ্রাহকদের তো হাতে হারিকেন থাকবেই।’
পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ ছিল
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদের আগে এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদারের জন্যও নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু অনেক সময় বুথে বাড়তি চাপ পড়ে। তবে এ ব্যাপারে আগের থেকে হয়রানি কমেছে।’
বর্তমানে ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে কার্ড দিয়ে এককালীন এক লাখ টাকা পর্যন্ত তোলা যায়। আগে যা ছিল ৫০ হাজার।
কোন ব্যাংকের কত বুথ
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা দেশে ব্যাংকগুলোর ১২ হাজার ৮৯০টি এটিএম বুথ রয়েছে। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৮ হাজার ৯৪১টি, মফস্বলে আছে ৩ হাজার ৯৪৯টি।
সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি আছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথ। তাদের বুথের সংখ্যা ৫ হাজারের ওপর।
এরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের আছে ৪৪৭টি, সিটি ব্যাংকের ৩৬৯টি, ইসলামী ব্যাংকের ২৯১টি, এবি ব্যাংকের ২৭০টি এটিএম বুথ রয়েছে।
এ ছাড়া ইস্টার্ন ব্যাংকের ২০০টি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭৬টি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১২০টি, যমুনা ব্যাংকের ১১২টি, ট্রাস্ট ব্যাংকের ১১৪টি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) ও পূবালী ব্যাংকের ৯৭টি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ৯৬টি, ব্যাংক এশিয়ার ৮১টি, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৭০টি, এনসিসি ব্যাংকের ৫৭টি, আইএফআইসি ব্যাংকের ৪৮টি, ঢাকা ব্যাংকের ৪৬টি ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৪৪টি।
এক্সিম ব্যাংক ও এইচএসবিসি ব্যাংকের বুথ আছে ৩৯টি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৩৫টি, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৩৪টি, ওয়ান ব্যাংকের ৩০টি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ২১টি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৭টি, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ১৩টি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৮টি ও উত্তরা ব্যাংকের ৭টি বুথ আছে।
নতুন অনুমোদন পাওয়া ৯ ব্যাংকের মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৪টি বুথ রয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানার ৫ ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১০০টি, জনতা ব্যাংকের ৬৪টি, বেসিক ব্যাংকের ৮টি ও অগ্রণী ব্যাংকের ২৬টি এটিএম বুথ আছে।
বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাতটি এটিএম বুথ রয়েছে। তবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কোনো বুথ নেই।
বিদেশি মালিকানার ব্যাংকের মধ্যে কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ১৯টি, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ছয়টি, হাবিব ব্যাংকের পাঁচটি, ব্যাংক আল-ফালাহর চারটি এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের তিনটি এটিএম বুথ রয়েছে।
সিটি ব্যাংক এনএ এবং ওরি ব্যাংক এখনও বাংলাদেশে কোনো এটিএম বুথ খোলেনি।