ঈদ যত এগিয়ে আসছে দোকানে তত ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফুটপাত থেকে শপিং মল, সব জায়গাতেই মানুষের সমাগম। দেখেশুনে, দরদাম করে ক্রেতারা কিনছেন পোশাক ও আনুষঙ্গিক সব সামগ্রী।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই বছর করোনাভাইরাস মহামারির নানা বিধিনিষেধের কারণে ঈদের সময়ও তেমন ব্যবসা হয়নি। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের অনেকে। তাই এ বছর ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার আশা করছেন তারা।
শহর ঘুরে দেখা যায়, দোকানে দোকানে সাজিয়ে রাখা আছে নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধদের নানা ডিজাইনের ও রঙের পোশাক।
শপিং মল মালিক ও ব্র্যান্ডের দোকানের মালিকদের অভিযোগ, প্রচুর মানুষ দোকানে আসছেন। কাপড় দেখছেন কিন্তু কিনছেন কম।
দোকান মালিকরা জানান, ব্র্যান্ডভেদে দেশি কাপড়ের থ্রি পিস বিক্রি হচ্ছে ১৫৫০ থেকে ৩৪৯০ টাকায়, ভারতীয় থ্রি পিস বিক্রি হচ্ছে ৩৮৫০ থেকে ১২৫০০ টাকায়। ছেলেদের পাঞ্জাবি ১৪৫০ থেকে ১০০০০ টাকায়, ভারতীয় শার্ট ১৪৪০ থেকে ৩৫০০ টাকায় এবং প্যান্ট ১৫০০ থেকে ৫০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
স্বপ্নলোকের স্বত্বাধিকারী আসিফ ইকবাল বলেন, ‘এবারে নারীদের পোশাকের প্রধান আকর্ষণ সারাড়া ও গারারা। ১২০০ থেকে ৬০০০ টাকায় এগুলো বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে আবার দেশি, ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানি ভাগ রয়েছে।
‘ছেলেদের জন্য নতুন ডিজাইনের শার্ট, টি-শার্ট, ফতুয়া, প্যান্ট তোলা হয়েছে। মার্কেটে ক্রেতা আছে তবে বিক্রি নেই। আশা করছি ঈদের আগে কোনোমতে টার্গেট ফিলআপ হবে।’
কয়েকটি ব্র্যান্ডের ডিলার আবির আহমেদ বলেন, ‘যারা ব্র্যান্ডের পোশাক পছন্দ করেন তাদের জন্য আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বেশ কয়েকটি বড় বড় ব্র্যান্ডের দোকান এনেছি। এগুলোতে রুচিসম্পন্ন পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।
‘করোনার কারণে আমরা দুই বছর আশা অনুযায়ী ব্যবসা করতে পারিনি। এবার ভালো ব্যবসার আশা করছি। মার্কেটে মানুষের সমাগমও আছে কিন্তু ক্রেতা নেই।’
আরেকটি দোকানের মালিক আরমানুল হক জানান, সর্বশেষ ২০১৯ সালে তারা ঈদে ভালো ব্যবসা করতে পেরেছেন। প্রতিদিন গড়ে ৫ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হয়েছে। ২০২০ সালে করোনায় তেমন ব্যবসা হয়নি। ২০২১ সালে ১৭ দিন ব্যবসার সুযোগ পেয়েছেন। সে সময় গড়ে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বিক্রি হয়েছে।
আরমানুল বলেন, ‘এ বছর ঈদ মৌসুমে গড়ে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার পোশাক বিক্রি হচ্ছে। মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় ব্যবসা কমে গেছে।’
ক্রেতারা বলছেন, দাম নাগালের বাইরে হওয়ায় তারা ইচ্ছা থাকলেও পছন্দের পোশাক কিনতে পারছেন না।
শহরের হালদারপাড়ার তাহমিনা বেগম বলেন, ‘গত দুই বছর ভালো করে দেখেশুনে দুই ছেলেসহ পরিবারের অন্যদের কাপড় কিনতে পারিনি। তাই এবার ছেলেদের সঙ্গে নিয়ে মার্কেটে এসেছি। তবে কাপড়ের প্রচুর দাম। অনেক কিছুই পছন্দ হয়েছে কিন্তু দাম সাধ্যের বাইরে থাকায় কিনতে পারছি না।’
শপিং মলের ব্যবসায়ীরা অসন্তুষ্টির কথা জানালেও ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাভাবিকভাবেই তাদের কেনাবেচা চলছে।
পৌরসভা মার্কেটের পাশে ভ্যানে ছেলেদের টি শার্ট, শার্ট বিক্রি করেন আইনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই ফুটপাত থেকে কাপড় কিনছেন। আমাদের এখানে ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে শার্ট এবং ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে গেঞ্জি পাওয়া যায়। দামেও সস্তা, মানেও ভালো।
‘ফুটপাতের কাপড় বলে যে খারাপ তা নয়। মানে ভালো, দেখতেও সুন্দর এমন কাপড়ই আমরা তুলেছি। মানুষের কাছে এগুলোর চাহিদাও আছে। এবার ভালো ব্যবসা হবে বলে আশা করছি।’
বাচ্চাদের কাপড় বিক্রেতা ইকবাল মিয়া বলেন, ‘আমার এখানে খুব দামি কাপড় নাই। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত দামের বাচ্চাদের কাপড় আছে। যারা গরিব মানুষ বা নিম্ন মধ্যবিত্ত তারা তো বড় বড় দোকানগুলাতে যাইতে পারব না। তারা এখান থেকে মনমতো কাপড় কেনে।
‘এবার ব্যবসা রমজানের শুরু থেকেই ভালো। ঈদ পর্যন্ত ভালো বিক্রি হইব।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আজিজুল হক জানান, করোনায় দীর্ঘদিন ব্যবসায়ীদের খারাপ সময় কেটেছে। তার প্রভাব এখনও আছে। মার্কেটে বাহারি ও নামি-দামি কাপড় থাকলেও কেনাবেচা হচ্ছে কম।
কাপড়ের দাম বেশি ক্রেতাদের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বলেন, ভারতীয় মাল চেকপোস্ট পার করতে অতিরিক্ত ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। তাই সব খরচ শেষে দাম বেড়ে যাচ্ছে।