বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চালের দরে ‘কারসাজি’ মিল মালিকদের

  •    
  • ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ২১:৩৫

কুষ্টিয়ার পৌর বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা রিপন হোসেন বলেন, ‘ওই ঘোষণার পর রশিদ অ্যাগ্রো এক চালান চাল কম দামে ছেড়েছিল। সেই মিনিকেট চালের মধ্যে আটাশ মিশিয়ে দেয়ায় ক্রেতারা নেননি। ফেরত দিতে হয়েছে।’

খাদ্যমন্ত্রীর সামনে ঘোষণা দিয়েও চালের দাম কমাননি কুষ্টিয়ার মিল মালিকরা। চাল নিয়ে এই কারসাজিকে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হিসেবে দেখছেন নাগরিক প্রতিনিধিরা।

চালকল মালিকরা ৫৮-৫৯ টাকা কেজি বলে মিনিকেট চাল বিক্রি করছেন ৬২ টাকা দরে। বোরো মৌসুম শুরুর প্রাক্কালে খুচরা পর্যায়ে দাম ৬৪-৬৫ টাকা কেজি।

২০ মার্চ কুষ্টিয়া যান খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। তিনি কুষ্টিয়ার খাজনগরে চালকলগুলোর মজুত পর্যবেক্ষণ করেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ বস্তায় ১০০ টাকা (কেজিতে ২ টাকা) কমানোর ঘোষণা দেন। এর পরও চালের দাম কমেনি।

কুষ্টিয়ার পৌর বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা রিপন হোসেন বলেন, ‘ওই ঘোষণার পর রশিদ অ্যাগ্রো এক চালান চাল কম দামে ছেড়েছিল। সেই মিনিকেট চালের মধ্যে আটাশ মিশিয়ে দেয়ায় ক্রেতারা নেননি। ফেরত দিতে হয়েছে।’ সরু ধানের মৌসুম বোরো শুরু হচ্ছে। স্বল্প পরিসরে হলেও শুরু হয়েছে ধান কাটা। কুষ্টিয়ার হরিপুরে অন্য কৃষকদের সঙ্গে ধান কাটছিলেন মো. সালিম। তিনি বলেন, ‘পৌষ মাসে আগাম মিনিকেট ধান লাগিয়েছিলাম। ফলন ভালো হয়েছে। ২০ মণ হতে পারে।’

দামের ব্যাপারে জানতে চাইলে সালিম বলেন, ‘১ হাজার ১০০ টাকা মণ হতে পারে। ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে কম দামে কিনে পরে বেশি দামে চাল বিক্রি করবে। এই তো প্রতি বছর দেখে আসছি। ‘সরু চালের জন্য দেশের বৃহত্তম মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর। সেখানে ৪৫০ মিলে সরু চাল উৎপাদন হয়। এখানকার সরু চাল সারা দেশের বাজার ও দর নিয়ন্ত্রণ করে।’

তিনি জানান, ধান কাটার মৌসুম শুরুর দিকে মুখে চালের দাম কমানোর কথা বললেও মিল মালিকরা ঠিকই বেচছেন চড়া দামে।

আগের বছরগুলোয় ধান কাটার মৌসুমে চালের দাম পড়ে যেতে দেখা গেছে। এবারও তেমনটি হচ্ছে বলে জানান চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন। বলেন, ‘মিলগেটে এখন ২ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার ৯৫০ টাকা বস্তা বিক্রি হচ্ছে; কেজিতে যা পড়ে ৫৮-৫৯ টাকা।’

একই কথা বলেন জাহিদ মিলের মালিক বজলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘২ হাজার ৯০০ টাকা বস্তা বিক্রি হচ্ছে। আর দুই সপ্তাহ পর বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কমে যাবে।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলগেট থেকে মিনিকেট চাল এখনও আগের দামে ৩ হাজার ১০০ টাকায় বস্তা কিনছেন। যার কেজি পড়ে ৬২ টাকা। পৌর বাজারের ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম সুবর্ণা অটো মিলের পাকা রসিদ দেখান। যেখানে ৩ হাজার ১০০ টাকা বস্তা কেনার কথা উল্লেখ আছে। তিনি বলেন, ‘মুখে কমানোর কথা বললেও কার্যত তারা আগের দামেই বেচছেন।’

একই কথা বলেন ব্যবসায়ী স্বপন হোসেন। তিনি বলেন, ‘৬২ টাকা কিনে পরিবহন খরচ ধরে ৬৪ টাকায় বিক্রি করছি। আমরা যেমন দরে কিনতে পারব, তেমনি বেচব। দাম কমে গেলেই ভালো, বেশি বিক্রি হবে।’সচেতন নাগরিকরা বলছেন, বারবারই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছেন মিল মালিকরা।

সচেতন নাগরিক কমিটি, কুষ্টিয়ার সভাপতি রফিকুল আলম টুকু বলেন, ‘মিথ্যাচার করে মিল মালিকরা লাভবান হচ্ছেন। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে শক্তভাবে কাজ করতে হবে।’সারা বছর দাম বাড়তি থাকায় চাল কিনতে গিয়েই সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। রিকশাচালক সেলিম হোসেন বলেন, ‘দিনে আয় আড়াই শ টাকা। চাল কিনে আর কী থাকে?’

হায়দার নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘চাল কেনার পর আর অন্য কিছু কিনতে পারছি না। সবকিছুরই দাম বেশি। তবে এখন চালের দাম একটু কমলে স্বস্তি পেতাম।’প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবারই জোরালো মনিটরিং ও জরিমানা করার কথা বলা হলেও সিন্ডিকেটের কারসাজি থামছে না।

জেলা জ্যেষ্ঠ কৃষি বিপণন কর্মকর্তা আব্দুস সালাম তরফদার বরাবরের মতো একই কথা বলেন, নিয়মিত অভিযান চলছে।

এ বিভাগের আরো খবর