ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর দোকান খুলেছেন নিউ মার্কেটের দোকানিরা। মার্কেট খোলার চতুর্থ দিনে ঈদ কেনাবেচাকে সামনে রেখে প্রাণ ফিরে পেয়েছে নিউ মার্কেট। ব্যবসায়ীরা সংঘর্ষের ঘটনার ভুলে থেকে দোকান খুলে পসরা সাজিয়ে মন দিয়েছেন বেচাকেনায়।
কয়েক দিনের সংঘর্ষের আতঙ্ক কাটিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কেনাকাটায় নিউ মার্কেটে আসছেন ক্রেতারাও।
সব মিলিয়ে শুক্রবারের মতো শনিবারও ছিল নিউ মার্কেট, নিউ সুপার মার্কেট, গাউছিয়া ও চাঁদনী চক, চন্দ্রিমা, ধানমন্ডি হকার্স, নূরজাহানসহ এলাকার আশপাশের মার্কেটগুলোতে ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতাদের বিরামহীন ভিড়ভাট্টা। এ দিন বৃষ্টি না থাকায় এবং গরম তুলনামূলক কম হওয়ায় মার্কেটগুলোতে দোকান খোলার পর থেকেই ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। এরপর বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার প্রভাব পড়তে থাকে নিউ মার্কেটের চারপাশের বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাতেও।
মার্কেট অভিমুখে কেউ বেরিয়েছেন পরিবারসহ, কেউ একলা, কেউ আবার বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দল বেঁধে। এ তালিকায় বাদ পড়েনি শিশু থেকে বয়স্করাও। এক জায়গা থেকে পছন্দের একটি পোশাক কেনা শেষ হলে প্রয়োজনীয় আরেকটি কেনার জন্য পছন্দের খোঁজে অনেককে দৌঁড়ঝাপ করতে দেখা গেছে মার্কেটের বিভিন্ন ফ্লোরের এই দোকান থেকে ওই দোকানে।
কেউ আবার এই মার্কেট থেকে ওই মার্কেটেও। সবার হাতে ঠাসা নতুন কাপড়ের ব্যাগ। শুধু পোশাক নয়, কসমেটিকস ও গহনা এবং জুতার দোকানেও অভিন্ন পরিস্থিতি।
ক্রেতাদের স্বতস্ফূর্ত উপস্থিতি, সন্তোষজনক নিরাপত্তা এবং বেচাকেনা ভালো হওয়ায় খুশি এখানকার দোকাকিরাও। দোকান মালিকদের কেউ কেউ বলছেন, যা ঘটে গেছে, সেটি অনাকাঙ্খিত। এখন যা দেখছেন, এটাই হলো নিউ মার্কেটের চিরাচরিত রূপ।
এ বিষয়ে নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘মার্কেটের পরিস্থিতি এখন শতভাগ শান্ত। এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ বোধ করছি। সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। আমাদের সিকিউরিটি গার্ডরা সার্বক্ষণিক সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। থানা থেকে পুলিশ এসেছে, আছে মহিলা পুলিশ। র্যাবের ক্যাম্পও করা হয়েছে। সব দিক থেকে এখন নিউমার্কেট এখন বেটার পজিশনে আছে।’
তিনি বলেন, ‘এই অবস্থায় ক্রেতারাও আমাদের জন্য স্বস্তি বয়ে আনছেন। তারা সব ভুলে কেনাকাটার জন্য নিউ মার্কেটে আসছেন। তাই মার্কেটের সভাপতি হিসেবে আমি ক্রেতা সাধারণের উদ্দেশ্যে শুধু এই ম্যাসেজটিই দিতে চাই, আপনারা স্বাচ্ছন্দ্যে নিউমার্কেটে আসুন। কেনাকাটা করুন। আমরা আপনাদের ভালো আচরণের নিশ্চয়তা দিচ্ছি।’
ঈদের দিন যতোই ঘনিয়ে আসবে, নিউ মার্কেটে ক্রেতার ভিড় আরও বাড়বে বলেও তিনি প্রত্যাশার কথা জানান।
গত সোমবার রাতের সংঘর্ষের কারণে নিউ মার্কেটসহ এ এলাকায় আশপাশের মার্কেটগুলো মঙ্গল ও বুধবার দুই দিন বন্ধ ছিল। গত বৃহস্পতিবার মার্কেট খুলতেই ঈদ কেনাকাটার জন্য মার্কেটে ক্রেতাদের পদচারণা বাড়তে থাকে, যা এখন রীতিমতো আগের রূপে মানুষের ঢলে রূপ নিতে শুরু করেছে।
আজিমপুর নিউপল্টনের বাসিন্দা বিউটি আক্তার বলেন, ‘ঈদে মহিলাদের সবচেয়ে বেশি কেনাকাটা হয় শাড়ি ও থ্রিপিস। বোরকা, হিজাব, ওড়না ও বাচ্চাদের কাপড় তো রয়েছেই। দোকানিরা দাম যেটাই বলুক না কেনো, নিউ মার্কেট, গাউছিয়া ও চাঁদনী চকে রয়েছে দরদাম করে কেনাকাটারও সুযোগ। ভালো কোয়ালিটি এবং লেটেস্ট মডেলের পোশাকও এখানে মেলে সচরাচর। তাই প্রতিবছর ঈদ কেনাকাটায় নিউ মার্কেটে না এলে একটা অপূর্ণতা মনের মধ্যে থেকেই যায়। তাই এখানে আসা। তবে মার্কেটে এসে দেখছি-ব্যাপক ভিড়।’
এখানকার বিক্রেতারাও জানান, ক্রেতাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে ঈদ কেনাকাটা শুরু হওয়ার আগে থেকেই তারা দোকানে তাঁতের রেশম ও সুতি শাড়ি, বেনারসি শাড়ি, রাজশাহী রেশমি শাড়ি, পাবনার শাড়ি, সিল্ক শাড়ি, মণিপুরি শাড়ি, কাতান, টাঙ্গাইলের সিল্ক শাড়িসহ বিভিন্ন মানের শাড়ি তুলেছেন। এ ছাড়া বাহারি নামে তারা নানা রঙের নানা কাপড়ের থ্রি-পিস, টু পিস ও ওয়ান পিসের কালেকশনও রেখেছেন। বিক্রিও হচ্ছে বেশ।
নিউমার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে পুরুষের জন্য প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্ট, গেঞ্জি, ফতুয়া, পাঞ্জাবি, পায়জামার বিশাল সম্ভার। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের কেনাকাটা এবং সব ধরনের পণ্য হাতের নাগালে খোঁজ পেতে এ মার্কেটের ঝুঁড়ি নেই। তবে অনেক কিছু দোকানে মেয়েদের পোশাকও বিক্রি হয়।
এখানে বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতার এখন দম ফেলানোর ফুসরত নেই। ক্রেতারা নিজেই দোকানে দোকানে ঘুরে ঘুরে ডিসপ্লেতে রাখা পছন্দের পোশাকটি দেখছে। কারও পছন্দ না হলে ডিসপ্লের বাইরেও দোকানে রাখা স্টক থেকে বের এনে এনে ক্রেতাকে দেখাচ্ছেন। কোনটার কেমন দাম বলে দিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত কত দামে ছাড়তে পারবেন সেটিও জানিয়ে দিচ্ছেন। এরই মধ্যে চলছে বেশ বেচাকেনাও। দরদাম মিলে যাওয়া মাত্র পছন্দের পোশাকটি ক্রেতার হাতে তুলে দিচ্ছেন বিক্রেতারা।