বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তলানি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় পুঁজিবাজার

  •    
  • ১৯ এপ্রিল, ২০২২ ১৪:৫১

আগের দিন ৩৪৭টি কোম্পানির দরপতনের বিরল ঘটনার সাক্ষী পুঁজিবাজারে আজ যতগুলো কোম্পানির দর পতন হয়েছে, বেড়েছে তার দ্বিগুণের বেশি। ১০৫টি কোম্পানির মূল্য হ্রাসের বিপরীতে বেড়েছে ২৩৪টির দাম। আর ৩৯টির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে আগের দামেই।

রোজায় ১১ কর্মদিবসে ২৮৯ পয়েন্ট সূচকের পতন, দ্বাদশ কর্মদিবসে লেনদেন শুরুর আধা ঘণ্টা যেতে না যেতেই আরও ৫৯ পয়েন্টের পতন। আতঙ্ক জেঁকে বসা পুঁজিবাজার হঠাৎ করেই সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াল। বেলা শেষে ৪৭ পয়েন্ট যোগ হয়ে শেষ হলো লেনদেন।

অর্থাৎ দিনের সর্বনিম্ন অবস্থান থেকে ১০৮ পয়েন্ট যোগ করে শেষ হয়েছে লেনদেন। আর আগের দিনের তুলনায় দেড় গুণ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ৩০ পয়েন্ট, পরের দিন ৭২ পয়েন্ট পতনের পর মঙ্গলবারের এই লেনদেন পুঁজিবাজারের তলানি থেকে উঠে আসার চেষ্টা কি না, সেটি আছে আলোচনায়।

আগের দুই দিন লেনদেন ছিল ৪০০ কোটি টাকার নিচে। আর মঙ্গলবার তা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা ছুঁই ছুঁই।

আগের দিন ৩৪৭টি কোম্পানির দরপতনের বিরল ঘটনার সাক্ষী পুঁজিবাজারে আজ যতগুলো কোম্পানির দর পতন হয়েছে, বেড়েছে তার দ্বিগুণের বেশি। ১০৫টি কোম্পানির মূল্য হ্রাসের বিপরীতে বেড়েছে ২৩৪টির দাম। আর ৩৯টির কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে আগের দামেই।

আগের দিন সর্বোচ্চ ২ শতাংশে দরপতনেও বিপুলসংখ্যক শেয়ারের ক্রেতা পাওয়া যায়নি। লেনদেনের শুরুতে তেমনই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তবে আধা ঘণ্টা পর থেকে শেয়ার কেনার আগ্রহ লক্ষ করা গেছে।

মঙ্গলবার সূচক একপর্যায়ে ৫৯ পয়েন্ট কমে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে শেষ হয় লেনদেন

ধীরে ধীরে শেয়ারগুলো দর ফিরে পেতে থাকে। বেলা ২টার কিছু আগে আগের দিনের চেয়ে সূচক ৬০ পয়েন্ট বাড়লে শেষ মুহূর্তের সমন্বয়ে কিছুটা কমে যায়।

এ নিয়ে রমজান শুরুর পরে ১২ কর্মদিবসের মধ্যে সূচক বাড়ল চার দিন। তার পরেও সব মিলিয়ে এই সময়ে কয়দিনে সূচক কমেছে ২২৭ পয়েন্ট।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর থেকে পুঁজিবাজারের যে ধস নামে, তাতে বাতাস দিয়েছে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক দুরবস্থা। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও তা খুব বেশি কাজে আসেনি।

এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে ফ্লোর প্রাইস বা সব শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। সোমবার বিকেলে এই দাবি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ যায় বিএসইসি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের কাছে। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে কমিশন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানায়।

তবে কমিশনের দুজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেছেন, এ বিষয়ে তারা এখন কিছু ভাবছেন না।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক শাকিল রিজভী। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কার মন্দা, এ রকম বিষয়গুলো বৈশ্বিক অর্থনীতিতে যে প্রভাব ফেলেছে তার কিছুটা পুঁজিবাজারে দেখা গেছে।

‘এ ছাড়া এখন রমজান ও ঈদ আসন্ন। পুঁজিবাজার থেকে এখন টাকা কাপড় ও অন্যান্য বাজারে চলে গেছে। বাজার আপন গতিতেই ঘুরে দাঁড়াবে। কিছুটা সময় লাগবে।’

বিভিন্ন খাতের চিত্র দুই শতাধিক কোম্পানির দর বৃদ্ধির কারণে প্রায় সব খাতেই দর উত্থান দেখা গেছে। তবে কোনো খাতের লেনদেনে এক শ কোটি ছাড়ায়নি।

প্রধান খাতগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৬ কোম্পানির দর বেড়েছে বস্ত্র খাতে। তবে খুব বেশি লেনদেন হয়নি। ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার হাতবদলের মধ্য দিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এছাড়া ৮টি কোম্পানির দর অপরিবর্তিত ছিল। বিপরীতে দর কমেছে ১৪টির।

২৮টি কোম্পানির দর বেড়েছে প্রকৌশল খাতে। ১২টির দরপতন ও দুটির অপরিবর্তিত দামে হাতবদল হয়েছে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪৫ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে এ খাতে।

৫৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে। চারটি করে কোম্পানির দর পতন ও অপরিবর্তিত থাকার বিপরীতে ২৩টি কোম্পানির দর বেড়েছে।

লেনদেনের প্রথম অবস্থানে থাকা বিবিধ খাতে দর বেড়েছে ৮টি কোম্পানির। কমেছে ৫টির, অপরিবর্তিত রয়েছে একটির দর। লেনদেন হয়েছে ৯২ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

শীর্ষ পাঁচের বাইরে ভালো দিন গেছে জ্বালানি খাতে। মাত্র দুটি কোম্পারি দর পতনের বিপরীতে ২০টি কোম্পানির দর বেড়েছে।

লেনদেন কম হলেও বিমা খাতের ২১টি কোম্পানির দর বেড়েছে।

আর ২০টি ফান্ডের ইউনিট দর বেড়েছে মাত্র ৬ কোটি টাকা লেনদেন হওয়া মিউচ্যুয়াল ফান্ডে।

খাদ্য খাতে ১০টি ও সিমেন্টের ছয়টি ও সেবা ও রিয়েল এস্টেটের চারটি কোম্পানিরই দর বেড়েছে।

সূচক বাড়াল যারা

আগের দিন যেসব বড় মূলধনি কোম্পানির কারণে সবচেয়ে বেশি সূচক পড়েছিল, সেগুলোর দর বৃদ্ধিতেই সূচকে পয়েন্ট যোগ হয়েছে বেশি।

সবচেয়ে বেশি ৬.৯৮ পয়েন্ট যোগ করেছে ইউনাইটেড পাওয়ার। কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৬.৯৮ শতাংশ।

এরপরেই সূচক বাড়িয়েছে ওয়ালটন হাইটেক। কোম্পানিটি সূচক বাড়িয়েছে ৪.৬৭ পয়েন্ট। কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ১.১৪ শতাংশ।

বিকন ফার্মার দর ৩.৩ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচক বেড়েছে ২.৭৫ পয়েন্ট।

এছাড়া ২ পয়েন্টের বেশি করে সূচক বাড়িয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল ও স্কয়ার ফার্মা।

এক পয়েন্টে বেশি সূচক বাড়িয়েছে রবি, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ইবিএল ও জিপিএইচ ইস্পাত। এই ১০ কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২৮.০৮ পয়েন্ট।

সূচক কমল যাদের কারণে

সূচক পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখা ১০টি কোম্পানির কোনোটিই এক পয়েন্ট সূচক কমাতে পারেনি।

সবচেয়ে বেশি ০.৮১ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে আইসিবি। কোম্পানিটির ০.৮২ শতাংশ দরপতনে এই পয়েন্ট কমেছে।

০.৫৬ পয়েন্ট সূচক পড়েছে বেক্সিমকো সুকুক বন্ডের দর পতনে। প্রতিটি ইউনিটের দাম কমেছে ১.৭ শতাংশ।

তৃতীয় সর্বোচ্চ ০.৫৫ পয়েন্ট কমেছে বেক্সিমকো লিমিটেডের কারণে। দিন শেষে কোম্পানির দর কমেছে ০.৩৬ শতাংশ।

এছাড়া আইপিডিসি, পূবালী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, জেনেক্স ইনফোসিস, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও এবি ব্যাংকের দর পতনে সূচক কমেছে। এই ১০টি কোম্পানি সূচক ফেলেছে মাত্র ৪.১৪ পয়েন্ট।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০

আবার এই তালিকার শীর্ষে নতুন তালিকাভুক্ত জেএমআই হসপিটার। ২০ টাকায় তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ারদর ছাড়িয়ে গেছে ৬০ টাকা। আজ দর বেড়েছে দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭.৫৯ শতাংশ দর বেড়েছে জ্বালানি খাতের ডরিন পাওয়ারের। এই কোম্পানিটি তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি আয় করার তথ্য জানানোর পর দামে এই উল্লম্ফন দেখা গেছে।

তৃতীয় স্থানে ছিল জনতা ইন্স্যুরেন্স, যার দর বেড়েছে ৭.১৪ শতাংশ। চতুর্থ স্থানে থাকা ইবনেসিনার দর বেড়েছে ৬.৩৩ শতাংশ।

পঞ্চম থেকে অষ্টম স্থানে ছিল যথাক্রমে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি, এসএস স্টিল, ক্রাউন সিমেন্ট ও ফারইস্ট নিটিংয়ের দর বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি।

চার শতাংশের বেশি বেড়েছে নবম ও দশম স্থানে থাকা ইবিএল এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও লাভেলো আইসক্রিমের দর।

দরপতনের শীর্ষ ১০

এই তালিকার সবগুলোর দরই কমেছে দিনের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশের আশেপাশে।

এর মধ্যে শীর্ষে ছিল লোকসানি কোম্পানি সাভার রিফ্রাকটরিজের দর। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দর কমেছে আরামিটের।

অন্য আটটি কোম্পানি ছিল জেমিনি সি ফুড, মনোস্পুল পেপার, নাহি অ্যালুমিনিয়ম, আইপিডিসি, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, বিডি ল্যাপস এবং ড্যাফোডিল কম্পিউটারস।

একইভাবে দিনের দরপতনের সর্বোচ্চ সীমায় লেনদেন হয়েছে ৫০টিরও বেশি কোম্পানি।

এ বিভাগের আরো খবর