বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দামে কারসাজি: বাটার শীর্ষ নির্বাহীকে তলব

  •    
  • ২৯ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:৪৪

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাটার শোরুমে অভিযান এবং জরিমানার পর বাটার বাংলাদেশ প্রধান তাকে ফোন করে জরিমানার কারণ জানতে চেয়েছিলেন। তিনি তাকে বলেছেন, বাংলাদেশের আইন মেনে ব্যবসা করতে হবে। এখানে বাজারে একটি দামে পণ্য ছাড়ার পর তা বাড়ানোর সুযোগ নেই।

বাজারে আগে থেকে ছাড়া পণ্যের দাম ঈদের আগে অবৈধভাবে বাড়িয়ে দেয়ার প্রমাণ পাওয়ার পর বাংলাদেশে বাটার শীর্ষ নির্বাহীকে তলবের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ঈদের পরই এ কাজের ব্যাখ্যা দিতে হবে কোম্পানিটিকে।

ঈদের আগে ফ্যাশন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়ার যে অভিযোগ ক্রেতারা বছরের পর বছর ধরে করে আসছেন, একই কাজ এবার করেছে বহুজাতিক কোম্পানি বাটা।

চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, কুমিল্লা, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বিদ্যমান প্রাইস ট্যাগের ওপর নতুন ট্যাগ লাগিয়ে বেশি দাম নেয়ার প্রমাণ পেয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ জন্য ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে একেকটি বিক্রয়কেন্দ্রকে।

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্রেও একই চিত্র দেখা গেছে। জেলায় জেলায় জরিমানার পর রাজধানীতে আবার পুরোনো প্রাইস ট্যাগে যেখানে দাম লেখা থাকে, সেই অংশটা কেটে নতুন দাম উল্লেখের বিষয়টি দেখা গেছে।

বাটার এই দাম জালিয়াতির বিষয়ে কোম্পানিটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বক্তব্য নিতে নিউজবাংলা একাধিকবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কেউ ফোন ধরেননি। অসংখ্যবার চেষ্টার পর কোম্পানি সচিব হাশিম রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

‘এ বিষয়ে আমার কথা বলার কোনো এখতিয়ার নেই। আপনি হেড অফিসে যোগাযোগ করুন’- এটুকু বলেই ফোন কেটে দেন বাটার কোম্পানি সচিব।

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান নিউজবাংলাকে জানান, দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাটার শোরুমে অভিযান এবং জরিমানার পর বাটার বাংলাদেশ প্রধান তাকে ফোন করে জরিমানার কারণ জানতে চেয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘তিনি বিভিন্ন প্রশ্ন করেছিলেন। আমি বলেছি, বাংলাদেশে কিছু করতে হলে আইন মেনেই করতে হবে। আমি তাকে ঈদের পর তলব করেছি। অন্য যারা করছে তাদেরও তলব করব। যেখানে হাত দিচ্ছি, সেখানেই ম্যানিপুলেট দেখতে পাচ্ছি।’

বাটার বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপকরা জানিয়েছেন, কোম্পানির পক্ষ থেকেই আগে থেকে ছাড়া পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। তাদের সে নির্দেশ মানতেই হবে।

তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান জানান, কোনো একটি দামে বাজারে পণ্য ছাড়ার পর সেটির দাম কমানো যাবে। তবে বাড়ানোর সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ‘আমরা যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের জরিমানা করেছি। ওরা (বাটা) তাইলে তো আমাদের অভিযানের বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারত। কিন্তু আইন ভেঙেছে বলেই তারা যায়নি।

‘দাম বেশি নেয়ার পক্ষে কোম্পানিগুলোর বহু রকম যুক্তি থাকবে, বহু কথা বলবে, কোনটাই সঠিক নয়। আইনের মধ্যে যতটুকু ভোক্তার অধিকার রক্ষা করা যায় ততটুকুই আমরা করব।’

২০ এপ্রিল এক ক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতে বরিশালের চকবাজার এলাকায় শোরুমে অভিযান চালিয়ে তাদের সতর্ক করা হয় এবং ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

একই দিন হবিগঞ্জ শহরের কালীবাড়ি রোডের বাটার শোরুমে অভিযানে পুরোনো ট্যাগের উপর উচ্চমূল্যের নতুন ট্যাগ পাওয়া যায়। এ কারণে শোরুমটিকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

তার আগের দিন বাটার কু‌মিল্লা কা‌ন্দিরপাড় শোরুমেও আগের প্রাইস ট‌্যা‌গের জায়গায় নতুন ক‌রে প্রাইস ট‌্যাগ লা‌গি‌য়ে বে‌শি দামে জুতা বি‌ক্রির অপরাধে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

২৪ এপ্রিল রাজশাহী নগরীর নিউ মার্কেট আউটলেটকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

২৮ এপ্রিল এক নারী ক্রেতার একই ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে ফরিদপুরের বাটা শো-রুমকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছে।

এর আগে ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের সানমার ওশ্যান সিটির বাটার শোরুম সতর্ক করাসহ এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

বিভিন্ন জেলায় জরিমানায় পড়েও কোম্পানিটি ঢাকার আউটলেটেও বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে। বাটার গুলশান, শেওড়াপাড়ার, বাড্ডা শোরুম ঘুরে কারসাজির প্রমাণও মিলেছে। তবে দাম বেশি নেয়ার নতুন বুদ্ধি হিসাবে শুধু প্রাইস ট্যাগ নতুন না লাগিয়ে যে কাগজের উপর দাম লেখা হয় সে কাগজ কেটে ফেলে দিয়ে নতুন করে দাম পরিবর্তন করছে কোম্পানিটি। এতে আগেই শোরুমে তোলা জুতায় ক্ষেত্র বিশেষে এক শ থেকে তিন শ টাকা পর্যন্ত বেশি নেয়া হচ্ছে।

রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়া রাস্তার পশ্চিম পাশের বাটার শোরুমের ইনচার্জ মাসুদ বলেন, ‘জুতা তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীতে দাম বেড়েছে। এজন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে পুরাতন লটের অধিকাংশ জুতায় ১০০ টাকা দাম বেড়েছে, কোনটায় ২০০ টাকাও বাড়ছে। এখানে আমাদের কিছু করার নাই।

‘কোম্পানির হেড অফিস থেকেই দাম বাড়ায়। জুতার গায়ে যে কোড লেখা আছে, সেই কোডের বিপরীতে কম্পিউটারের দাম এন্ট্রি করা রয়েছে। সারাদেশে সবগুলো শোরুমে নির্দিষ্ট কোডের জুতা একই দামে বিক্রি করতে হয়। এক জায়গায় বাড়লে সব জায়গায়ই বাড়ে।’

শেওড়া পাড়ার পূর্ব পাশের শোরুম ইনচার্জ খায়রুল ইসলাম দাবি করেন ‘কোম্পানি চাইলে যে কোন জিনিসের দাম বাড়াতে পারে।’

‘সরকারও যেমন ইচ্ছা করলে যে কোনো জিনিসের দাম বাড়াতে পারে, কোম্পানি চাইলেও বাড়াতে পারে। বিভিন্ন জায়গায় জরিমানা হয়েছে হয়ত আগের ট্যাগ রয়ে যাওয়ায়। আগের ট্যাগ তুলে নতুন ট্যাগ লাগালে কোন সমস্যা নাই।’

এ বিভাগের আরো খবর