পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনায় আগ্রহ নেই, এই পরিস্থিতিতে দরপতন চলছেই। আর লেনদেন নেমেছে এক বছরের সর্বনিম্ন অবস্থানে।
সপ্তাহের প্রথম দিন রোববার লেনদেন ছাড়াতে পারেনি চার শ কোটি টাকাও যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সূচক কমেছে আরও ৩০ পয়েন্ট।
২০২১ সালের ৫ এপ্রিল করোনার লকডাউন ঘোষণার পর আতঙ্কে লেনদেন এর চেয়ে নিচে নেমেছিল এক দিন। লকডাউন শুরুর আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ২৩৬ কোটি ৬০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
তবে লকডাউনে লেনদেন বন্ধ হচ্ছে না, এমন ঘোষণা দেয়ার পর দিন থেকেই বাজার ঘুরে দাঁড়ায়। বিধিনিষেধের প্রথম দিন দেড় ঘণ্টা লেনদেনেই হাতবদল হয় পাঁচ শ কোটি টাকার বেশি শেয়ার।
তবে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে পুঁজিবাজারে যে ধস দেখা দিয়েছে, তা শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।
এর মধ্যে লেনদেন বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেষ্টা কম ছিল না। ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বাজার মধ্যস্ততাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে একাধিকবার। এসব বৈঠকে বিনিয়োগ বাড়ানোর অঙ্গীকার করে সব পক্ষই।
এমনকি রোজায় মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ৩০০ কোটি টাকা আর প্রতিটি স্টক ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে এক কোটি করে আড়াইশ কোটি টাকা লেনদেনের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল।
এই ঘোষণা আসার পর রোজা আসার শেষ কর্মদিবসে লেনদেন বেড়ে এক হাজার একশ কোটি টাকা ছাড়ায়।
কিন্তু রোজার শুরু থেকেই লেনদেন ক্রমেই কমতে থাকে। মোট ১০ কর্মদিবসে সূচক বেড়েছে কেবল তিন দিন। বাকি সাত কর্মদিবসই কমেছে। সব মিলিয়ে এই ১০ কর্মদিবসে সূচক কমেছে ২১৭ পয়েন্ট।
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
মোট ২৮০টি কোম্পানির দর পতনের দিন বেড়েছে কেবল ৫৮টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৪১টির দর।
গত বৃহস্পতিবার সূচক ১০ পয়েন্ট বাড়ার পরও বিনিয়োগকারীদের মনে কোনো স্বস্তি ছিল না। নতুন সপ্তাহের শুরুতে ২০ মিনিটে আরও ২৭ পয়েন্ট বেড়েওছিল। কিন্তু এরপর থেকে টানা পড়েছে।
এদিন এমন কোনো খাত ছিল না, যে খাতের বিনিয়োগকারীরা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে থাকবে। ব্যাংক, বস্ত্র, বিমা, খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি, আর্থিক, প্রকৌশল সিমেন্ট-সব খাতেই বেড়েছে হাতে গোণা দুই একটি কোম্পানির দর।
নতুন তালিকাভুক্ত জেএমআই হসপিটাল ছাড়া অন্য একটি কোম্পানিও ছিল না, যেটির দর বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত।
সূচক কমল যাদের কারণে
সবচেয়ে বেশি ৪.৭৪ পয়েন্ট সূচক কমিয়েছে ওয়ালটন হাইটেক।কোম্পানিটির ০.৬৪ শতাংশ দরপতনে এই পয়েন্ট কমেছে।
৪.১১ পয়েন্ট সূচক পড়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের দর পতনে। কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের দাম কমেছে ১.৪৪ শতাংশ।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩.২৯ পয়েন্ট কমেছে বেক্সিমকোর আরেক কোম্পানি বেক্সিমকো ফার্মার কারণে। দিন শেষে কোম্পানির দর কমেছে ২ শতাংশ।
এছাড়া স্কয়ার ফার্মার দরপতনে ১.৩৯ পয়েন্ট, রবি ১.১৭ পয়েন্ট, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলসের ১.১৪ পয়েন্ট, লাফার্জ ১.০৪ পয়েন্ট, পাওয়ার গ্রিড ০.৯৬ পয়েন্ট, আইসিবি ০.৯ পয়েন্ট ও তিতাস গ্যাসের দর হ্রাসে সূচক পড়েছে ০.৮৮ পয়েন্ট।
অর্থাৎ এই ১০টি কোম্পানিই সূচক ফেলেছে ১৯.৬২ পয়েন্ট ।
অন্যদিকে সূচকে বেশি পয়েন্ট যোগ করেছে গ্রামীণফোন। কোম্পানিরটির ১ শতাংশ দর বেড়েছে। আর এতে সূচক বেড়েছে ৯.৬৬ পয়েন্ট।
এরপরেই সূচক বাড়িয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। কোম্পানিটি সূচক বাড়িয়েছে ২.৮ পয়েন্ট। এদিন কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ১.৯৯ শতাংশ।
বিকন ফার্মার দর ১.৭৮ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচক বেড়েছে ২.৫৮ পয়েন্ট।
এরপরেই ২.৪১ পয়েন্ট বাড়িয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো। কোম্পানিটির দর বেড়েছে শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এছাড়া জেএমআই হসপিটাল ১.৪৩ পয়েন্ট, পদ্মা অয়েল ১.১৪ পয়েন্ট, প্রাইম ব্যাংক ০.৭৬ পয়েন্ট, মেঘনা পেট্রোলিয়াম ০.৭ পয়েন্ট, সাইফ পাওয়ার ০.৫১ পয়েন্ট এবং ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স ০.৪৪ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে।
এই ১০ কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২২.৪৩ পয়েন্ট।
দর পতনের শীর্ষ ১০
শীর্ষ ১০টি কোম্পানিরই দর পতন হয়েছে দিনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ ও এর আশেপাশে। ২ শতাংশ করে দর হারিয়েছে বিডি ফাইন্যান্স, বেক্সিমকো ফার্মা, রেনউইক যগেশ্বর ও তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স।
আগের দিন ৪০ টাকা বিক্রি হওয়া বিডি ফাইন্যান্সের দাম দাঁড়িয়েছে ৩৯ টাকা ২০ পয়সা। তবে বিপুল পরিমাণ বিক্রয় আদেশ থাকলেও ক্রেতা ছিল। পতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ না হলে আরও দর কমতে পারত।
২ শতাংশ কমে বেক্সিমকো ফার্মার দাম দাঁড়িয়েছে ১৬১ টাকা ৭০ পয়সায়। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ১৬৫ টাকায়।
এরপরেই ১.৯৯ শতাংশ করে দর হারিয়েছে অ্যাপেক্স স্পিনিং, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, ডেল্টা লাইফ, মনোস্পুল, জেএমআই সিরিঞ্জ ও সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০
টানা বেড়ে চলেছে জেএমআই হসপিটালের দর। লেনদেন শুরুর পর থেকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশের মতো দর বাড়ছে কোম্পানিটির। ২০ টাকায় লেনদেন শুরু হলেও আজ ৯.৯২ শতাংশ বেড়ে শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৫৬ টাকা ৫০ পয়সায়।
এই কোম্পানিটি ছাড়া অন্য কোনোটির দর সর্বোচ্চ সীমা ১০ শতাংশ ছুঁতে পারেনি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬.১৬ শতাংশ বেড়েছে লোকসানি কোম্পানি মেঘটা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের।
তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩.২৮ শতাংশ বেড়েছে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের। আগের দিন ৩৯ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি হাতবদল হয়েছে ৪০ টাকা ৯০ পয়সায়।
দর বৃদ্ধির চতুর্থ স্থানে রয়েছে সালভো সিমেন্টের। ৩.২০ শতাংশ দর বেড়ে প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৪ টাকা ৮০ পয়সায়। আগের দিন সেটি হাতবদল হয়েছিল ৫৩ টাকা ১০ পয়সায়।
এছাড়া ভ্যানগার্ড রূপালী ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ২.৭৭ শতাংশ, ফার্মা এইডসের দর ২.৫২ শতাংশ, পদ্মা অয়েলের দর ২.৫২ শতাংশ, খান ব্রাদার্সের দর ২.৫ শতাংশ, নিটল ইন্স্যুরেন্সের দর ২.৪৮ শতাংশ, উত্তরা ফাইন্যান্সের দর ২.০৫ শতাংশ, ব্র্যাক ব্যাংকের দর ১.৯৯ শতাংশ দর বেড়েছে।