ঈদের আর কয়েক দিন বাকি। কিন্তু বেচাকেনা নিয়ে চিন্তিত আজিজুল ইসলাম। পুরান ঢাকার আজহার সুপার মার্কেটের এই ব্যবসায়ীর কাছে সময়টা বেশ অচেনা। কারণ গত দুই বছর বাদ দিলে মধ্য রোজার মধ্যে এমন বিক্রি আগে কখনও হয়নি।
রোজার আগ থেকেই পুরান ঢাকায় পা দেয়া যায় না। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন ব্যবসায়ীরা। তাদের চাহিদা পূরণ করতে হিমশিম অবস্থা।
করোনার দুই বছরে ব্যবসা ছিল না। এবার তুলনামূলক ভালো ব্যবসার আশা ছিল, কিন্তু মানুষের হাতে টাকা নেই। তাই বেচাবিক্রিও মন্দা।
আজিজুর রহমান বলেন, ‘অন্যান্যবারের তুলনায় বিক্রি অর্ধেকেরও কম। করোনার আগে এমন সময় দিনে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার বিক্রি হতো। এখন সেটা ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। পাইকারিতে সাধারণত ১৫ রোজার পর আর বেচাকেনা হয় না। কিন্তু এবার রোজার অর্ধেক পার হলেও নেই কাঙ্ক্ষিত বিক্রি। হতাশাজনক পরিস্থিতি।’
দেশের অন্যতম পাইকারি কাপড়ের বাজার নরসিংদীর শেখেরচর-বাবুরহাট থেকে কাপড় কিনে ট্রাকে তুলছেন ব্যবসায়ীরা। ফাইল ছবি
রাজধানীর পুরান ঢাকা, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়ার বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দোকানে তেমন বেচাকেনা নেই। অলস সময় পার করছেন দোকানিরা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাইকারিতে বেচাকেনা আগের মতো নেই। ব্যবসায়ীরা খুব খারাপ সময় পার করছেন। করোনার দুই বছরে ব্যবসায় ক্ষতির কারণে যাদের ৮-১০টি দোকান ছিল, তারা এখন দুই বা তিনটি দোকান চালাচ্ছেন। আর যারা একটি দোকান দিয়ে ব্যবসা করতেন, তাদের বেশির ভাগই পুঁজি না থাকায় ব্যবসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
তবে গত দুই বছরের তুলনায় এটাকে ‘মন্দের ভালো’ বলছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। কারণ করোনার সময় ২০২০ ও ২০২১ সালে বিক্রিই হয়নি।
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, করোনা এত বড় ধাক্কা দিয়েছে যে, আগের অবস্থায় ফিরতে সময় লাগবে। রোজা ১৫টা পার হলেও আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। খুচরা ব্যবসায়ীরা আগের মতো কিনছেন না। সাধারণত পাইকারিতে বেচাকেনা ১২-১৩ রোজার মধ্যে হয়।
কেন বেচাবিক্রি কম, জানতে চাইলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা তাদের জানিয়েছেন, এবার খুচরা বাজারে বিক্রি কম। শবেবরাতের পরে যেসব কাপড় নেওয়া হয়েছিল, সেগুলোই এখনও বিক্রি চলছে। এ জন্য তারা নতুন করে কিনছেন না।
তবে কেউ কেউ বলছেন, ঈদের এক সপ্তাহ বাকি থাকতে ক্রেতারা খুচরা বাজারে ভিড় করবে, তখন পাইকারি বাজারেও বিক্রি বেড়ে যেতে পারে।
পাইকারি কাপড়ের বাজারে এক দোকানি। ফাইল ছবি
জাকের সুপার মার্কেটের থ্রি স্টার গার্মেন্টস অ্যান্ড হোসিয়ারির বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, ‘শবেবরাতের পর থেকে রমজান আসার আগে ব্যবসা ভালো ছিল। রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যবসা তেমন ভালো না। কেন এমন হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এদিকে পাইকারি বাজারে সমস্যা, ১৫ রোজার পর আর তেমন বিক্রি হয় না। খুচরা বাজারেও বিক্রি কম।’
সিটি মার্কেটে বাচ্চাদের কাপড়ের পাইকারি বিক্রেতা মো. কামাল বলেন, ‘এবারের ব্যবসা মোটামুটি। অতটা ভালো না। মানুষের আর্থিক অবস্থা ভালো না। বেচাকেনা কম। বিভিন্ন নামের ড্রেস আছে, সেগুলোর মধ্যে কাঁচা বাদাম নামেরটা চলছে বেশি। আমরা নাম দেই না। আমরা মালের কোয়ালিটির ওপর বিক্রি করি। খুচরা বিক্রেতারা নাম দিয়েছে কাঁচা বাদাম ড্রেস।’
পাঞ্জাবির পাইকারি বিক্রেতা আল আমিন বলেন, ‘ঈদের জন্য পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি করি। ঈদেই সাধারণত বিক্রি বেশি হয় আমাদের। শবেবরাতের পর থেকেই ঈদের বিক্রি শুরু হয়েছে। রোজার আগে বিক্রি ভালোই হয়েছে। এখন ক্রেতা কমে গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মহামারির কারণে অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। খুচরা বিক্রি কম। খুচরা বিক্রি না হলে তো পাইকারি কাপড় বিক্রি কমবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে গত দুই বছরের তুলনায় বিক্রি ভালো। গত দুই বছর তো বন্ধ থাকার কারণে ব্যবসাই হয় নাই। প্রিন্টের পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি। পাঞ্জাবির কোনো ট্রেন্ড নাই। সারা বছর যে পাঞ্জাবি বিক্রি করি, ঈদেও প্রায় সেম।’
আজহার সুপার মার্কেটের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পুরান ঢাকার পাইকারি ব্যবসা আগের মতো নেই। এখন অনেক জায়গায় পাইকারি মার্কেট হয়েছে। এ জন্য ব্যবসা এখন ভাগ হয়ে গেছে। আগের মতো জমজমাট নেই।’
গুলিস্তানের সিটি প্লাজার শার্ট ও পাঞ্জাবির পাইকারি বিক্রেতা বজলুর রহমান বাবু বলেন, ‘শবেবরাতের পর থেকে ঈদের পাইকারি ব্যবসা শুরু হয়। ২০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ রোজা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সারা দেশ থেকেই ব্যবসায়ীরা এসে এখান থেকে বিভিন্ন ধরনের কাপড় নেন। মানসম্পন্ন পোশাক পাওয়া যায় এখানে, তাই সারা দেশেই এখানের পোশাকের চাহিদা রয়েছে।’