বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নির্মাণসামগ্রীর দর বৃদ্ধিতে ঠিকাদারদের নাভিশ্বাস

  •    
  • ১৭ এপ্রিল, ২০২২ ১৯:৪২

২০২১ সালের মার্চে প্রতি টন রডের দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকা। একইভাবে পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, ইলেকট্রো মেকানিক্যাল দ্রব্যের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৯৪ শতাংশ। একসঙ্গে যোগ হয়েছে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য। বিশেষ করে ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা হওয়ায় পরিবহন ও যন্ত্রপাতি চালনা ব্যয় বেড়ে গেছে।

নির্মাণসামগ্রীর অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে চলমান কাজ এগিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন ঠিকাদাররা। পণ্যের যে দাম নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছিলেন, বর্তমান বাজারমূল্য অনেক ক্ষেত্রে দেড় থেকে দুই গুণ। এতে লোকসানে অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

এ অবস্থায় সরকারি ক্রয়বিধি (পিপিআর) অনুযায়ী বর্তমানে চলমান ঠিকাদারি কাজগুলোর মূল্য সমন্বয় এবং নতুন কাজের ক্ষেত্রে রেট শিডিউল হালনাগাদ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ঠিকাদার ঐক্য পরিষদ।

একই সঙ্গে ঠিকাদারি কাজের ভ্যাট ও ট্যাক্স সাড়ে ১৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

রোববার রাজধানীতে মতবিনিময় সভায় তারা এ দাবি জানান।

পরিষদের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাকসহ অন্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে ঠিকাদাররা ক্ষতির সম্মুখীন। তার ওপর এক বছরের বেশি সময় ধরে নির্মাণ উপকরণ যেমন, লোহা এবং লোহাজাতীয় দ্রব্য, সিমেন্ট, পাথর, ইট, বিটুমিন, ডিজেল, অ্যালুমিনিয়াম, বিল্ডিং ফিনিশিং আইটেমসহ প্রায় সব নির্মাণসামগ্রীর মূল্য অস্বাভাবিক ও লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে চলমান কাজ চালিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ২০২১ সালের মার্চে প্রতি টন রডের দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৯০ থেকে ৯৫ হাজার টাকা। একইভাবে পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, বৈদ্যুতিক সামগ্রী, ইলেকট্রো মেকানিক্যাল দ্রব্যের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৯৪ শতাংশ।

এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক, সুপারভাইজার ও দক্ষ জনবলের মজুরিও ৬০-৭০ শতাংশ বেড়েছে বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, একসঙ্গে যোগ হয়েছে জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য। বিশেষ করে ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা হওয়ায় পরিবহন ও যন্ত্রপাতি চালনা ব্যয় বেড়ে গেছে।

আবার চলমান রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমদানীকৃত সব নির্মাণ মালামাল ও যন্ত্রপাতির দাম আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রাজ্জাক বলেন, ‘গত অর্থবছরে দরপত্র দাখিলের সময় ৫ শতাংশ হারে এআইটি ধার্য ছিল, এখন তা ৭ শতাংশ করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি খুবই হতাশাব্যঞ্জক।

‘কাজের স্বাভাবিক অগ্রগতি অর্জিত না হওয়ার ফলে ঠিকাদাররা বিল পাচ্ছেন না। ব্যাংকঋণ পরিশোধ করাও তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এতে ব্যাংক থেকে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্যতা অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে, ঠিকাদারের আর্থিক সক্ষমতা কমছে।

‘এই অবস্থায় করোনাকালীন পরিস্থিতি ও ঋণপত্রের মূল্য বিবেচনায় নিয়ে সরকার ভ্যাট ও ট্যাক্স ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ নির্ধারণ করলে ঠিকাদাররা ঘুরে দাঁড়াতে পারে।’

সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভ্যাট-ট্যাক্স নির্ধারণসহ কোনো ক্ষেত্রেই ঠিকাদারদের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা হয়নি, অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। উন্নয়নকাজ বাস্তবায়নের অংশগ্রহণ থাকলেও তাদের কোথাও তেমন মূল্যায়ন করা হয় না। যেকোনো দাবি আদায়ে ঠিকাদারদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঠিকাদার বশির আহমেদ বলেন, ‘সারা দেশের সব উন্নয়নকাজ করে দিচ্ছে ঠিকাদাররা। তার পরও তাদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। বলা হয় ঠিকাদাররা চুরি করে। কিন্তু গুলশান-বনানীসহ অভিজাত এলাকায় হিসাব করলে দেখা যাবে সেখানে ঠিকাদারদের কতটা বাড়ি আছে। খুঁজলে একটাও পাওয়া যাবে না। সব বাড়ি সরকারি কর্মকর্তা ও বড় ব্যবসায়ীদের।’

সরকারের ঠিকাদারদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

# বর্তমান ফিক্সড রেটে চলমান কাজগুলোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় প্রজ্ঞাপন জারি করে পিপিআর সূত্র অনুযায়ী দাম সমন্বয় করতে হবে।

# বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী পিডব্লিউডিসহ সব দপ্তরের রেট শিডিউল হালনাগাদ করতে হবে। প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত পানি ও বিদ্যুৎসংক্রান্ত খরচ রেট শিডিউলে যুক্ত করতে হবে।

# নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির বিপরীতে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিটি নির্মাণকাজের প্রাক্কলনে প্রাইস কন্টিনজেন্সির আওতায় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।

# আমদানিনির্ভর নির্মাণসামগ্রীর কাঁচামালের আমদানি শুল্ক সাময়িকভাবে হলেও স্থগিত করতে হবে।

# চলমান নির্মাণ চুক্তিগুলোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন উন্নয়ন নির্বাহী প্রতিষ্ঠান যেমন: গণপূর্ত, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একটি মূল্য সংশোধন সেল তৈরি করে চুক্তিবদ্ধ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ এবং নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর