চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত নেপাল প্রায় ১০ হাজার কোটি রুপির ভোজ্যতেল আমদানি করেছে। এর অর্থ এই নয় যে, নেপালিরা তেলের গোগ্রাসী ভোক্তা।
দেশটিতে আমদানীকৃত ভোজ্যতেলের ২০ শতাংশেরও কমের ভোক্তা নেপালিরা। বাকি ৮০ শতাংশের বেশি তেলের প্রায় সবটাই রপ্তানি হয় ভারতে।
কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদনে জানানো হয়, নেপালের ব্যবসায়ীরা অশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি করেন ডলারে। আর তারা সে তেল রুপিতে রপ্তানি করেন ভারতে। এটি দেশটিতে ডলারের রিজার্ভ কমার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
নেপালের কাস্টমস বিভাগের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে নেপাল ৯ হাজার ৯৫১ কোটি রুপি সমমূল্যের ভোজ্যতেল আমদানি করে। নেপালি তেল শোধনাগারগুলো বিপুল এ তেলের বেশির ভাগ পরিশোধন করে পাঠায় ভারতে।
বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা কাঠমান্ডু পোস্টকে বলেছেন, আমদানির পর রপ্তানির এ উল্লম্ফনের মূল কারণ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে নেপালের শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা।
দেশটিতে ২০২০-২১ অর্থবছরের ৯ মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তেল আমদানি বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গত অর্থবছরের তিন প্রান্তিকে নেপাল ৫ হাজার ১৭৮ কোটি রুপির ভোজ্যতেল আমদানি করেছিল।
চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে নেপাল সরকার শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কর বাবদ আয় করেছে ১ হাজার ৮৭ কোটি রুপি।
এ বিষয়ে নেপালের সাবেক বাণিজ্যসচিব পুরুষোত্তম ওঝা কাঠমান্ডু পোস্টকে দেয়া সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা অশোধিত ভোজ্যতেল আমদানিতে বড় পরিসরে ইউএস ডলার খরচ করছি। পরিপূর্ণ পণ্য (পরিশোধিত তেল) রপ্তানি করে আমরা ভারতীয় মুদ্রা আনছি।’
ডলারে তেল কিনে রুপিতে বেচার বিষয়টিতে মনোযোগ দিতে দীর্ঘদিন ধরে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন নেপালের বিশেষজ্ঞরা।
আমদানি বাড়া, রেমিট্যান্স কমার পাশাপাশি পর্যটন থেকে আয় কমে যাওয়ায় দেশটিতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েছে। এমন বাস্তবতায় ডলারে তেল কিনে রুপিতে বেচার বিষয়টি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
নেপাল রাষ্ট্র ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে বর্তমান অর্থবছরের প্রথম আট মাস শেষে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়ায় ৯৫৮ কোটি ডলারে। অন্যদিকে দেশটিতে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি ২৫ হাজার ৮৬৪ কোটি রুপির।
নেপালে গত অর্থবছরে ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে ৮ হাজার ২৯০ কোটি রুপির। বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ৫ হাজার ৫৯৫ কোটি রুপির সমমূল্যের তেল।
হিমালয়কন্যা অশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি করে আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে, মিসর, ব্রাজিল, তুরস্ক ও ইউক্রেন থেকে। সেসব দেশ থেকে আনা তেল কম শুল্কে ভারতে পাঠায় দেশটি।
ভোজ্যতেলের দাম কমাতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে ভারত অশোধিত পাম তেলের ওপর আমদানি শুল্ক সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করে।
নেপালি ব্যবসায়ীরা মনে করেছিলেন, ভারতের শুল্ক কমানোর প্রভাব পড়বে তাদের তেল রপ্তানিতে, কিন্তু বাস্তবে নেপাল থেকে ভারতে তেলের চালানের রেকর্ড হয়েছে।
এর আগে গত বছরের অক্টোবরে অশোধিত পাম তেলের ওপর আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আড়াই শতাংশে নামিয়ে এনেছিল ভারত সরকার।
দেশটি অশোধিত সয়াবিন তেল ও সূর্যমুখী তেলের ওপর আমদানি শুল্ক সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে আড়াই শতাংশ করেছিল। এরপরও নেপাল থেকে ভারতে পরিশোধিত তেল রপ্তানি বাড়ছে।