টাকার মান কমায় গ্রামীণফোনের মুনাফা কমেছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের (জানুয়ারি-মার্চ) আর্থিক হিসাব বুধবার প্রকাশ করেছে দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন। তাতে বলা হয়েছে, আধুনিকায়ন ব্যয় ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে এই তিন মাসে কর পরবর্তী মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮০৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা।
২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ৬ টাকায় নেমে এসেছে। ২০২১ সালের একই সময়ে ছিল ৬ টাকা ৬০ পয়সা। এ হিসাবেই এই তিন মাসে ইপিএস কমেছে ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
গ্রামীণফোনের চলতি আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি ৩ হাজার ৬৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা আয় করেছে; যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
এই তিন মাসে ৫ লাখ নতুন গ্রাহক গ্রামীণফোনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। ফলে সব মিলিয়ে এখন জিপির গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৩৭ লাখ। মোট গ্রাহকের ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ বা ৪ কোটি ৪৬ লাখ কোটি গ্রাহক ইন্টারনেট সেবা ব্যবহার করেন। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় যা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার মান কমেই চলেছে। বুধবারও আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের বিপরীতে টাকা ২৫ পয়সা দর হারিয়েছে। আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে বুধবার প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই একই জায়গায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর। এর পর থেকেই বাড়তে থাকে ডলারের দর।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এই ৯ মাসে বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে প্রায় ২ শতাংশ।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী ইয়াসির আজমান বলেন, ‘চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক গ্রামীণফোনের জন্য বিভিন্ন কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গত ২৬ মার্চ গ্রামীণফোন বাংলাদেশে তার পথচলার ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে। সুদীর্ঘ এ পথচলায় সমাজের ক্ষমতায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশের কানেকটিভিটি পার্টনার হিসেবে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘গত মার্চে নিয়ন্ত্রক সংস্থা দেশের সর্ববৃহৎ তরঙ্গ নিলামের আয়োজন করে, যেখানে গ্রামীণফোন অংশ নিয়ে ২.৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে সর্বোচ্চ বরাদ্দকৃত ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ক্রয় করে। দেশে প্রথমবারের মতো ই-সিম উন্মোচন করেছে গ্রামীণফোন। এর ফলে গ্রাহকরা তাদের হ্যান্ডসেটে প্রচলিত সিম কার্ড ছাড়াই ই-সিমের মাধ্যমে মোবাইল কানেকটিভিটি সুবিধা পাবেন।
‘কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির তৃতীয় বছরে আমরা প্রবেশ করেছি; বাংলাদেশে কোভিডের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি গতিশীল হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশে কোভিড শনাক্তের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এ প্রান্তিকে গ্রাহকদের উন্নত ও গুণগত মানের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আমরা নেটওয়ার্ক উন্নীত ও তরঙ্গ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছি।
‘ফলে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে আমাদের গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৩৭ লাখ। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে চলমান মডার্নাইজেশন ও ট্রান্সফরমেশনের ফল দেখতে পাচ্ছি, যা আমাদের দক্ষতা, সক্ষমতা, টুলস ও পার্টনারশিপের সমন্বয়ে একটি ভবিষ্যৎ উপযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে এবং সামনের দিনগুলোতে আমাদের প্রবৃদ্ধির জন্য চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে।’
গ্রামীণফোনের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা ইয়েন্স বেকার বলেন, ‘ইবিআইটিডিএর ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ২০২২ সালে প্রথম তিন মাসে সামগ্রিক ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। নেটওয়ার্কে বিনিয়োগ ও আধুনিকায়ন উদ্যোগ ত্বরান্বিত করার ফলে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আধুনিকায়ন ব্যয় ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে কর পরবর্তী মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ দশমিক ১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮০৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে নিট মুনাফা মার্জিন দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৩ শতাংশ।’
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে গ্রামীণফোন ৩৯১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা নেটওয়ার্ক কাভারেজ ও বিস্তৃতিতে বিনিয়োগ করেছে। এ প্রান্তিক শেষে গ্রামীফোনের মোট নেটওয়ার্ক সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭২৪। প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসে কর, ভ্যাট, শুল্ক, ফি, ফোরজি লাইসেন্স এবং তরঙ্গ বরাদ্দ বাবদ ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা সরকারি কোষগারে জমা দিয়েছে, যা এর মোট রাজস্বের ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
সুদ, কর, অবচয় ও অ্যামোর্টাইজেশন বাদে আয়কে ইবিআইটিডিএ বলা হয়ে থাকে।