বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের ঋণের সুদ মওকুফ নয়

  •    
  • ২১ এপ্রিল, ২০২২ ২১:১২

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোর সুদ মওকুফের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এই নির্দেশনাসহ আরও কিছু কড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদ মওকুফ নিয়ে কাড়াকড়ি আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক; দিয়েছে নতুন নির্দশনা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এখন থেকে মূল ঋণ (আসল) মওকুফ করা যাবে না। জালজালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণের সুদও মওকুফ করা যাবে না।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জাারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোর সুদ মওকুফের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এই কড়াকড়ি আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নতুন নির্দেশনায় একই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের ১৯৯১ সালের ১৮ আগস্ট জারি করা সার্কুলারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বলা হয়েছে। ওই সার্কুলারের ৩ নং অনুচ্ছেদে নির্দেশনার আলোকে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদ মওকুফ করতে পারে। বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ বহির্ভুত কারণে যেমন- ঋণগ্রহীতার মৃত্যু, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, মড়ক, নদী ভাঙ্গন, দুর্দশাজনিত কারণে বা বন্ধ প্রকল্প ইত্যাদি কারণে ব্যাংকগুলো ঋণের সুদের সম্পূর্ণ অংশ বা অংশ বিশেষ মওকুফ সুবিধা প্রদানের সুযোগ রয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, ‘সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, এ সব বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় না নিয়ে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন গ্রাহকের অনুকূলে প্রায়শই সুদ মওকুফ সুবিধা প্রদান করছে। এ সুবিধা পাওয়ার ফলে গ্রাহকদের মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে অনাগ্রহ সৃষ্টি হতে পারে। যা ব্যাংকিং খাতে সার্বিক ঋণ শৃঙ্খলার পরিপন্থী।’

এঅবস্থায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে গ্রাহকদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, সামগ্রিক ঋণ শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণকল্পে ব্যাংকিং খাতে ঋণের আরোপিত, অনারোপিতসহ সকল প্রকার সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ঋণের সুদ মওকুফে যেসব নির্দেশনা মানতে হবে

>> মূল ঋণ (আসল) মওকুফ করা যাবে না।

>> জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ এবং ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতার ঋণের সুদ মওকুফ করা যাবে না।

>> ব্যাংকের আয় খাত বিকলন করে সুদ মওকুফ করা যাবে না।

>> ঋণের সুদ মওকুফ সুবিধা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। তবে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূল ঋণের সুদ মওকুফ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উপর অর্পণ করা যাবে।

এবং

>> সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে ব্যাংকের তহবিল ব্যয় আদায় নিশ্চিত করতে হবে। তবে কিছু ক্ষেত্রে তহবিল ব্যয় আদায় সংক্রান্ত শর্ত শিথিল করা যেতে পারে।

তহবিল ব্যয় শর্ত শিথিল যেসব ক্ষেত্রে

>> তিন বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে এরূপ প্রকল্পের ক্ষেত্রে।

>> ঋণের জামানত, সহজামানত, প্রকল্প সম্পত্তি এবং প্রকল্প উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিগত সম্পদ বিক্রয় হতেও

তহবিল ব্যয় আদায় করা সম্ভবপর না হলে।

>> পাওনা আদায়ের লক্ষ্যে আইনগত ব্যবস্থাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরও পাওনা আদায় করা না গেলে।

>> ঋণগ্রহীতার মৃত্যু অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, মড়ক, নদী ভাঙ্গন বা দুর্দশাজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত

ঋণগ্রহীতা যৌক্তিক কারণে ঋণ পরিশোধে অপারগ হলে।

তহবিল ব্যয় বলতে যে সময়ের বা বছরের সুদ মওকুফ করা হবে সে সময়ের বা বছরের ৩১ ডিসেম্বর ভিত্তিক তহবিল ব্যয়কে বুঝাবে।

বৃহস্পতিবারের সার্কুলারে বলা হয়, এক বা একাধিক কারণে তহবিল ব্যয় আদায়ের শর্ত শিথিল করার যৌক্তিকতা নিশ্চিত করতে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগের মাধ্যমে নিরীক্ষা করে হেড অব ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপ্লায়েন্সের (এইচআইসিসি) মতামত গ্রহণ করতে হবে।

যে সকল ঋণের ক্ষেত্রে আর্থিক বিবরণী প্রণয়নের আবশ্যকতা রয়েছে, সে সব ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে ব্যাংক আবশ্যিকভাবে ঋণগ্রহীতার বিগত তিন বছরের আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনা করবে। আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনায় বিবেচনাধীন সময়ের সামষ্টিক কর পরবর্তী নিট মুনাফা অথবা সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী ওনার্স ইক্যুইটি ইতিবাচক হলে সুদ মওকুফ করা যাবে না।

সুদ মওকুফ করা হলে ব্যাংকের নিজস্ব আর্থিক অবস্থার উপর কীরূপ প্রভাব পড়বে তা পর্যালোচনা করতে হবে। সে লক্ষ্যে ব্যাংকগুলো নিজস্ব মূলধন পর্যাপ্ততা, প্রফিট্যিাবিলিটিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সূচক বিবেচনায় নিয়ে অধিক মাত্রায় ডিউ ডিলিজেন্স প্রয়োগ করবে।

ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ধারা ২৮ এর পরিপালন নিশ্চিতকরণসহ অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং তার পরিবারের সদস্যরা বা পরিচালকের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে।

রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে এই সার্কুলারে নির্দেশনাসহ সরকার সময়ে সময়ে যে সব নির্দেশনা জারি করে সে সবের নির্দেশনা পরিপাল ন করতে হবে।

এই নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিটি ব্যাংককে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে সুদ মওকুফ সংক্রান্ত নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করতে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।

সুদ মওকুফ বেড়েছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের গত কয়েক বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সুদ মওকুফের অংক ব্যাপক আকারে বেড়েছে।

২০১৬ সালে ৩৩ হাজার ৯৭১টি হিসাবের বিপরীতে সুদ মওকুফ করা হয়েছে ৯৬৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে ২৮ হাজার ৭৬৮টি হিসাবের বিপরীতে সুদ মওকুফ করা হয় ১ হাজার ৯০০ কোটি ৯৭ লাখ টাকার। ২০১৮ সালে ২১ হাজার ৭৭৫টি হিসাবের বিপরীতে সুদ মওকুফ ২ হাজার ২৩৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

এরপর ২০১৯ সালে ২১ হাজার ৬৪০টি হিসাবের বিপরীতে সুদ মওকুফ করা হয়েছে ৩ হাজার ৬৩৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার, ২০২০ সালে মাত্র ১৭ হাজার ৭৭৫টি হিসাবের বিপরীতে ৪ হাজার ৯২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে।

আর সর্বশেষ ২০২১ সালে ২২ হাজার ২০৬টি হিসাবের বিপরীতে সুদ মওকুফ করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৭৭ কোটি ২১ লাখ টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর