বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামে বড় পতন হয়েছে। এক মাসের ব্যবধানে প্রতি ব্যারেলের দাম ফের ১০০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে।
সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টায় ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেল সাড়ে ৬ শতাংশ কমে প্রতি ব্যারেল ৯৫ ডলার ৬০ সেন্টে নেমে এসেছে। আর ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দর প্রায় একই পরিমাণ কমে ৯৯ ডলার ৮২ সেন্টে বিক্রি হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রকোপ আবার ছড়িয়ে পড়ার পর চীনের সবচেয়ে বড় শহর সাংহাইতে কয়েক সপ্তাহ ধরে কঠোর লকডাউন চলছে। সে কারণে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধির কারণে বাজারে অর্থের সরবরাহ কমে যাওয়াও তেলের দাম কমার একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে গত ১৫ মার্চ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে নতুন করে আলোচনায় বসার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার খবরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বগতি প্রশমিত হয়েছে। দুই ধরনের তেলের দামই ১০০ ডলারের নিচে নেমে এসেছিল। ওই দিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট তেল প্রতি ব্যারেল ৯৫ ডলার ৩০ সেন্টে নেমে এসেছিল। আর ব্রেন্ট তেল ৯৯ ডলার ৫০ সেন্টে বিক্রি হয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল তেলের দাম; এক পর্যায়ে প্রতি ব্যারেল ১৩৯ ডলারে গিয়ে ঠেকেছিল। এরপর থেকে বিভিন্ন উদ্যোগে ওঠানামার মধ্যেই আছে তেলের দর।
২০২০ সালের কোভিড মহামারির শুরুতে সারা বিশ্বে যখন লকডাউন চলছিল, তখন জ্বালানির তেলের দাম মাইনাস ৩৭ ডলারে নেমে এসেছিল। অর্থাৎ এক ব্যারেল তেল কিনলে ক্রেতাকে উল্টো ৩৭ ডলার দেওয়া হয়েছে। এরপর ওপেক ও রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে তেল সরবরাহ কমিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করে।
২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। করোনা মহামারির মধ্যেও টানা বেড়েছে তেলের দাম। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় তা আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।
গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে দুই ধরনের তেলের দামই ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। সে সময় বাংলাদেশ সরকারও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ৮০ টাকা নির্ধারণ করে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক বাজারে গড়ে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ছিল ৪২ ডলার। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৪৯ ডলার। এর পর থেকে গড়ে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ছিল ফেব্রুয়ারিতে ৫৩ ডলার, মার্চে ৬০, এপ্রিলে ৬৫, মে মাসে ৬৪, জুনে ৬৬, জুলাইয়ে ৭৩ এবং আগস্টে ৭৪ ডলার। অক্টোবরে এই দাম ৮৫ ডলারে ওঠে।
এরপর অবশ্য তেলের দাম খানিকটা কমে আসে। যুদ্ধের ডামাডোলে ফের তা বাড়তে থাকে। ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার সঙ্গে সঙ্গে তেলের দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়।