বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মুহিতেরই স্বপ্ন ছিল ‘সবার জন্য পেনশন’

  •    
  • ৩০ এপ্রিল, ২০২২ ২১:৫২

আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় সর্বজনীন পেনশনের প্রস্তাব প্রথম তুলেছিলেন। এতে পেনশনের একটি রূপরেখা প্রণয়নের কথা বলেন তিনি। সেটি তখন অতি উচ্চাভিলাষী বলে মনে করা হয়েছে। তবে পাঁচ বছর পর এখন তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

কর্মজীবন শেষে সরকারি-বেসরকারি সবাই পেনশন পাবেন– এ স্বপ্ন এখন আর অধরা নয়। বর্তমান সরকার ‘সবার জন্য পেনশন’ স্কিম বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আর এই স্বপ্নের মূল কারিগর ছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

মুহিত ছিলেন একজন স্বপ্নচারী মানুষ। তিনি নিজে স্বপ্ন দেখতেন, স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসতেন। তার চিন্তাচেতনায় সব সময় ছিল জনগণের কল্যাণ। সবার জন্য পেনশন সুবিধার প্রস্তাব করে তিনি এটির পেছনে লেগে ছিলেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণায় সর্বজনীন পেনশনের প্রস্তাব প্রথম তুলেছিলেন। এতে পেনশনের একটি রূপরেখা প্রণয়নের কথা বলেন তিনি। মুহিত এটিকে তার স্বপ্নের প্রকল্প উল্লেখ করলেও এরপর পাঁচটি বছর তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

যে স্বপ্নের কথা বলেছিলেন মুহিত, এর বাস্তবায়ন নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। সমালোচকরা বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য এ ধরনের প্রকল্প কার্যকর করা সম্ভব নয়। এটি উচ্চাভিলাষী।

তবে এ ব্যাপারে সরকারের কাজ যে সবার অগোচরে এগিয়ে গেছে, সে বিষয়টি স্পষ্ট হলো গত ফেব্রুয়ারির এক অনুষ্ঠানে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সেদিন সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা প্রবর্তন বিষয়ে একটি উপস্থাপনা দেয় অর্থ বিভাগ।

এরপর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কথা জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মুহিতের সেই স্বপ্ন বাস্তব রূপ দিতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

শনিবার গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুহিত ভাই যেসব কাজ করে যেতে পারেননি, সেগুলো যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হবে।’

জানা যায়, অর্থ মন্ত্রণালয় এখন সর্বজনীন পেনশনের রূপরেখা বিষয়ে সবার মতামত নিচ্ছে। এটি পাওয়ার পর অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে খসড়া চূড়ান্ত করা হবে। এরপর অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে প্রথমে একটি কর্তৃপক্ষ বা অথরিটি গঠন করা হবে। একজন চেয়ারম্যান এর প্রধান থাকবেন। সদস্য থাকতে পারেন তিন থেকে চারজন। কর্তৃপক্ষ গঠনের পর রূপরেখার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে।’

কবে নাগাদ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হতে পারে, এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।’

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সবার জন্য পেনশন আইন চালু করে ২০০৩ সালে। এর ১০ বছর পর সেটি আংশিক বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিজীবীরা অবসরে যাওয়ার পর আমৃত্যু আর্থিক সুবিধা পান প্রতি মাসে। সেই চাকরিজীবী মারা গেলে তার স্ত্রী এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী সন্তান থাকলে তাকেও আমৃত্যু পেনশন দেয়া হয়। তবে বেসরকারি খাতে কোথাও কোথাও ভবিষ্যৎ তহবিল (প্রভিডেন্ড ফান্ড) এবং গ্র্যাচুইটি সুবিধা থাকলেও পেনশনের বিষয়টি নেই। ফলে চাকরি শেষে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হন বিপুলসংখ্যক মানুষ। এ ছাড়া যারা অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন এবং যারা খেটে খাওয়া মানুষ, তারা অবসরে যান শূন্য হাতে। সর্বজনীন পেনশন চালু হলে শেষ জীবনে তাদেরও আর্থিক অনিশ্চয়তা দূর হবে।

অর্থ বিভাগ বলেছে, এই স্কিম চালু হলে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সব কর্মক্ষম নাগরিক এর আওতায় আসবেন। প্রবাসীরাও এতে অংশ নিতে পারবেন।

ধারাবাহিকভাবে নির্দিষ্ট অঙ্কের মাসিক চাঁদা প্রদানসাপেক্ষে সবাইকে পেনশনের আওতায় আনা হবে।

চাঁদার পরিমাণ কত হবে এবং পেনশনভোগী কীভাবে কতটা সুবিধা পাবেন, তা নির্ধারণের জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং তারা তা নির্ধারণ করবে।

প্রত্যেক নাগরিকের জন্য একটি আলাদা পেনশন অ্যাকাউন্ট থাকবে। ফলে চাকরি পরিবর্তন করলেও পেনশন অ্যাকাউন্ট অপরিবর্তিত থাকবে। ওই অ্যাকাউন্টে সংশ্লিষ্ট জন যে পরিমাণ চাঁদা দেবেন, তার বাইরে একটি অংশ দেবে সরকার।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাসিক চাঁদা জমা দিতে হবে। এরপর মেয়াদ শেষে পেনশনভোগীদের সুবিধা দেয়া হবে। আমৃত্যু পেনশন সুবিধা বহাল থাকবে।

পেনশনের অর্থ এককালীন উত্তোলন করা যাবে না। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে তোলা যাবে।

সবার জন্য পেনশন চালু হওয়া বিষয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চা দোকানদার, পান দোকানদারসহ সবাইকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনা হবে।’

মোস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাই মাসিক চাঁদা দেবেন, সরকারও কিছু অংশ দেবে। এখান থেকে যে তহবিল গঠিত হবে, সেই তহবিল লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা হবে। ওই বিনিয়োগ থেকে অর্জিত আয় পেনশনভোগীদের লভ্যাংশ হারে দেয়া হবে।

এ বিভাগের আরো খবর