ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগের শেষ কর্মদিবসটা ভালো গেল না পুঁজিবাজারে। কমল বেশির ভাগ শেয়ারের দর, সেই সঙ্গে কমল সূচক আর লেনদেন।
আগের দিন লেনদেন হয়েছিল গোটা রমজানের সর্বোচ্চ। আর পরপর দুই দিন তা দেড় শ কোটি টাকা করে বেড়েছিল। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসেও লেনদেন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা থাকলে তা হাজার কোটি টাকা ছাড়াতেও পারত।
কিন্তু তা হয়নি। টানা চার কর্মদিবস সূচক বাড়ার পর এক দিনের সংশোধন শেষে আবার দুই দিন সূচক অবস্থান ধরে রাখার পর বৃহস্পতিবার কমল ২১ পয়েন্ট। লেনদেন কমল ৬২৫ কোটি টাকারও বেশি।
আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৯৩২ কোটি ৪৯ লাখ ৩২ হাজার টাকা। পরের দিন হলো ৮৬৯ কোটি ৮১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
এদিন বেড়েছে ৯০টি শেয়ারের দর, কমেছে ২৪৭টির আর দর ধরে রাখতে পারে ৪৯টি।
পুঁজিবাজারে এর পরের লেনদেন হবে ঈদের ছুটি শেষে।
সব মিলিয়ে রোজায় সূচক কমল ১০২ পয়েন্ট। এই মাস শুরুর আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৭৫৭ পয়েন্ট, আর মাস শেষ হয়েছে ৬ হাজার ৬৫৫ পয়েন্টে।
এই মাসের ১২ কর্মদিবসের মধ্যে সূচক পড়েছে ১০ দিন, বেড়েছে বাকি ৯ দিন। এর মধ্যে এক দিন বেড়েছে কেবল ০.০৭ পয়েন্ট।
তবে বাজার পতনের এই প্রবণতাকে স্বাভাবিক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বুধবার কয়েকটি ব্যাংকের লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীদের মনঃপূত হয়নি। সূচকে প্রভাব ফেলে, গত কয়েক দিনে বহুজাতিক এমন বেশ কয়েকটি কোম্পানির আয় কমে যাওয়ার তথ্য এসেছে।
আয় কমার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারদর কিছুটা কমেছে অনেকটাই। এগুলোই সূচকে প্রভাব ফেলেছে।
ট্রেজার সিকিউরিটিজের চিফ অপারেটিং অফিসার মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ্ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভিন্ন কোম্পানির ইপিএস ঘোষণা করা হচ্ছে। যার কারণে একটু দর ওঠানামা চলছে। আজকের টার্নওভারও খারাপ নয়। আগামী ৮ মে থেকে যে সপ্তাহ শুরু হবে সেই সপ্তাহে যদি লেনদেন এমন ৮০০ থেকে ৯০০ কোটির মধ্যে টার্নওভার থাকে, তাহলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে আশা করা যায়।’
আবার ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নতুন করে বিনিয়োগে যাওয়ার ইচ্ছাও সেভাবে ছিল না। ছুটি শেষে বাজার দেখে তারা বিনিয়োগে যাবেন।
মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপক শেখ ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘এই সপ্তাহে বেশ কিছু শেয়ারের দাম বেড়েছে। সেগুলোতে যারা লাভ করতে পেরেছে তারাই কিছুটা শেয়ার বিক্রি করেছে। এ কারণে দর কমে বাজার নেতিবাচক হয়েছে।’
এদিন বলতে গেলে কোনো খাতেই দিনটি ভালে যায়নি। ব্যাংক, বিমা, বস্ত্র, প্রকৌশল, ওষুধ, রসায়ন, সিমেন্ট, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, খাদ্যসহ প্রায় সব খাতেই কমেছে বেশির ভাগ শেয়ারের দর।
ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
সবচেয়ে বেশি সূচক কমেছে ওয়ালটন হাইটেকের দরপতনে। কোম্পানিটির শেয়ার দর ১.১৫ শতাংশ কমায় সূচক পড়েছে ৫.১ পয়েন্ট।
এর পরেই ১.৪১ পয়েন্ট সূচক কমেছে রেকিট বেনকিজারের দরপতনে। বছরের প্রথম প্রান্তিকে আয় কমে যাওয়ার তথ্য দেয়ার পর কোম্পানিটির শেয়ারদর কমে গেছে ৪.৭১ শতাংশ।
সূচক ১.৩ পয়েন্ট কমেছে রবির দরপতনে। শেয়ারদর ০.৬১ শতাংশ কমায় দরপতনের কারণে এই পরিমাণ সূচক কমেছে।
গ্রামীণফোনের শূন্য দশমিক ১৯ শতাংশ দরপতনের কারণে সূচক কমেছে ১ পয়েন্ট।
এর পরে আর কোনো কোম্পানি সূচক এক পয়েন্টের বেশি ফেলতে পারেনি।
সূচক পতনের শীর্ষ দশে রয়েছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, তিতাস গ্যাস, এমজেএল বাংলাদেশ, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, পাওয়ার গ্রিড এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবি।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানির সূচক ফেলেছে ১৩.৭৩ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ২.২৯ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে পূবালী ব্যাংক। ব্যাংকটির ৬.৭৪ শতাংশ দরবৃদ্ধিতে ওই পরিমাণ সূচক বেড়েছে।
এর পরেই ১.৬৫ পয়েন্ট সূচকে যোগ করেছে ইউনাইটেড পাওয়ার। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ০.৯ শতাংশ।
জিপিএইচ ইস্পাতের ৫.১৯ শতাংশ দর বৃদ্ধির কারণে ১.৫১ পয়েন্ট সূচক বেড়েছে।
১.০৮ পয়েন্ট সূচকে যোগ করেছে বেক্সিমকো লিমিটেড। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ০.৬৮ শতাংশ।
আর কোনো কোম্পানির দর বৃদ্ধির কারণে সূচকে 1 পয়েন্টের বেশি যোগ হয়নি।
সূচক বাড়াতে ভূমিকা রাখা শীর্ষ দশটি কোম্পানির বাকিগুলো হলো, সামিট অ্যালায়েন্স, ইউনিক হোটেল এক্সিম ব্যাংক, এসপি সিরামিকস, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স ও বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন-বিএসসি।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানির বাড়িয়েছে ৯.০৭ পয়েন্ট।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
সবচেয়ে বেশি ৯.৮৩ শতাংশ বেড়েছে বন্ধ কোম্পানি বিডি ওয়েল্ডিংয়ের দর। আগের দিন কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮ টাকা ৩০ পয়সায়। ১ টাকা ৮০ পয়সা পর্যন্ত বাড়ার সুযোগ ছিল। এই পরিমাণই বেড়েছে দর।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়েছে সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের দর বেড়েছে । আগের দিন ২৭ টাকা ৭০ পয়সায় হাত বদল হওয়া প্রতিটি শেয়ার আজ লেনদেন হয়েছে ৩০ টাকা ৪০ পয়সায়।
তৃতীয় স্থানে থাকা শাইনপুকুর সিরামিকসের দর বেড়েছে ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। প্রতিটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ২৮ টাকা ৩০ পয়সায়। গতকাল যেটি ছিল ২৬ টাকা ৪০ পয়সা।
এর পরেই পূবালী ব্যাংকের ৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ দর কমে ২৮ টাকা ৫০ পয়সায় প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। বুধবার শেয়ারের দাম ছিল ২৬ টাকা ৭০ পয়সা।
এছাড়া সায়হাম কটন মিলসের দর ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ, আরএসআরএম স্টিলের দর ৫.৬৮ শতাংশ, ফারইস্ট ফাইনান্সের দর ৫.৬৬ শতাংশ, জিপিএইচ ইস্পাতের দর ৫.১৮ শতাংশ। এসইএমএল লেকচার ইকুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ডের দর ৫ শতাংশ, এবং হাওয়েল টেক্সটাইলের দর ৪.৩৫ শতাংশ বেড়েছে।
দরপতনের শীর্ষ ১০
শীর্ষ ১০টি কোম্পানি দরপতন হয়েছে দিনের সর্বোচ্চ সীমা ৫ শতাংশ ও এর আশেপাশে।
৫ দশমিক ৯২ শতাংশ দর কমেছে সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের। আগের দিন ১৩ টাকা ৫০ পয়সায় হাত বদল হওয়া প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২ টাকা ৭০ পয়সায়।
কোম্পানিটি গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ৪ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, যার ৩ শতাংশ নগদ আর এক শতাংশ বোনাস। এ কারণে কোম্পানিটির কোনো মূল্যসীমা ছিল না। ফলে সেটি দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ৫ শতাংশের বেশি কমতে পেরেছে।
এরপরের অবস্থানে ছিল প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের। আগের দিন ৯৮ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হওয়া প্রতিটি শেয়ারের দর ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমে ৯৩ টাকা ৯০ পয়সা লেনদেন হয়েছে। এ নিয়ে পর পর দুই দিন কোম্পানিটির শেয়ারদর দরপতনের সর্বোচ্চ সীমায় লেনদেন হয়েছে। এর আগের দিন বেড়েছিল প্রায় ১০ শতাংশ।
মীর আক্তারের দর কমেছে ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। প্রতিটি শেয়ার ৬১ টাকা ১০ পয়সা থেকে কমে ৫৮ টাকা ১০ পয়সায় হাতবদল হয়েছে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি তার ইস্যুমূল্যের কাছাকাছি নেমে এসেছে।
বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৫৪ টাকায় আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কিনেছেন ৬০ টাকায়।
এছাড়া ৪ শতাংশের বেশি দর কমেছে সি পার্ল, দেশবন্ধু পলিমার, বসুন্ধরা পেপার মিলস, রেকিট বেনকিজার, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, ইয়াকিন পলিমার ও ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের দর।
আরও পাঁচটি কোম্পানির দর ৪ শতাংশের বেশি আর ১৫টি কোম্পানির দর কমেছে ৩ শতাংশের বেশি।