রমজানে পুঁজিবাজারে প্রতিটি ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে এক কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করা হবে- নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে আসা এমন বক্তব্য কতটা সঠিক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রোজায় লেনদেন ক্রমেই কমতে কমতে তলানিতে নেমে আসার পর বিএসইসির পক্ষ থেকে ডিলারদের সমিতি ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন-ডিবিএ সভাপতিকে চিঠি দিয়ে ডিলারদের বিনিয়োগে আগ্রহী করতে বলেছে। পাশাপাশি ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত কোন ডিলার কত বিনিয়োগ করেছে, তাও জানাতে বলেছে।
তবে ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও নিউজবাংলাকে বলেছেন, প্রতি ডিলার এই মাসে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে- এমন কোনো কথা তারা দেননি। আর তার পক্ষে কাউকে বিনিয়োগের জন্য চাপ দেয়া সম্ভব নয়।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর পুঁজিবাজারে দরপতন শুরুর পর বিএসইসি অন্যান্য নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি বাজারে তারল্য বাড়ানোর চেষ্টা করে।
এর অংশ হিসেবে ৯ মার্চ ৩৩টি ব্যাংক, পরের দিন মিউচ্যুয়াল ফান্ড পরিচালনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে এবং ৩০ মার্চ বাজার মধ্যস্ততাকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএসইসি।
এই বৈঠক শেষে আলোচনা শেষে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘ডিবিএর প্রেসিডেন্ট স্টক ব্রোকার ও ট্রেকহোল্ডারদের ডিলার অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। তারা প্রতিটি ডিলার অ্যাকাউন্টে রমজান মাসে কমপক্ষে এক কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করবেন। এতে শেয়ারবাজারে নতুন ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের আশা করা যাচ্ছে।
এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর নিজস্ব পোর্টফোলিওর মাধ্যমে রমজান মাসে নতুন করে ২০০-৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে বিএমবিএ সভাপতি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।’
তবে রোজা শুরুর দিন থেকে ধারাবাহিক পতন ও লেনদেন তলানি নেমেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি কেন রাখা হচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে ১৮ এপ্রিল প্রত্যেক ব্রোকারকে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী করতে ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে উদ্যোগ নিতে বলে বিএসইসি।
চিঠিতে যা বলা হয়েছে
ডিবিএ সভাপতি বরাবর বিএসইসির ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ৩০ মার্চ বিএসইসির সঙ্গে বাজার সংশ্লিষ্টদের বৈঠক হয়। বাজারে তারল্য বাড়ানোর সকল সম্ভবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিনের সভাপতিত্বে বৈঠক মার্চেন্ট ব্যাংক, ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উভয় পক্ষ রমজানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে একমত হন। সভায় ডিবিএ সভাপতি বলেন, প্রত্যেক ব্রোকার নিজস্ব পোর্টফোলিও থেকে এক কোটি টাকা করে নতুন বিনিয়োগ করবে এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেক এক থেকে দেড় বিলিয়ন (টাকা) বিনিয়োগ করা হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্রোকাররা যাতে নতুন বিনিয়োগ করে সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে। পাশপাশি ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ব্রোকারদের বিনিয়োগের তথ্য যত দ্রুত সম্ভব প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হলো।
কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি: ডিবিএ সভাপতি
তবে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৈঠকে আমাদেরকে বলা হলো যে, এই মুহূর্তে প্রত্যেক ব্রোকাররা যদি এক কোটি করে বিনিয়োগ করে তাহলে অনেক টাকা বিনিয়োগ হবে। আমাকে ব্রোকারদের চিঠি দিতে বলা হলো। আমি বলেছি, সেটা আমার এখতিয়ারের মধ্যে নাই। আর সম্ভবও না। বাজারের ভালোর জন্য যে যার জায়গা থেকে বিনিয়োগ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন আমাকে উদ্ধৃত করে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিনিয়োগের তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। এটা কেন?’
বিএসইসি যা বলছে
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সেই সময় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়। স্টক ব্রোকাররা বাজারের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী। বাজারে এখন অনেক শেয়ার অবমূল্যায়িত। এখন বিনিয়োগ করাই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য। সেজন্য বিনিয়োগের ব্যাপারে উৎসাহিত করতে চিঠির মাধ্যমে বলা হয়েছে।’
কিন্তু ডিবিএ সভাপতি তো বলছেন, প্রতি ডিলার এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে- এমন বক্তব্য তিনি দেননি। তাহলে আপনারা কি বিনিয়োগ করবে বাধ্য করবেন?- এমন প্রশ্নে বিএসইসির মুখপাত্র বলেন, ‘যদি এখন তারা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর মতো আচরণ না করে। তাহলে পরবর্তীতে লাইসেন্স রিনিউ করার আগে বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হবে।’