বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অবৈধভাবে দাম বাড়িয়ে নতুন অপকৌশলে বাটা

  •    
  • ২৯ এপ্রিল, ২০২২ ১৫:৫২

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানে বাজারে পণ্য তোলার পর সেটার দাম আর বাড়াতে পারে না। আবার কেউ চাইলেই ৫০০ টাকার জিনিস ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারে না।’

বাজারে এক দামে পণ্য ছেড়ে অবৈধভাবে দাম বাড়িয়ে নতুন স্টিকার লাগানোর ঘটনায় জেলায় জেলায় জরিমানার পর বাটা এবার নতুন কৌশল নিয়েছে। এখন পুরনো স্টিকার তুলে ফেলে পণ্যের বাড়তি দাম আদায় করছে তারা।

ঈদের আগে আগে বাজারে নানা সময় ভোগ্য ও ফ্যাশন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে এবার বহুজাতিক কোম্পানিও একই কাজ করছে।

চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, হবিগঞ্জ, রাজশাহী, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলায় পুরনো প্রাইস ট্যাগের ওপর নতুন প্রাইস ট্যাগ লাগানোর প্রমাণ পেয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কোম্পানিটির বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্রকে ২৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করেছে।

প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাটার বিক্রয়কর্মী ও শোরুম ব্যবস্থাপক এভাবে বাড়তি দাম আদায়ের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। রাজশাহীতে যে বিক্রয়কেন্দ্রকে জরিমানা করা হয়েছে, তার ব্যবস্থাপক নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, বাড়তি দামের স্টিকার তাদের কোম্পানির পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে।

জরিমানার পরও কোম্পানিটি দামে কারসাজি থামছে না। বাটার গুলশান, শেওড়াপাড়ার, বাড্ডা শোরুম ঘুরে বাড়তি দাম আদায়ে প্রমাণ মিলেছে।

দাম বাড়িয়ে তারপর ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করায় জরিমানা করা হয় বাটাকে। ফাইল ছবি/নিউজবাংলা

তবে এবার নতুন কৌশল নিয়েছে। আগের যে স্টিকারে যেখানে প্রাইস ট্যাগ লাগানো ছিল, সেই জায়গাটি কেটে ফেলে বাড়তি দাম লিখে রাখছে।

যে দামে বাজারে আনা হয়েছিল জুতা, ব্র্যান্ড ভেদে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে কয়েক শ টাকা।

শেওড়া পাড়ায় দুই শ গজ ব্যবধানের রাস্তার দুই পাশে কোম্পানির দুটি শো রুম। পূর্ব দিকের শোরুমে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কিছু চামড়ার স্যান্ডেলে আগের প্রাইস তুলে নতুন প্রাইস ট্যাগ লাগানো হয়েছে।

যে কাগজের উপর প্রাইস ট্যাগ লাগানো হয় সে কাগজে পুরনো প্রাইস ট্যাগের আঠা লেগে থাকতে দেখা গেছে।

এখানাকার এক বিক্রয় কর্মী নিউজ বাংলাকে বলেন, ‘গত কিছু দিন থেকে দাম বেড়েছে বাটার সব জুতায়। নতুন পুরাতন প্রায় সব জুতারই বাড়তি দাম এখন।

এভাবে আগে বাজারে ছাড়া প্রতিটি জুতার দাম কমপক্ষে এক শ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

শেওড়াপাড়া রাস্তার পশ্চিম পাশের বাটার শোরুমের ইনচার্জ মাসুদ বলেন, ‘জুতা তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীতে দাম বেড়েছে। এজন্য কোম্পানির পক্ষ থেকে পুরাতন লটের অধিকাংশ জুতায় ১০০ টাকা দাম বেড়েছে, কোনটায় ২০০ টাকাও বাড়ছে। এখানে আমাদের কিছু করার নাই।

‘কোম্পানির হেড অফিস থেকেই দাম বাড়ায়। জুতার গায়ে যে কোড লেখা আছে, সেই কোডের বিপরীতে কম্পিউটারের দাম এন্ট্রি করা রয়েছে। সারাদেশে সবগুলো শোরুমে নির্দিষ্ট কোডের জুতা একই দামে বিক্রি করতে হয়। এক জায়গায় বাড়লে সব জায়গায়ই বাড়ে।’

শেওড়া পাড়ার পূর্ব পাশের শোরুম ইনচার্জ খায়রুল ইসলাম দাবি করেন ‘কোম্পানি চাইলে যে কোন জিনিসের দাম বাড়াতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘কোম্পানি প্রাইস বাড়ায় আবার কমায়ও। সরকারও যেমন ইচ্ছা করলে যে কোনো জিনিসের দাম বাড়াতে পারে, কোম্পানি চাইলেও বাড়াতে পারে।’

তাহলে জরিমানা করছে কেন প্রশাসন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘জরিমানা হয়েছে হয়ত আগের ট্যাগ রয়ে যাওয়ায়। আগের ট্যাগ তুলে নতুন ট্যাগ লাগালে কোন সমস্যা নাই।

‘প্রোডাক্ট কস্টিং, ভাড়া সবকিছু মিলে কোম্পানি যখন দেখে পোষাচ্ছে না, তখন তারা দাম বাড়াতেই পারে। তবে আমাদের কিছু করা নেই। কোম্পানি যদি বলে আজ থেকে এ জুতার প্রাইস বেশি হবে আমাকে ওই প্রাইসেই বিক্রি করতে হবে।’

কোম্পানির গুলশান শোরুমের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘ওভার ট্যাগিং করলে কাস্টমার ধরতে পারে, তখন বেশি দাম নিয়ে কথা উঠে। তাই পুরনো ট্যাগ পুরোটা ফেলে নতুন করে ট্যাগ বসানো হচ্ছে। এতে দাম যে আগের চেয়ে বেড়েছে তা বোঝার কোন উপায় নেই। কারণ, সেখানে ওভার ট্যাগিং হচ্ছে না, পুরো ট্যাগই পরিবর্তন হচ্ছে।’

একই কথা জানান বাড্ডা শোরুমের ম্যানেজার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘একই মডেলের জুতা সব জায়গায় একই থাকবে। দাম বাড়লে আমরা ওভার ট্যাগিং করি না। কোম্পানি যে প্রোডাক্টের দাম বাড়ায়, সে ট্যাগ আমরা উঠায়া নতুন করে ট্যাগ লাগাই।

‘দাম বাড়লে একই মডেলের নতুন পুরাতন সবগুলারই দাম বাড়ে। মনে করেন আমার কাছে ৫ হাজার পেয়ার (জোড়া) আছে। দাম বাড়লে নতুন যেগুলা আসবে সেগুলারও বাড়বে, যেগুলা আছে সেগুলারও দাম বাড়ছে। তবে সব শোরুমে একই জুতা পাওয়া যায় না। বিশেষ করে গুলশান-বনানীর জুতা আর বাড্ডার জুতার মধ্যে মডেলর ব্যতিক্রম থাকে। গুলশানে যেগুলো পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগই অন্য শোরুমে পাওয়া যায় না। তাই সেসেব শোরুমে পুরাতন স্টকের জুতাও কম।’

তবে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানে বাজারে পণ্য তোলার পর সেটার দাম আর বাড়াতে পারে না। আবার কেউ চাইলেই ৫০০ টাকার জিনিস ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারে না।

তিনি বলেন, ‘আমরা যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের জরিমানা করেছি, ওরা তাইলে তো আমাদের অভিযানের বিরুদ্ধে আদালতে যেতে পারত কিন্তু আইন ভেঙেছে বলেই তারা যায়নি।’

কোম্পানির বিক্রয়কর্মীরা যে বলছে তারা চাইলে দাম বাড়াতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাদের বহু রকম যুক্তি থাকবে, বহু কথা বলবে, কোনটাই সঠিক নয়। আইনের মধ্যে যতটুকু ভোক্তার অধিকার রক্ষা করা যায় ততটুকুই আমরা করব। কেউ ইচ্ছা করলেই দাম বাড়াতে পারবে না।’

এ বিষয়ে বাটার শীর্ষ কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। কোম্পানিটির মার্কেটিং বিভাগে হেড ইফতেখার মল্লিকের মোবাইলে কল করা হলে নম্বরটি ব্যস্ত দেখায়।

পরে কোম্পানি সচিব হাশিম রেজার মোবাইলে বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভি করেননি। এমনিকি ম্যাসেজ পাঠিয়েও কোন সাড়া পাওয় যায়নি।

এ বিভাগের আরো খবর