বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডলারের উচ্চদরে বিদেশি ঋণধারীদের মাথায় হাত

  •    
  • ২৬ এপ্রিল, ২০২২ ১২:০১

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরফান আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা যেভাবে বাইরের ঋণ লাভজনক মনে করি, তেমন নয়। গত পাঁচ বছর ডলারের দর স্থিতিশীল ছিল। এ জন্য অনেকে বিদেশি ঋণে বেশি উৎসাহী হয়েছে। এখন আবার বিদেশি ঋণে আগ্রহ কমে যাবে।’

বেশ কিছুদিন ধরে বাড়ছে ডলারের দর। এতে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে টাকার বিপরীতে দামও গিয়ে সর্বোচ্চ ঠেকেছে ।

আন্তব্যাংক লেনদেনে টাকার বিপরীতে ডলারের দর যেমন বেড়েই চলেছে, খোলাবাজারেও তা থেমে নেই। ব্যাংক কিংবা মুদ্রাবাজার থেকে নগদ ডলার কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে ৯২ টাকার মতো।

ধারাবাহিকভাবে ডলারের দাম বেড়ে চলায় বিশেষ করে বিদেশি ঋণধারীদের মাথায় হাত।

শিল্পে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় অর্থায়নের জন্য দেশি উৎসের পাশাপাশি এখন বেশিসংখ্যক উদ্যোক্তা বিদেশি ঋণে ঝুঁকছেন। কম সুদের বলে বিদেশি ঋণ গ্রহণ করা ব্যবসায়ীরা ডলারের দর বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন। ফলে দেশি ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সুদ-আসলে যে টাকা পরিশোধ করতে হতো, এখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হবে।

বলা হচ্ছে দেশের তুলনায় বিদেশি ঋণে সুদহার কম। তবে ঋণের অর্থ ডলার বা অন্য কোনো মুদ্রায় দেশে আসে আর তা পরিশোধও করতে হয় বিদেশি সেই মুদ্রায়। এ কারণে বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার যদি বেড়ে যায়, তাহলে ঋণগ্রহীতাদের বেশি দামে তা কিনতে হবে। ফলে তাদের প্রত্যাশিত অর্থের চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হতে পারে।

টানা কয়েক বছর টাকার সঙ্গে বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকলেও এখন পরিস্থিতি অন্য রকম। ডলারের দর হঠাৎ করেই এখন চড়া। আন্তব্যাংকে প্রতি ডলার বিনিময় হার এখন ৮৬.২০ টাকা। তবে বছর কয়েক আগেও ছিল ৭৬ থেকে ৭৭ টাকা।

ফলে সে সময় যারা ঋণ নিয়েছেন ঋণগ্রহীতাদের প্রত্যাশিত অর্থের চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হচ্ছে।

ফলে ৫ বছর আগে যারা বিদেশ থেকে ঋণ এনেছেন, তাদের বিনিময় হারের কারণে ১০ শতাংশ বেশি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।

বছর পাঁচেক আগেও বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণের সুদহার ১২ শতাংশের বেশি থাকায় বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েও বিদেশি ঋণে ঝুঁকতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। তবে এখন দেশে ব্যাংক ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। ভালো ঋণদাতা ও বড় অঙ্ক হলে এর চেয়ে কম সুদেও ঋণ দেয়া হচ্ছে।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরফান আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঋণ ডলারে পরিশোধ করলে ব্যবসায়ীদের কিছুটা লস হবে। কারণ ডলারের দর বেশ ঊর্ধ্বমুখী। ফলে ৫ বছর আগে নেয়া ঋণে বাড়তি পেমেন্ট করতে হবে। সব মিলিয়ে ঋণের বিপরীতে সুদ ৭ থেকে ৮ শতাংশ হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে বাইরের ঋণ লাভজনক মনে করি তেমন নয়। গত পাঁচ বছর ডলারের দর স্থিতিশীল ছিল। এ জন্য অনেকে বিদেশি ঋণে বেশি উৎসাহী হয়েছে। এখন আবার বিদেশি ঋণের আগ্রহ কমে যাবে।’

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে বিদেশি ঋণ অনেক হিসাব-নিকাশ করে দেয়া হয়। আমরা চেষ্টা করি, যত কম এ ঋণ দেয়া যায়। দেশি ঋণ নিতে হলে ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদ দিতে হচ্ছে, কিন্তু বিদেশি ঋণ ৩ বা ৪ শতাংশে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ডলারের দর বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা সাময়িক সমস্যায় পড়বেন।’

কবে থেকে এই সুযোগ

বিদেশ থেকে দেশি উদ্যোক্তাদের ঋণ সংগ্রহের সুযোগ প্রায় চার দশক আগেই করে দেয়া হয়েছে।

১৯৮৫ সালে ‘অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট’ নামে ব্যাংকের আলাদা বিভাগ গঠন করা হয়। বর্তমানে ৩৬টি ব্যাংক এই বিভাগ গঠন করে ঋণ বিতরণ করছে।

প্রথম দিকে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা এ সুবিধা নিলেও পরে অন্য খাতের উদ্যোক্তারাও এই সুবিধা নিতে শুরু করেন।

২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি বিদেশি ঋণ নেবার পথ আরও প্রশস্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে বিদেশি মালিকানাধীন সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানও মূল কোম্পানি (প্যারেন্ট) থেকে ঋণ নিতে পারবে। তবে এ সুবিধা ট্রেডিং ব্যবসার জন্য প্রযোজ্য হবে না। উৎপাদন ও সেবা কার্যক্রম শুরু থেকে ছয় বছর পর্যন্ত এই সুবিধা নেয়া যাবে। আগে এই সুবিধা তিন বছর পর্যন্ত নেয়া যেত।

মোট বিদেশি ঋণ

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৫৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

গত ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩০৮ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় এক লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা।

২০২০ সাল শেষে বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ ছিল এক হাজার ৪৭৬ কোটি ডলার বা এক লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা। এক বছরে বেড়েছে ৮৩২ কোটি ডলার। টাকার হিসাবে গত এক বছরে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৭২ হাজার কোটি টাকা।

এর আগে এক বছরে এত বেশি হারে বাড়েনি।

ঋণ যেভাবে নেয়া যায়

বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিতে বড় জোগানদাতা বা মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে দেশে কার্যরত বিদেশি ব্যাংকের শাখাগুলো।

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে এইচএসবিসি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। অন্যদিকে দেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষপর্যায়ে রয়েছে ইস্টার্ন, সিটি, ব্র্যাক, এবি ও ইসলামী ব্যাংক।

অগ্রণী, আল-আরাফাহ, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা, ডাচ্‌-বাংলা, এক্সিম, আইএফআইসি, যমুনা, মার্কেন্টাইল, মিডল্যান্ড, মধুমতি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল, এনসিসি, ওয়ান, প্রিমিয়ার, প্রাইম, পূবালী, শাহজালাল, সোশ্যাল ইসলামী, সাউথইস্ট, স্ট্যান্ডার্ড, ট্রাস্ট, ইউসিবি, উত্তরা, সিটি এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ সিলন, স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ও উরি ব্যাংকের মাধ্যমেও এ ঋণ দেয়া হয়।

হঠাৎ চড়া ডলারদর

অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার। বিশেষ করে ডলারের দর হঠাৎ তেজিভাব দেখা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আন্তব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের দর ছিল ৮৬ টাকা ২০ পয়সা। এক বছর আগে এ দর ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ দাম বেড়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকে এক ডলার ৯২ টাকা গুনতে হচ্ছে।

এমন অবস্থায় সরবরাহ বাড়াতে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক ৯৬ কোটি ৭ লাখ ডলার খোলাবাজারে বিক্রি করেছে।

একই সঙ্গে বিলাসবহুল পণ্য আমদানিকে কিছুটা নিরুৎসাহিত করতে এক সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে এলসি খোলার ক্ষেত্রে নগদ মার্জিন হার ন্যূনতম ২৫ শতাংশ সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছে। আগে এ হার ব্যাংক গ্রাহকের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে ঠিক করত।

এ বিভাগের আরো খবর