টানা পতনমুখি পুঁজিবাজার চাঙাভাবে ফেরার ইঙ্গিত দিয়ে পর পর চার দিন সূচক বেড়ে সোমবার একদিন পতন হলেও পরের দিনই বেড়েছে সূচক।
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দর সংশোধন আর কত দীর্ঘ হবে- এমন আলোচনার মধ্যেই পাঁচ কর্মদিবসের চার দিনই সূচক বেড়েছে।
সোমবারের সংশোধনে লেনদেন অনেকটাই কমে গেলেও এই ক্ষেত্রেও দেখা গেছে ইতিবাচক প্রবণতা। আগের দিনের তুলনায় দেড়শ কোটি টাকারও বেশি শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।
মঙ্গলবার শুরুতে সূচক বেড়ে লেনদেন শুরু হলেও পরে তা উঠানামা করতে থাকে। ক্রয়চাপে সূচক উঠে মূলত শেষ ৩৫ মিনিটে। শেষ পর্যন্ত সূচক বাড়ে ১০ পয়েন্ট, যদিও লেনদেন শেষ হওয়ার মিনিট দশেক আগে বেড়েছিল ২০ পয়েন্ট। শেষ সমন্বয়ের সমন্বয়ে সেখান থেকে কিছুটা কমে।
রোজার প্রথম দিন থেকেই পুঁজিবাজারে পতনের প্রবণতা দেখা দেয়। মাসের অর্ধেকটা যেতে না যেতে প্রায় তিনশ পয়েন্ট নাই হয়ে যায় সূচক থেকে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তখন পুঁজিবাজারে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার সূচক ৫৯ পয়েন্ট পড়ে গিয়ে বেলা শেষে ৪৭ পয়েন্টের উত্থান বিনিয়োগকারীদের জন্য ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল। যারা সেট বুঝতে পেরেছে, তারা লাভবান হয়েছেন। এরপর আরও তিন দিন বাড়ে সূচক।
পর পর চারদিন উত্থানে শেয়ারদর বাড়ার সুযোগ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশের সোমবার প্রফিট টেকিংয়ের প্রবণতা দেখা দেয়। এটিকে বাজারের সহজাত প্রবণতা হিসেবেই দেখা হচ্ছিল।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
পড়তে পড়তে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে মিয়া আব্দুর রশিদ সিকিউরিজিটের ব্যবস্থাপক শেখ ওহিদুজ্জামান স্বাধীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘টানা চার দিন উত্থানের পর গতকাল দর সংশোধন হয়েছিল। শেয়ারের দাম কমায় আবার পুনর্বিনিয়োগ হয়েছে কিছু শেয়ারে। এ কারণেই সূচক ও লেনদেন বেড়েছে।’
আগের দিনের মতোই এদিন দেখা গেছে বিমা খাতের প্রাধান্য। তবে প্রায় সব খাতেই দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। এদিন ১৬০টি কোম্পানির দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ১৬৩টির দাম। আর অপরিবর্তিত দামে লেনদেন হয়েছে ৫৮টি কোম্পানির শেয়ার।
বস্ত্র খাতের ২৬টি কোম্পানির দর বেড়েছে। বিপরীতে ২১টির দাম কমেছে ও ১২টি অপরিবর্তিত ছিল। ব্যাংক খাতের ১৬টির দাম বেড়েছে, কমেছে ৯টির ও ৮টির দাম অপরিবর্তিত ছিল।
এছাড়া প্রকৌশল খাতের ১৯টি, ফার্মাসিউটিক্যালসের ১৩টি ও বিবিধ ৯টি ও খাদ্য খাতের ১০টি কোম্পানির দর বৃদ্ধি পেয়েছে।
সূচক বাড়াল যারা
সবচেয়ে বেশি ৬.৪২ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে ওয়ালটন হাইটেক। কোম্পানিটির দর ২.৪৮ শতাংশ বৃদ্ধির কারণে ওই পরিমাণ পয়েন্ট সূচকে যোগ হয়েছে।
ম্যারিকোর শেয়ারদর ১.৯২ শতাংশ বাড়ায় সূচকে যোগ হয়েছে ১.০৭ পয়েন্ট। আর কোনো কোম্পানির দর বৃদ্ধিতে সূচকে ১ পয়েন্ট যোগ হয়নি।
এছাড়া সোনালী পেপার ০.৯৫, পাওয়ার গ্রিড ০.৮১, আইপিডিসি ০.৬৭, ট্রাস্ট ব্যাংক ০.৬৪, তিতাস গ্যাস ০.৬, আইসিবি ০.৫৫, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ০.৫৩ ও এমজেএল বাংলাদেশ ০.৫৩ পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই দশটি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১২.৭৭ পয়েন্ট।
সূচক পতনে ভূমিকা রাখা শীর্ষ দশের কোম্পানিগুলো হলো- ট্রাস্ট ব্যাংক, বিএসআরএম লিমিটেড, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বিকন ফার্মা, বিএসআরএম স্টিল, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, রবি ও প্রাইম ব্যাংক।
এই দশটি কোম্পানির দর পতনের কারণে সূচক পড়েছে ৭.৯২ পয়েন্ট।
দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০
দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশে পেপার ও প্রিন্টিং খাতের কোম্পানির আধিপত্য দেখা গেছে। আগের দিন ৪.৯৮৪ শতাংশ বৃদ্ধির পর আজকে ৮.০১ শতাংশ দর বেড়েছে মনোস্পুল পেপারের। ২০২ টাকায় বিক্রি হওয়া শেয়ারটির দর দাঁড়িয়েছে ২১৮ টাকা ৩০ পয়সায়।
এরপরেই দর বেড়েছে বসুন্ধরা পেপারের। ৬.৯৫ শতাংশ দাম বেড়ে প্রতিটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে ৫৮ টাকা ৮০ পয়সায়।
দর বাড়ার তালিকায় তৃতীয় স্থানে সোনালী পেপার। আগের দিন ৮৫২ টাকা ৪০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে প্রতিটি শেয়ার। ৬.৬৯ শতাংশ বেড়ে আজকে সেটি হাতবদল হয়েছে ৯০৯ টাকা ৫০ পয়সায়।
এছাড়া পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিন্টিংয়ের দর বেড়েছে ৬.৫৬ শতাংশ।
এছাড়া পেনিনসুলার দর ৬.৫৮ শতাংশ, সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ৬.১০ শতাংশ, পারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের ৫.৮৮ শতাংশ, জেএমআই হসপিটালের ৫.৭৯ শতাংশ, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজের ৫.১০ শতাংশ ও তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের দর বেড়েছে ৪.৮২ শতাংশ।
দর পতনের শীর্ষ ১০ এর তালিকার শীর্ষে ইবিএলকে দেখালেও আসলে তা ছিল না। কোম্পানিটি এবার বিনিয়োগকারীদেরকে ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে, যার অর্ধেক নগদে আর অর্ধেক বোনাসে।
সোমবার রেকর্ড ডেটে শেয়ারদর ছিল ৩৮ টাকা ৪০ পয়সা্। সাড়ে ১২ শতাংশ বোনাস শেয়ার সমন্বয়ে দাম হয় ৩৪ টাকা ১০ পয়সা। দিন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা। ৪০ পয়সা মুনাফার পাশাপাশি শেয়ার প্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা নগদ লভ্যাংশও মুনাফা হবে।
নগদ লভ্যাংশ সমন্বয়ের কথা না থাকলেও দেশের পুঁজিবাজারে নগদে দেয়া লভ্যাংশের সম পরিমাণ বা তার চেয়ে বেশি শেয়ারদর কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। তবে ইবিএলের ক্ষেত্রে এমনটি হয়নি।
একই কথা প্রযোজ্য এই তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে দেখানে ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকের। এই ব্যাংকটি এবার লভ্যাংশ দিয়েছে ১০ শতাংশ।
সোমবার রেকর্ড ডেটে দর ছিল ১৫ টাকা ২০ পয়সা। প্রস্তাবিত ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার সমন্বয়ে দাম হয় ১৩ টাকা ৮০ পয়সা। তবে দিন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা ৪০ পয়সা। ফলে ৫.২ শতাংশ দরপতন দেখালেও আসলে বিনিয়োগকারীর মুনাফা হয়েছে ৪ শতাংশের বেশি।
দরপতনের শীর্ষ ১০
এদিন আসলে সবচেয়ে বেশি কমেছে আগের দিন সবচেয়ে বশি দর বৃদ্ধি পাওয়া প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর। ৪.৯৪ শতাংশ হারিয়ে ১০৯ টাকা ১০ পয়সার শেয়ারের দাম নেমেছে ১০৩ টাকা ৭০ পয়সায়।
জেমিনি সি ফুডের দর ৪.৯৪ শতাংশ কমে ৪১৭ টাকা, এসএস স্টিলের ৩.৭৮ শতাংশ কমে ১৭ টাকা ৮০ পয়সা, লুবরেফ বাংলাদেশের ৩.৭৪ শতাংশ কমে ৩৬ টাকা, ন্যাশনাল টি কোম্পানির ৩.৬১ শতাংশ কমে ৬৬৩ টাকা ৬০ পয়সা, বিএসআরএমের ৩.৫০ শতাংশ কমে ১০৭ টাকা ৩০ পয়সা, খান ব্রাদার্সের শেয়ার দর ৩.২ শতাংশ কমে ১২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ১০ পয়সা, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের দর ৩.১৪ শতাংশ কমে ৬৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৬১ টাকা ৭০ পয়সা এবং সোনালী লাইফের দর ৩.০৯ শতাংশ কমে ৫৮ টাকা ১০ পয়সা থেকে হয়েছে ৪৫ টাকা ৩০ পয়সা।